পোস্টস

চিন্তা

নারী কর্মজীবী

২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আশরাফুল ইসলাম স্বাধীন

মূল লেখক স্বাধীন

অনুবাদক স্বাধীন

আমরা কি মানুষ চিনি?
 আমরা সবাই মানুষ, সবাইকেই খেতে হয় সবাইকেই হাটতে হয় সবারই চোখ,কান,নাক আছে, তবে প্রথমে আমাদের দেখতে হবে আমরা মানুষ, দ্বিতীয়ত আমরা লিঙ্গ ভেদে বিচার করবো মানুষকে।চলুন আজকে আলোচনা করা যাক কর্মজীবী নারী নিয়ে 
 
 নারী নামটা চোখের সামনেই আসলে মনে হয় সে শুধু ঘরে বসে থাকবে, ঘরের কাজ করবে, স্বামীর সেবা করবে, বাচ্চাকাচ্চা লালন-পালন করবে।
 তবে নারীকে বাইরের কোন কাজ করতে দেওয়া যাবে না, নারীর দরকার নেই কোন শিক্ষার, দরকার নেই কোন বাইরের কাজের অভিজ্ঞতা, নারী সে শুধু ঘরের চার দেয়ালের মধ্যেই আটকা থাকবে। সে শুধুই ভালো রান্না করবে। বাচ্চাকাচ্চাদের ভালো শিক্ষা দিবে। 
 এইযে একটা কু-সংস্কার এটা মুলত বিশ্বাসের অংশ। আপনি পুরুষ হয়ে যে বিষয়টা পারেন সে বিষয়টা নারীও পারে এবং পারবে। কারন তার ও মাথা আছে তার ও জ্ঞ্যন আছে, তারও আছে নানান চিন্তা করার ক্ষমতা, তাই তো নারী জাগরনের অগ্রদুত হিসেবে চেনা হয় বেগম রোকেয়াকে।
 তিনি তার এক মহান উক্তিতে বলেন-
"আমরা সমাজের অর্ধাঙ্গ, আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কীরূপ? কোনো ব্যক্তি এক পা বাঁধিয়া রাখিলে সে খোঁড়াইয়া খোঁড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষের স্বার্থ এবং আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে। তাহাদের জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য যাহা আমাদের লক্ষ্য তাহাই। 
 অর্থাৎ নারীর মুক্তি দরকার, নইলে আমরা কখনোই মাথা তুলে দাড়াতে পারবো না। পারবো না নিজেদের কোন মুক্তি আনতে, এই জাতি সবসময় অন্যের পদতলে হয়েই থাকতে হবে। 
তাই দরকার নারীকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে, দরকার তার সুযোগ।
গত ০৯.০৯.২৩ ইং তারিখে প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে 
মার্কিন শ্রম পরিসংখ্যান দপ্তর জানায়, জুন মাসে দেশটির সবচেয়ে কর্মক্ষম নারীদের ৭৭ দশমিক ৮ শতাংশই কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
আবার বিখ্যাত নিউজ প্রতিষ্ঠান CNN জানায়, জুন মাস নিয়ে টানা ৩ মাস ২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী নারীদের কাজ করার হার রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে। মহামারির সময় নারীদের কাজ করার হার যেভাবে কমে গিয়েছিল, সেই জায়গা থেকে তাঁরা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। এখন তা প্রাক্‌-মহামারি পর্যায়ে ফেরত গেছে। 
নিয়োগবিষয়ক প্রতিষ্ঠান জিপ রিক্রুটারের প্রধান অর্থনীতিবিদ জুলিয়া পোলক সিএনএনকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে জনসংখ্যার অনুপাতে কাজে নিয়োজিত—এমন কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা রেকর্ড পর্যায়ে উঠেছে।
 ২০০১ সালের পর যা ৮০ দশমিক ৯ শতাংশে উঠেছে। নারীদের ক্ষেত্রেও তা রেকর্ড ৭৫ দশমিক ৩ শতাংশে উঠেছে।
এবার আসি দেশের ক্ষেত্রে কি ঘটেছে, 
শ্রম ও আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারী
নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে হলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশের নারীরা অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের দিক থেকে অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। নারী পুরুষের সমান এবং অনেক ক্ষেত্রে অধিক পরিশ্রম ও অবদান রাখলেও পুরুষের মতো আয়-উপার্জন করতে পারেনা। এই না পারাটা মূলত নারীর অবদানের আর্থিক স্বীকৃতি না থাকার কারণে।
 মোটা দাগে পরিসংখ্যানে দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২০ শতাংশ নারীর অবদান হিসেবে দেখানো হলেও বিভিন্ন গবেষনায় এটা দেখা গেছে যে, নারীর সামাজিক ও পারিবারিক কল্যাণমূলক কাজ, কৃষি ও অকৃষি শ্রম, গৃহস্থালী কাজ, পরিবারের সদস্যদের সেবা-পরিচর্যা, সন্তান লালন-পালন ইত্যাদির জন্য নারী বিনা পারিশ্রমিকে যে দীর্ঘ কর্মঘন্টা ব্যয় করে তার শ্রমমূল্য নির্ধারণ করলে জিডিপিতে নারীর অবদান দাঁড়াবে ৪৮ শতাংশ, যা জাতীয় উন্নয়নের প্রায় অর্ধেক।
এবার আসাযাক নারী ও শ্রম নিয়ে 
শ্রম ও আয়-
 –    বর্তমানে দেশে এক কোটি ৬২ লাখ নারী কর্মক্ষেত্রে রয়েছেন
 –    গৃহস্থালীর কাজ করে কোনো মজুরি পান না ৯১ লাখ নারী।
–    বাংলাদেশে আট লাখ ৪৯ হাজার নারী দিনমজুর রয়েছেন । নারী দিনমজুরেরা মজুরি পান গড়ে ১৭০ টাকা এবং পুরুষ দিনমজুরেরা মজুরি পান গড়ে ১৮৪ টাকা 
 তথ্যসূত্র: বিবিএস এর ২০১০ সালের শ্রমশক্তি জরিপ, ৮ মার্চ প্রথম আলো ২০১৪
–   বাংলাদেশের নারীরা সব মিলিয়ে প্রতি বছর গড়ে ৭৭ কোটি ১৬ ঘন্টা গৃহস্থলীর কাজ করেন। এই কাজের অর্থমূল্য ছয় হাজার  ৯৮ কোটি থেকে নয় হাজার ১০৩ কোটি ডলার  যা জিডিপি’র  ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশের সমান।
–  বাংলাদেশের জিডিপিতে একজন নারীর কাজের মাত্র ৪৭ শতাংশ যুক্ত হয় অথচ একজন পুরুষের কাজের ৯৮ শতাংশই জিডিপিতে যুক্ত করা হচ্ছে। তথ্যসূত্র: ‘বাংলাদেশের নারীর অনুদঘাটিত অবদান অনুসন্ধান; প্রতিবন্ধকতা, সম্পৃক্ততা ও সম্ভাব্যতা’-ফাহমিদা খাতুন-বাংলাদেশ প্রতিদিন ৮ মার্চ ২০১৪
–  ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, দেশের মোট ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ৩৫ শতাংশই নারী উদ্যোক্তা বিডি নিউজ ২৪.কম
–   বর্তমানে পোশাক শিল্পে কাজ করছেন ৪০ লাখ শ্রমিক, যার প্রায় ৮০ শতাংশই নারী  তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন 
–  বাংলাদেশে ৭০ শতাংশ নারীর কোনো সম্পত্তি নেই
 –  দিনে ১০০ টাকাও মজুরি পাননা ৩২ শতাংশ নারী
 –  মাত্র ২৬ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা ও শ্রমিক তাঁদের অর্জিত সম্পত্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে মতামত দিতে পারেন। তথ্যসূত্র: ‘নারীর জন্য অর্থনৈতিক ন্যায্যতা, ন্যায্য মজুরি, সম্পদের অধিকার এবং বাজারে প্রবেশাধিকার’ শীর্ষক গবেষণাপত্র, প্রথম আলো।
তাহলে এই যে এত বৈষম্যতা তা কেন?
 অবশ্যই তা হয়েছে নারীর কোন শিক্ষা না থাকায়, হয়েছে তার কোন বাহ্যিক শিক্ষা নেই, নেই কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। এর জন্যে প্রয়োজন আমাদের সমাজের সুদৃষ্টি, প্র‍য়োজন আমাদের সুক্ষ্ম চিন্তা, পরিষ্কার ধারনা।
এই তো সেদিন একজনের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম, তার নাম মাহমুদা আক্তার জেরিন, 
 মেয়েটির বিয়ে হয়েছে একজন ভালো সরকারি চাকরিজীবীর সাথে, মেয়েটি পড়াশুনা করতে চায়, কিন্তু পরিবার তাকে আর পড়তে দিচ্ছে না, কারন হিসেবে নারীর অত পড়াশুনার দরকার নেই, নেই কোন দক্ষতার দরকার।
 তাহলে সে যে ভালো থাকবে এটা কি করে বলবেন?
 বলার কোন বালাই নেই। 
 এমন হাজারো ঘটনা রয়েছে এই দেশের অলিতে গলিতে, শুধু মাত্র নারীরা নারীর অধিকার সম্পর্কে জানে না বলিয়া তারা পিছিয়ে, পিছিয়ে আমাদের সমাজ, দেশ।
 আমাদের দেশে দরকার উপযুক্ত কর্মজীবী নারী।তবেই না মিলবে মুক্তি জাতির, মিলবে মুক্তি নিজের, পরিবরের, মিলবে মুক্তি সংসারের।
শেষ করতে চাই একটি ছোট্ট উক্তি দিয়ে-
"বিশ্বে যা -কিছু মহান সৃষ্টি চির -কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছি নারী , অর্ধেক তার নর। বিশ্বে যা -কিছু এল পাপ -তাপ বেদনা আর অশ্রুবারি অর্ধেক তার জানিয়েছে নর ,অর্ধেক তার নারী।