পোস্টস

উপন্যাস

ক্লিপ্টোম্যানিয়াক

৪ মে ২০২৩

sultana jeni razia

মূল লেখক রাজিয়া সুলতানা জেনি

আজ ছেলেপক্ষ আমাকে দেখতে এসেছিল। ছেলেপক্ষ ঠিক না, ছেলে। একটা রেস্টুরেন্টে আয়োজন করা হয়েছিল দেখাদেখিটা। বিয়ে ঘটিত ওয়েব পোর্টাল থেকে সিলেক্ট করা ক্যান্ডিডেট। খান দশেক বায়োডাটা কালেক্ট করা হয়েছিল। সেখান থেকে দুজন অলরেডি আমাকে দেখেছে। অ্যান্ড রিজেক্টেড মি। দিস গাই ইজ দ্যা থার্ড ওয়ান। 
এমন না যে আমার মতামতের কোন দাম নেই এই ব্যাপারে। আছে। ‘না' বলার অপশান আছে, তবে বিয়ে ব্যাপারটাকে এস্কেপ করার কোন অপশান নেই। যা বলছিলাম, এই ছেলেকে তিন নম্বরে রাখার অন্য একটা কারণ আছে। ছেলে বেশ কোয়ালিফাইড। সো ‘ইয়েস' হওয়ার চান্স বেশ কম। অলমোস্ট ‘নো' ধরেই আমরা এগোচ্ছি। 
যাই হোক, ছবি আমাকে দেখানো হয়েছে। ছেলে দেখতে ভালো। স্মার্ট। অন্ততঃ ছবি দেখে তা ই মনে হয়েছে। হালকা নীল রঙের একটা কমপ্লিট পড়ে পোজ দিয়েছে ছবির। একটা মেয়ের জন্য যেমন চেহারাই এইট্টি পারসেন্ট, ছেলেদের ক্ষেত্রে তেমনটা না। সেখানে আরও অনেক কিছু যোগ হয়। ইনফ্যাক্ট ওগুলোই রিয়েল ফ্যাক্টর। বিশেষ করে 'আয় রোজগার কেমন’ ফ্যাক্টরটা। এই পাত্রটি সেদিক দিয়েও এ ওয়ান। একটা মাল্টি ন্যাশন্যাল কোম্পানিতে আছে। বেশ ভাল স্যালারি। ফ্যামিলিও ভাল। অর্থাৎ লোভনীয় পাত্র বলতে যা বোঝায়, তেমনটা। 
এসব শুনে কি মনে হচ্ছে আমি বেশ ফেলনা টাইপের পাত্রী?  উত্তর হচ্ছে ‘ইয়েস' অ্যান্ড ‘নো’। ‘নো' কারণ পাত্রীর অন্যতম প্রধান যে কোয়ালিটি, সেটা কিছুটা হলেও আমার আছে। দেখতে মোটামুটি সুন্দরী। রাস্তায় চলাচল করার সময় সব ছেলে না হলেও অনেকেই ট্যারা চোখে তাকায়। পাত্রী খোঁজার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় যেটা দেখা হয়, দ্যাট ইজ ফ্যামিলি, সেটাও খারাপ না। বয়সটা আরেকটু কম হলে ভালো হত, তবে এখনও লিমিট ক্রস করেনি। আর… আর কি লাগে? রান্না বান্না, ঘর কন্যা? ওগুলো আজকাল লাগে না। ছেলে পক্ষ জানে, এসব ব্যাপারে মেয়ে পক্ষে বেশ অনেকটাই বানিয়ে বানিয়ে বলে। তাই যা ই বলা হোক, ওরা খুব বেশি বিশ্বাস করে না। 
তো এখন প্রশ্ন হচ্ছে প্রধান এই দুটো গুণ থাকবার পরেও কেন এতদিন বিয়ে হয়নি। হেয়ার কামস দ্যা 'ইয়েস' পার্ট অফ দ্যা ‘ফেলনা' ক্রাইটেরিয়া। বা ‘ইয়েস' অংশটা কি? গুড কোয়েসচেন। প্রশ্নটার অনেস্ট উত্তর হচ্ছে, আমার একটা সমস্যা আছে, আর… সেটা নিয়ে পরে বলছি। 
লেটস কনসেন্ট্রেট অন টুডে। আর আজকের ঘটনার জিস্ট হচ্ছে, আমাদের অর্থাৎ পাত্রীপক্ষের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, এই পাত্র হাতছাড়া করা যাবে না। মা বেশ ভালোরকমের আঁট ঘাট বেঁধে নেমেছেন এবার। আমাকে গত কয়েকদিন ধরেই গ্রুমিং করছেন। কিভাবে কথা বলব, হাসলে কতোটা হাসব, তাকালে কিভাবে তাকাব— ইচ অ্যান্ড এভ্রি ডিটেইলের ওপর আমার কোচিং হয়ে গেছে। এরপরও মার ভরসা নাই। আমি আবার গুবলেট করে ফেলতে পারি। তাই সকাল থেকেই রিপিটেশান চলছে। ‘বেশি বেশি কথা বলতে যাবি না’ ‘একটু লাজুক লাজুক ভাব দেখাবি’। 
আরও কিছুক্ষণ তৈরি হওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু যখন দেখলাম মায়ের থামবার কোন লক্ষণ নেই, তখন সিদ্ধান্ত পালটালাম। চুলটা শেষবারের মত ঠিকঠাক করে দরজার দিকে এগোলাম। মায়ের ফিরিস্তি তখনও চলছে। ‘বেশি চোখে চোখে তাকাবি না’। হিলটা পায়ে চাপাতে চাপাতে শুনতে পেলাম, ‘আগে অ্যাফেয়ার ছিল কি না জিজ্ঞেস করলে বলবি, ক্যাজুয়্যাল একটা রিলেশান ছিল, তেমন সিরিয়াস কিছু না’ 
হেসে ফেললাম। এই রিহার্সাল এর আগের প্রতিটা ছেলে দেখার সময় আমার অন্ততঃ পাঁচবার করে হয়েছে। এরপরও মা নিশ্চিত হতে পারে না, আমি মঞ্চে কেমন পারফর্ম করব। মায়েরও দোষ নেই। আমার বয়স বাড়ছে। মাস্টার্স শেষ করারও দুবছর পার হয়ে গেছে। কেউ বয়স জানতে চাইলে, ‘এই তো কেবল মাস্টার্স শেষ করল’ দিয়ে সামাল দেয়ার চেষ্টা করে। আর কিন্ডার গার্ডেনে কেন পড়াই তার এক্সকিউজ হচ্ছে ‘শখের বসে মাস্টারি করে’। তবে সত্যটা হচ্ছে, রেজাল্ট এমন কিছু না। ভালো চাকরি জোটে নি। 
যাইহোক, এতো সবের পরেও গত দুটো প্রস্তাব, মেয়ে দেখা পর্বের পরে আর এগোয়নি। আর আমাকে রিজেক্ট করে কারণ…বলছি। আর একটু ভূমিকা বাকী আছে। 
সো, আজকের কাহিনীতে বরং ফিরে আসি। মায়ের দৃষ্টিতে আজকের ম্যাচ হচ্ছে ডু অর ডাই ম্যাচ। অতিসাবধানী কোচের মত সে কারণেই সকাল থেকে কোচিং ক্লাস শুরু হয়েছে। আসে সেই কোচিং এ যে আমার নাভিশ্বাস উঠে গেছে, সেটা মাকে বোঝাতে পারছি না। কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশী মায়েদের মোক্ষম অস্ত্র, সেন্টিমেন্টাল ব্ল্যাকমেইলিং। ‘উফ মা’ বলে একটা ঝামটা দিলেই মা কাঁদতে শুরু করে দেবে। তাই দাতে দাঁত চেপে সহ্য করে যাচ্ছি। আর মা ও তাঁর সারা জীবনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। 
বিভিন্ন পাত্রের মায়ের কাছ থেকে যেসব টোটকা সংগ্রহ করেছেন তার সারাংশ হচ্ছে, ছেলেরা আসলে সংসারী, লাজুক, নম্র আর ভদ্র বৌ চায়। আর আমাকে তেমনই এক মেয়ের ইপ্রেশান দিতে হবে। 
টু কাট দ্যা লঙ স্টোরি শর্ট, মায়ের ভয়ের কারণ হচ্ছে এতো করে শেখানোর পরও গত দুই পাত্রের ক্ষেত্রে এসব টোটকা কাজে দেয়নি। সমস্যাটা মা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না। আগে যে কবার আমাকে পাত্র সরাসরি দেখেছে, প্রতিবারই লাজুক মেয়ে সেজে পারফর্ম করেছি। যথা সম্ভব সুন্দর করে সেজে গিয়েছি। স্টিল… নো লাক। কারণটা মা না জানলে আমি  বোধহয় কিছুটা গেস করতে পেরেছি। সিওর না, সন্দেহ। সেই আলোচনায় আরেকটু পরেই আসছি। 
তারপরও আর দশটা বাঙ্গালী মায়ের মত, আমার মায়ের, সেই সাথে আমার চেষ্টাও থেমে নেই। আমরা এখনও আশায় আছি। একটা না একটা ভালো পাত্র জুটবেই। তবে আজকে কি হবে জানি না। 
বিরক্তি ছাড়াও, আজকে মায়ের দেয়া মিনিয়েচার ভাষণ না শোনার আরও একটা কারণ আছে। আজকে আমি বিদ্রোহী মুডে আছি। আমি আজ নিজের মত চলব। আর পাত্র পক্ষের ‘ইয়েস' হওয়াটা অনেকটাই ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছি, কপালে যা আছে তা হবেই। বের হওয়ার আগে যে শোনার অভিনয়টা করলাম, তা করেছি মায়ের মন আর গৃহ শান্তি বজায় রাখতে। 
আজও হয়তো সেটাই করতাম, কিন্তু যখন দেখলাম চর্বিত চর্বণ অত্যাচারের মত ফিল দিচ্ছে, তখন সিদ্ধান্ত নিলাম, আমার বিদ্রোহের টাইম স্টার্টস নাও। ফিক্সড করা টাইমের বেশ খানিকটা আগেই তাঁর প্রতি কথায় ঘাড় কাত করে সম্মতি জানাতে জানাতে দ্রুত বেরিয়ে গেলাম। 
এই ছেলে সম্পর্কে যতটুকু বুঝেছি, মনে হচ্ছে ইন্ডেপেন্ডেন্ট টাইপ। নিজের মতই ফাইনাল। আই মিন ছেলের মত পরিবারের মতের চেয়ে দামী। ছেলে যদি ‘হ্যাঁ' বলে তাহলে কাহিনী ফাইনাল। দিনক্ষণ দেখে এনেগেজমেন্ট হয়ে যাবে। যদি খুব ভুল না করি এধরনের ছেলেদের কাছে পাত্রীর একটা যোগ্যতাই এনাফ— অপূর্ব সুন্দরী। সেই সাথে স্মার্ট হলে ভালোই হয়। বন্ধু বান্ধবের কাছে প্রেজেন্টেবল হয়। ঠিক করেছি, সেই লাইনেই ব্যাটিং করব। সো… ফিঙ্গার ক্রসড।
রেস্টুরেন্ট একেবারে ফাঁকা। গ্রাহক বলতে মাত্র একজন। কিছুটা দূরের একটা টেবিলে একটা ছেলে বসে আছে। মনে হয় এক্সপেক্টিং সামওয়ান। আমাদের জন্য একটা টেবিল বুক করা। ওয়েব পোর্টাল থেকেই সব ব্যাবস্থা করেছে। ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে সেই টেবিলে বসলাম। পুরো কফি হাউজটায় আরেকবার নজর বোলালাম। এল শেপেড ছোট্ট মতন জায়গা। খান দশেক টেবিল। সবগুলো ফোর সিটার। যদিও এই ধরণের কফি শপগুলো চলেই ডেটিং কাপলদের জন্য, তারপরও অনেক সময় বন্ধু বান্ধব নিয়েও আসে। তখন ফোর সিটার কাজে দেয়। 
এই সময়টায় ফাঁকা থাকার আরও একটা কারণ বোধহয় কাপলরা আসে সন্ধ্যার পর পর। এখন বাজে চারটা। আমার আসোবার কথা ছ'টায়। ছ'টায় না, সাড়ে ছ’টায়। প্রথম এবং একমাত্র কারণ হচ্ছে এধরনের মিটিং এ মেয়েরা একটু দেরী করেই আসে। আর সেই ইউনিভার্সাল দেরীটা করা হয়, কারণ টাইমলি আসলে ধরে নেয়া হবে, মেয়ে পক্ষ ডেসপারেট।
কারণটা যদিও সত্যি, তারপরও, বুঝতে দেয়াটা বোকামি। এনিওয়ে, ভূমিকা আপাততঃ শেষ। শুরুতেই বলেছিলাম, বেশ কিছু গল্প পরে বলব। সেগুলো শুরু করছি। 
ওকে। তো আমাকে নিয়ে বলার মত প্রথম গল্প হচ্ছে, আই হ্যাভ অ্যা পাস্ট। ‘অ্যা' না, আসলে হবে ‘ফিউ'। সেই ‘ফিউ' এর প্রথমটা হচ্ছে… হ্যাঁ, মা বেরোবার আগে বলছিলেন না, সেটা আসলে সত্য। আমার প্রেম ছিল। ‘জাস্ট ক্যাজুয়্যাল' না, বেশ ভালো রকমের প্রেমই ছিল। যেমনটা হয়, ইউনিভার্সিটিতে ঢোকার পরে সুন্দরী মেয়েদের পেছনে ছেলেদের সিরিয়াল পড়ে, আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। জ্বি, অপূর্ব না হলেও, সুন্দরী আমাকে বলা যায়। অন্ততঃ ফার্স্ট ইয়ারে খান বিশেক প্রস্তাব পাওয়ার মত সুন্দরী ছিলাম। তো সেসব প্রস্তাব থেকে একটায় ইয়েস বলেছিলাম। 
আপাততঃ এতোটুকুই। আমার ‘এক্স'কে নিয়ে আরেকদিন বলব। এখন বরং দ্বিতীয় গল্পে যাই। তার আগে বলুন তো, এই যে আমি একজন ‘সুন্দরী’... হ্যাঁ, খুব না হলেও ছিলাম, মানে এখনো আছি, তারপরও বিয়ে হচ্ছে না কেন? এনি গেস?

— কোন অর্ডার করবেন ম্যাডাম?
ওয়েটার। উত্তরে ‘একজন আসার কথা’ বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। ফিল করলাম, ওয়েট করার জন্য দু'ঘণ্টা সময় একটু বেশি লম্বা হয়ে যায়। এই ধরণের কফি শপে ওয়েট করার ভদ্র লিমিট হচ্ছে আধা ঘণ্টা। এরপরও যদি এভাবে একা বসে থাকি, তাহলে আমার ধারণা এই ওয়েটার ব্যাটারা ভাববে, আমার প্রেমিক আসলে ব্রেকাপ করে ভেগেছে। 
নাহ খুব বেশি ভাবছি। কিছুক্ষণ রেস্ট নিই। পরে ঠিক করা যাবে সময়টা এখানে বসে কাটাবো, না থেকে কোথাও ঘুরতে যাব। আপাততঃ এক কাপ কফি অর্ডার করি। কথাটা বলতে যাব এমন সময় আসল নির্দেশনা।
— ম্যাডাম, টেবিলটা ছটা থেকে রিজার্ভড।
হাসি প্রায় এসে গিয়েছিল। কোন রকমে নিজেকে সামলে কেবল ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালাম। ওয়েটার মশাই চলে গেল। সেই চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে ছিলাম এমন সময় হঠাৎ ছেলেটার দিকে চোখ গেল। ও নো। খুব সন্তর্পনে একটা ফর্ক আর একটা নাইফ টেবিলের ওপর রাখা ওর হ্যাভারস্যাকে ঢুকিয়ে নিল। দিস গাই ইজ অ্যা ক্লিপ্টোম্যানিয়াক।
দেখে একেবারেই মনে হয় না। ভদ্র ফ্যামিলিরই তো মনে হয়। ব্ল্যাক একটা টিশার্ট পড়া। সঙ্গে জিনস। মনে হচ্ছে ব্র্যান্ডের। বয়স বড়জোর সাতাশ আটাশ হবে। হ্যাভারস্যাকটা দেখে মনে হচ্ছে ভেতরে সম্ভবতঃ ল্যাপটপ আছে। খুব তীক্ষ্ণ চোখে ওয়েটারদের লক্ষ্য করছে। ঠিক সামনেই যে আমি আছি, কিংবা আমি দেখছি, ব্যপারটা লক্ষ্য করেনি।
আমারও ইচ্ছে ছিল না ব্যাপারটা যে আমি দেখে ফেলেছি, সেটা ওকে জানতে দিই। কিন্তু হল না। চোখ সরিয়ে নেবার আগেই ছেলেটার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। 
এরপরের ঘটনাগুলো ছিল পুরোপুরি স্পন্টেনিয়াস। ভ্রু নাচিয়ে জানতে চাইলাম, ‘কি হচ্ছে?' উত্তরে ছেলেটা মিষ্টি করে একটা স্মাইল দিল শুধু। অপূর্ব এক স্মাইল। কিছুটা লজ্জা, আর কিছুটা দুষ্টুমি মেশানো। বাঁ গালে টোল পড়ে ছেলেটার। অনেক অনেক দিন আগে, এমনই এক অপূর্ব স্মাইল নিয়ে আমার জীবনে এসেছিল একজন। মন জুড়ে ছিল একসময়। খুব অল্প সময়ের জন্য নস্টালজিক হয়েই আবার প্রেজেন্ট টেন্সে ফিরে আসলাম। মাথা দুদিকে নাড়তে নাড়তে যখন চোখ সরিয়ে নিচ্ছিলাম তখন আবিষ্কার করলাম, শুধু নাইফ আর ফর্ক না, হি স্টোল মাই হার্ট টু।
দ্যা স্মাইল ডিড ইট এগেইন। দুম করে ছেলেটার প্রেমে পড়ে গেলাম।

চলবে