পোস্টস

গল্প

রিইনকার্নেশন

১৫ এপ্রিল ২০২৪

Bhuiyan Md Tanvir Rashid Tanim

মূল লেখক আমি নিজে

অনুবাদক নাই

প্রাণপণে দৌঁড়াতে থাকা লোকটা হঠাৎই মুখথুবড়ে পড়ে রাস্তার উপর।তার পেছন পেছন এগিয়ে আসা পায়ের শব্দটা গতি কমিয়ে দুলকি চালে হেঁটে আসতে থাকে তার দিকে।লোকটা তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়াতে চায়।তখনই সজোরে একটা লাথি এসে পড়ে তার পিঠ বরাবর।আবারও মুখথুবড়ে পড়ে রাস্তায়।তারপর টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে পাশের জঙ্গলটায়।শেষ চেষ্টা স্বরুপ চিৎকার করতে চায় সে।কিন্তু,পারে না।তার গলার স্বর যেন কোন এক অদৃশ্য শক্তি রোধ করে দিয়েছে…

……

অটপ্সি রিপোর্টগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তে পড়তে নোটপ্যাডে কয়েকটা লাইন টুকে নিচ্ছে রেজা আব্বাস।

" সংখ্যা ১৬ "

" বিরতি ৪ দিন "

" জঙ্গল, অলি-গলি "

" রাত ২-৩ টা "

" এক্সেসিব ব্লাড লস "

" মারধর।এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত।শুরুটা পা থেকে।তারপর উরু,তলপেট,হাত,বুকের দু'পাশ,আর সবশেষে গলার ঠিক মাঝ বরাবর বার কয়েক ছুরি চালানো হয়। "

লেখা শেষে রিভলভিং চেয়ারটাতে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করল সে।'ঠক' করে একটা শব্দ হতে চোখ খুলল।সামনে দাঁড়িয়ে তার স্ত্রী।হাতে নোটপ্যাডটা।

" সুহা… "

" শহরে কি সিরিয়াল কিলারের আবির্ভাব ঘটেছে? "

" হঠাৎ! এ প্রশ্ন কেন? "

" তোমার লেখাগুলো দেখে মনে হলো তাই। "

" এমন মনে হওয়ার কারণ? "

" এই যে পর পর খুনের ফিরিস্তি। " অটপ্সি রিপোর্টগুলো দেখিয়ে।

" শুধু কি এতটুকুই? "

" না।আরও একটা কারণ আছে। "

" কী সেটা? "

" খুন করার ধরণ।নৃশংসতা।যা একটি বিকৃত মস্তিষ্কের দ্বারাই সম্ভব।আর সিরিয়াল কিলার হওয়ার পূর্বশর্ত হলো একটি বিকৃত মস্তিষ্ক। "

" হুম,বুঝলাম।তা এতকিছু জানলে কোথা থেকে? "

" এই..খানিকটা থ্রিলার গল্প,খানিকটা মুভি,আর ওয়েব সিরিজ… "

……

রেজার টেবিল ভর্তি একগাদা পুরনো ফাইল।লক্ষ্য,একটা লিড।খানিকক্ষণের খোঁজাখুঁজিতে তা পেয়েও যায়।কিন্তু, সে গুড়ে বালি।যার সাথে মিল পেয়েছে তার মৃত্যু ঘটেছে আরও বছর তিরিশেক আগে।শেষমেশ ক্লান্ত হয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে কীভাবে বের হওয়া যায় এ জাল কেটে।

" স্যার,আসতে পারি? "

" এসো। "

" স্যার, একটা লিড পাওয়া গেছে।একটা ছেলে। "

রেজা সটান সোজা হয়ে বসে।

" কোথায় সে? "

একটু ইতস্তত করে, " বাইরে বসে আছে।দেখা করতে চায়। "

……

রেজা একদৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে ছেলেটাকে।তার চোখেমুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ।পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে রেজা শান্ত স্বরে বলল,

"বলুন।"

একনিশ্বাসে সবটুকু পানি শেষ করে ছেলেটা বলতে শুরু করে,

"পূর্ণিমার রাত।হাঁটতে হাঁটতে চলে গিয়েছিলাম জঙ্গলটায়।মনে হল কেও একজন ডাকল।মোহগ্রস্তের মত এগোতে থাকলাম।হঠাৎ-ই একটা শক্ত পাঞ্জা চেপে ধরলো আমার কাঁধ।কানের কাছে বেজে উঠল শিস।ধীরে ধীরে অবশ হতে শুরু করল আমার সকল ইন্দ্রিয়।নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করলাম শরীরের উপর।জ্ঞান হারানোর আগে কেবল একটা কথাই শুনতে পেলাম।লোকটা চিৎকার করে বলছে, "জেগে উঠব…জেগে উঠব আমি…তোর শরীরের প্রতিটা কণায় কণায় আমি জেগে উঠব"

কথাগুলো বলতে বলতে ছেলেটা তার দু'কান চেপে ধরে।চেয়ার ছেড়ে লুটিয়ে পড়ে মেঝেতে।চিৎকার করতে থাকে টর্চার সেলের কয়েদিদের মত।ঘটনার আকস্মিকতায় রেজা ঘাবড়ে যায়।চেয়ার ছেড়ে এগিয়ে যেতে চায় ছেলেটার দিকে।ঠিক তখনই সটান উঠে বসে ছেলেটা।আর উন্মাদের মত হাসতে হাসতে বলতে থাকে,

" আমি-ই তুই;তুই-ই আমি।আমি-ই সে।নাম সিকদার… "

বিদ্যুৎ স্পৃষ্টের মত স্থির হয়ে যায় রেজা।তার মাথার ভেতর ঝিলিক দিয়ে উঠে ফাইলের ভেতর লেখা নামটা।