শীতের শুরুতে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ঠিক করলাম, এবার পাহাড়ের দিকে যাত্রা করব। গন্তব্য – ভারতের সিকিম, বিশেষ করে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করা।
প্রথম দিন: শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক
ঢাকা থেকে ট্রেনে চেপে পৌঁছালাম শিলিগুড়ি। সেখান থেকে গাড়িতে গ্যাংটকের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পথের দুই পাশে ঘন সবুজ পাহাড়, মাঝে মাঝে ছোট নদী, আর পাহাড়ের গা বেয়ে ওঠা সর্পিল রাস্তা—সব মিলিয়ে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। গ্যাংটক পৌঁছানোর পর রাতে মোমো আর গরম চা খেয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিশ্রাম নিলাম।
দ্বিতীয় দিন: তসোমগো লেক ও নাথুলা পাস
পরদিন সকালে আমরা তসোমগো লেকের দিকে রওনা দিলাম। বরফে ঢাকা লেকের স্বচ্ছ জলরাশি এক অনন্য দৃশ্য সৃষ্টি করেছিল। আশেপাশের বরফ-covered পাহাড়ের প্রতিচ্ছবি দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোনো স্বপ্নরাজ্যে চলে এসেছি। এরপর গেলাম নাথুলা পাস, যা ভারত-চীন সীমান্তে অবস্থিত। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, কিন্তু তার মধ্যেও ভারতীয় সেনাদের দেশপ্রেমের গল্প শুনে মন ভরে গেল।
তৃতীয় দিন: কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা
সকালে ভোরে উঠেই আমরা গেলাম তিগার হিলে, কাঞ্চনজঙ্ঘার সূর্যোদয় দেখতে। চারপাশ তখনও অন্ধকার, কিন্তু পূর্ব দিগন্তে একটু একটু করে আলো ফুটছিল। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ পুরো আকাশে সোনালি আভা ছড়িয়ে পড়ল, আর কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায় সূর্যের প্রথম আলো পড়তেই পাহাড় যেন আগুনের মতো লাল হয়ে উঠল। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেই দৃশ্য দেখছিলাম।
শেষ দিন: ফেরার পথ
গ্যাংটক থেকে আবার শিলিগুড়ি ফিরে এলাম, তারপর ট্রেনে চেপে দেশে ফেরার জন্য প্রস্তুত হলাম। চার দিনের এই সফর আমাদের জীবনে এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকল। পাহাড়ের সৌন্দর্য, তুষারাবৃত প্রাকৃতিক দৃশ্য আর মানুষের আতিথেয়তা আমাদের মনে এক বিশেষ ছাপ রেখে গেল।
উপসংহার
এই সফর শুধু একটা ভ্রমণ ছিল না, ছিল প্রকৃতির সঙ্গে এক গভীর সংযোগের মুহূর্ত। কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য আমাদের শিখিয়েছে, প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়া মানেই নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া।