কলেজের প্রথম দিনটা ছিল অনেকটা নতুন অনুভূতির মতো। তৃষ্ণা আর আরিয়ান দুজনেই প্রথমবারের মতো একে অপরকে কলেজে দেখতে পেয়ে একটু অস্বস্তি অনুভব করেছিল। নতুন বন্ধু, নতুন পরিবেশ, এবং নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে—এটা ছিল তাদের জীবনের এক নতুন অধ্যায়।
তৃষ্ণা কলেজে পা রাখতেই তার পরিচিত সহপাঠীরা তাকে চারপাশে ঘিরে ধরেছিল। সবাই খুব খুশি ছিল যে সে এখানে এসেছে। তৃষ্ণার খুব ভালো বন্ধু, মায়া, তাকে সব জায়গায় সাহায্য করছিল। তবে এক মুহূর্তের জন্য, তৃষ্ণা আরিয়ানকে খুঁজে দেখতে ভুলে গেল। সে জানত, আরিয়ানও এখানে আছে, কিন্তু তার মতো একান্তভাবে তার দৃষ্টি কোথাও নেই।
শেষ পর্যন্ত, কনভোকেশনে যখন সবাই একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছিল, তৃষ্ণা দেখতে পেল, আরিয়ান দাঁড়িয়ে রয়েছে কয়েকজন ছেলে-মেয়ের সঙ্গে, হাসতে হাসতে কথা বলছে। কিন্তু কী জানে সে, যে চোখের দিকে তাকিয়ে সে একটু বেশি সময় ধরে দেখছিল, তা আরিয়ান ছিল।
তৃষ্ণা একটু ঝুঁকে গিয়ে বলল, "তুমি এই সবার সঙ্গে মেতে আছো, আর আমায় একা রেখে চলে গেছো?"
আরিয়ান তার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে বলল, "তৃষ্ণা, তুমি তো একাই অনেক ভালো আছো।"
তৃষ্ণা মুখে একটু হাসি ফেলে বলল, "তুমি তো জানো, তাও একটু তোমার কাছেই থাকতে চাই।"
আরিয়ান চুপ করে গম্ভীর হয়ে গেল, যেন সে তার অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করছিল।
তৃষ্ণা আর আরিয়ান কলেজে একে অপরকে আরও বেশি সময় পেতে শুরু করেছিল। তারা একে অপরের চোখে অনেক কিছু দেখত, কিন্তু কখনো কিছু বলত না। আরিয়ান তৃষ্ণার পাশে থাকলেই তার অনুভূতি একটু বেশি পুঞ্জীভূত হয়ে উঠত। তার মনে হতে থাকত, একসময় হয়তো তারা খুব বেশি কাছে চলে যাবে। কিন্তু তৃষ্ণার বুকের মধ্যে একটা ভয়ের অনুভূতি ছিল—এটা এমন এক জায়গায় পৌঁছতে পারে, যেখান থেকে ফিরে আসা আর সম্ভব হবে না।
একদিন ক্লাসের পর, তৃষ্ণা আর আরিয়ান ক্যান্টিনে বসেছিল। তারা একটু হাসছিল, তৃষ্ণা তাজা পানি খাচ্ছিল আর আরিয়ান দিকবিহীনভাবে চুলে হাত দিয়ে কিছু চিন্তা করছিল।
তৃষ্ণা হঠাৎ বলল, "আরিয়ান, আমাদের কি কখনও আলাদা জীবন হবে?"
আরিয়ান একদম নীরব হয়ে গেল। কিছুক্ষণের জন্য, তার মনটা একটা অন্য দুনিয়ায় চলে গেল। সে ধীরে ধীরে বলল, "হতে পারে। কিন্তু আমি কখনো চাইব না আমাদের আলাদা জীবন হোক।"
তৃষ্ণা একটু চুপ করে গিয়ে বলল, "কিন্তু আমরা যদি আলাদা হয়ে যাই?"
আরিয়ান তার হাত ধরে বলল, "তৃষ্ণা, কখনও বিশ্বাস করো না যে আমরা আলাদা হব। আমি থাকবো, তুমি থাকবে—এটাই আমাদের পথ।"
তৃষ্ণার চোখে কেমন একটা কষ্টের ছায়া ছিল। "তবে যদি একদিন আমাদের জীবনের পথ আলাদা হয়ে যায়?"
আরিয়ান তার হাত আরও শক্ত করে ধরল, "তুমি কখনও বুঝবে না, কিন্তু আমি যদি তোমাকে হারাই, আমার জীবন থেমে যাবে।"
তৃষ্ণার বুকটা যেন ভারী হয়ে উঠল। সে বুঝতে পারছিল, আরিয়ানও এই সম্পর্কের প্রতি কতটা সিরিয়াস।
একদিন কলেজের বড় অনুষ্ঠান ছিল। সবাই মেতে উঠেছিল, পিকনিকের দিন ছিল। তৃষ্ণা আর আরিয়ান একসাথে হাঁটছিল। তারা সারা দিন একে অপরের সঙ্গে বেশ সময় কাটাচ্ছিল, কিন্তু এক মুহূর্তে, আরিয়ান তৃষ্ণাকে কিছু বলতে চাইল।
"তৃষ্ণা, আমার জন্য তুমি শুধু একটা বন্ধুই না। তুমি আমার জীবন, আমার সবচেয়ে বড় সাহস।"
তৃষ্ণা একটু অবাক হয়ে তাকাল, "কী বলছো তুমি?"
আরিয়ান কিছু না বলে, তার হাত ধরে বলল, "তুমি যা অনুভব করো, আমি সেটা সবসময় অনুভব করি। আমি তোমাকে কখনো হারাতে চাই না।"
তৃষ্ণা চুপ করে গিয়ে বলল, "আরিয়ান, তুমি জানো, আমি জানি না আমাদের সম্পর্ক কোথায় গিয়ে থামবে, কিন্তু আমি চাই, যতটুকু সময় একসাথে থাকতে পারি, আমরা একে অপরকে হারিয়ে ফেলব না।"
আরিয়ান এবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তাকে গভীরভাবে দেখল, যেন সে সত্যিই অনুভব করতে পারছে—এই সম্পর্ক যে শুধু বন্ধুত্ব নয়, অনেক কিছু।
---
চলবে........