Posts

ফিকশন

"অন্তর্ধান" (Antardhan - The Disappearance)

March 16, 2025

Israt Jahan

Original Author Israt Jahan

Translated by Zara

84
View

প্রথম অধ্যায়: রহস্যের শুরু

সূর্য ডুবে গিয়েছে। আকাশে তখনও কিছুটা লাল আভা রয়ে গেছে। শহরের রাস্তাগুলো ফাঁকা হতে শুরু করেছে। কলকাতার এই অংশে রাত নামলে সবাই যেন নিজের বাড়িতে ফিরে যায়। কিন্তু আজ রাতটা আলাদা।

ড. অরুণাভ চক্রবর্তী তার ল্যাবরেটরিতে বসে ছিলেন। কম্পিউটারের স্ক্রিনে কিছু ডাটা এনালাইসিস করছিলেন। তার চোখে ক্লান্তি, কিন্তু মনের মধ্যে উত্তেজনা। তিনি একটি নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন, যা মানুষের চিন্তাভাবনাকে অন্য মানুষের মস্তিষ্কে স্থানান্তর করতে পারবে। এটি শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, অরুণাভের গবেষণা প্রায় সফলতার দ্বারপ্রান্তে।

হঠাৎ করে ল্যাবের লাইট নিভে গেল। অরুণাভ বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন। "আবার বিদ্যুৎ চলে গেল?" তিনি ফোনটা হাতে নিয়ে জেনারেটর চালু করার জন্য ল্যাবের বাইরে যেতে যেতেই দেখলেন, বাইরে অদ্ভুত এক আলো জ্বলছে। এটি সাধারণ আলো নয়, মনে হচ্ছিল যেন আকাশ থেকে নেমে আসা কোনও অজানা শক্তি।

অরুণাভ দরজা খুলে বাইরে এলেন। আকাশে একটি বিশালাকার ইউএফও (UFO) ভেসে ছিল। এটি দেখে তিনি হতবাক হয়ে গেলেন। তার মাথায় তখনই বিজ্ঞানের সব প্রশ্ন উঁকি দিতে শুরু করল। এই যানটি কীভাবে পৃথিবীতে এল? এর প্রযুক্তি কী? কিন্তু তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই ইউএফও থেকে একটি নীল আলোর রশ্মি বেরিয়ে তার দিকে এগিয়ে এল।

অরুণাভ কিছুই বুঝে উঠতে পারলেন না। তিনি চিৎকার করতে চাইলেন, কিন্তু গলা থেকে আওয়াজ বেরোচ্ছিল না। নীল আলো তাকে ঘিরে ফেলল এবং পর মুহূর্তেই তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন।

দ্বিতীয় অধ্যায়: অজানা জগতে

অরুণাভের চোখ খুলল। তিনি দেখলেন, তিনি একটি অদ্ভুত কক্ষে আছেন। চারপাশে ধাতব দেয়াল, যেগুলো থেকে হালকা নীল আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং দেখলেন, তার সামনে একটি বিশাল স্ক্রিন। স্ক্রিনে কিছু অজানা ভাষায় লেখা ছিল, যা তিনি বুঝতে পারছিলেন না।

হঠাৎ করে একটি কণ্ঠস্বর শোনা গেল, "ড. অরুণাভ চক্রবর্তী, আপনাকে স্বাগতম।"

অরুণাভ চমকে উঠলেন। "কে? কে কথা বলছে?"

স্ক্রিনে একটি মুখ দেখা গেল। এটি মানুষের মতো, কিন্তু সম্পূর্ণ নয়। মুখটির চোখ বড় বড়, এবং ত্বকটা একটু নীলচে। "আমি জেনক্স। আমরা আপনাকে আমাদের জাহাজে নিয়ে এসেছি।"

"কেন? তোমরা কে?" অরুণাভের কণ্ঠে ভয় এবং কৌতূহল মিশে ছিল।

"আমরা অন্য একটি গ্যালাক্সি থেকে এসেছি। আমরা আপনার গবেষণায় আগ্রহী। আপনি মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ানোর উপায় খুঁজে পেয়েছেন। এটি আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।"

অরুণাভের মাথায় তখনই সবকিছু ঘুরপাক খেতে শুরু করল। তিনি বুঝতে পারলেন, এই প্রাণীরা তার গবেষণা চুরি করতে চাইছে। কিন্তু তিনি কিছুই করতে পারবেন না, কারণ তিনি তাদের জাহাজে আটকা পড়েছেন।

তৃতীয় অধ্যায়: প্রতিরোধ

অরুণাভ বুঝলেন, তাকে এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে হবে। তিনি চারপাশে তাকালেন, কিছু একটা উপায় খুঁজতে লাগলেন। হঠাৎ তার মনে পড়ল, তার পকেটে একটি ছোট ডিভাইস আছে, যা তিনি তার গবেষণায় ব্যবহার করছেন। এটি মানুষের মস্তিষ্কের তরঙ্গকে বাড়াতে পারে। তিনি ভাবলেন, যদি তিনি এই ডিভাইসটি ব্যবহার করে জেনক্সের মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করতে পারেন, তাহলে হয়তো তিনি পালাতে পারবেন।

তিনি ডিভাইসটি বের করে চালু করলেন। জেনক্সের মুখের অভিব্যক্তি বদলে গেল। "আপনি কী করছেন?" জেনক্সের কণ্ঠে এবার ভয় শোনা গেল।

"আমি আমার গবেষণা তোমাদের হাতে তুলে দেব না," অরুণাভ দৃঢ় কণ্ঠে বললেন। তিনি ডিভাইসটির শক্তি বাড়িয়ে দিলেন। জেনক্সের স্ক্রিনটি নষ্ট হয়ে গেল, এবং পুরো কক্ষে অন্ধকার নেমে এল।

অরুণাভ দৌড়ে বেরিয়ে গেলেন। তিনি দেখলেন, জাহাজের ভিতরে আরও অনেক কক্ষ আছে। তিনি একটি কক্ষে ঢুকে দেখলেন, সেখানে আরও অনেক মানুষ আটকা পড়ে আছে। তারা সবাই অরুণাভের মতো বিজ্ঞানী। তিনি বুঝলেন, এই প্রাণীরা পৃথিবীর সেরা মস্তিষ্কগুলো সংগ্রহ করছে।

চতুর্থ অধ্যায়: মুক্তি

অরুণাভ সিদ্ধান্ত নিলেন, তাকে সবাইকে মুক্ত করতে হবে। তিনি ডিভাইসটি ব্যবহার করে জাহাজের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে বিকল করে দিলেন। জাহাজটি নড়াচড়া করা বন্ধ করে দিল। অরুণাভ এবং অন্য বিজ্ঞানীরা একসাথে মিলে জাহাজের একটি পালানোর পথ খুঁজে বের করলেন।

তারা একটি ছোট যানে চড়ে জাহাজ থেকে বেরিয়ে গেলেন। পৃথিবীর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে অরুণাভ পিছনে ফিরে তাকালেন। সেই বিশাল ইউএফওটি ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিল।

শেষ অধ্যায়: নতুন শুরু

পৃথিবীতে ফিরে অরুণাভ তার গবেষণা চালিয়ে গেলেন। কিন্তু এবার তিনি সতর্ক হয়ে গেলেন। তিনি বুঝলেন, মহাবিশ্বে আমরা একা নই। আরও অনেক উন্নত প্রাণী আছে, যারা আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। কিন্তু তাদের সাথে যোগাযোগ করা সবসময় নিরাপদ নয়।

অরুণাভের গবেষণা শেষ পর্যন্ত সফল হলো। কিন্তু তিনি তার আবিষ্কারকে সবার সাথে শেয়ার করলেন না। তিনি জানতেন, এই শক্তি যদি ভুল হাতে পড়ে, তাহলে সেটি মানবজাতির জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।

এবং সেই রাতের ঘটনা তিনি কখনও কাউকে বলেননি। শুধু রাতের আকাশের দিকে তাকালে মনে পড়ে যায়, সেই নীল আলোর কথা, এবং সেই অজানা জগতের কথা।

শেষ।

Comments

    Please login to post comment. Login