ঐশ্বর্য
পর্ব - ১৩
.
নূর -এ- কাউছার
.
শান্তি আর রেহানা হা করে তাকিয়ে ঐশ্বর্য কে দেখছে, শান্তি ঐশ্বর্যকে বলল আমার মনে হচ্ছে আমার সামনে ঊর্মি দারিয়ে আছে। ঐশ্বর্য হেসে দেয় আর বলে এগুলো বুবুর। রেহানা হা করে তাকিয়ে আছে এখনো, আর পাগলের মতো করে বলে উঠে ঐশ্বর্য তরে পুরা আসমানের পরি লাগতাছে। শান্তি বলে যাহ নজর দিস না তখনি বাড়িতে রবি আর ইউসুফ এসে হাজির। রবি কে দেখে ঐশ্বর্য মাথায় কাপড় দিয়ে সালাম করে রবি তার মেয়েকে শাড়িতে দেখে অবাক এতো ঊর্মির দ্বিতীয় রুপ। রবির চোখ টলমল করছে সে পাঞ্জাবির পকেটে হাত দিয়ে টাকা বের করে ঐশ্বর্যর মুখের সামনে ঘুরিয়ে আঞ্চলিক ভাষায় বলে নজর লাগবার আগে নজর ওয়ালার চোখ কানা হইবো তার পর রহিম কে বলে টাকা টা মসজিদের দান বাক্সে ফেলে দিয়ে আই। ঐশ্বর্য কিছুই বুঝতে পারছে না তাই দৌরে ঘরে চলে আসে বড় আইনাটার সামনে দারায়। ঐশ্বর্য নিজেকে দেখে নিজেই শরমে পরে যায়। তার পর সে বাড়ির পেছনের বারান্দায় গিয়ে দারায় আজ ঐশ্বর্যকে অনেক সুন্দর লাগছে আকাশি রং যেনো ওর জন্যই বিশেষ করে বানানো হয়েছে শাড়িটা তাকে খুব মানিয়েছে। নদীর কাছ দিয়ে মসজিদ থেকে মানুষ ঈদের নামাজ পরে হেটে বাড়িতে ফিরছে। অন্ধকার বাদল কাটিয়ে সূর্য বের হচ্ছে। ঐশ্বর্য খেয়াল করলো আজকেও তার মনে হচ্ছে কেও তাকে সুপারি বাগান থেকে দেখেছে। কিন্তু কে সে তাকে দেখা যায় না কেনো! শান্তি ঐশ্বর্য কে ডাক দিলো, ঐশ্বর্য উত্তর দিলো জি আম্মা আমি এইখানে বারান্দায় শান্তি এসে ঐশ্বর্য কে বলে এখানে কেনো দারিয়ে আছিস। ঐশ্বর্য বলল বুবু খুব সুন্দরী আর ভালো ছিলো তাই না? শান্তির হাসিটা মলিন হয়ে গেলো আর বলল জানিস আমি তোর বাবাকে বিয়ে করেছিলাম ওই ছোট্ট ঊর্মিটাকে দেখে কি মায়াবি তার চেহারা যেদিন তোর বাবা আমাকে দেখতে যায় সেদিন আমি প্রথমে বিয়ের জন্য রাজি হইনি বাড়িতে সবাই বলে ছেলে ভালো ছেলের বংশের সবাই ভালো ছেলে বাংলাদেশেরর মুক্তি বাহিনীর ছেলে। এইসবে আমার মন গলেনি কোন মেয়ে চাইবে পরা লেখা করে শিক্ষিত হয়ে একজন বিবাহিত ছেলের সাথে বিয়ে করতে সবাই বলতো আমি দেখতেও খুব সুন্দর তোদের বাবাও সুন্দর ছিলো আমি আজ পর্যন্ত তোদের বাবার মতো উদার মনের মানুষ দেখিনি। আমি কারোর কথাতেই রাজি হইনি কিন্তু ওই দিন সেই ছোট্ট মেয়েটি আমাকে এসে বলে আপনি আমার বাবাকে বিয়ে করবেন? আমি মেয়েটার মুখে এমন কথা শুনে হেসে দেই আর বলি কে তুমার বাবা? মেয়েটি আঙুল দিয়ে তোর বাবাকে দেখিয়ে দেয় সে আমার ঘরের সামনেই দারিয়ে ছিলো। আমি বলি জি আপনি আমার বাবার সাথে কথা বলেন আমি যা বলার বাবাকে বলে দিয়েছি। সে আমাকে বলে আপনার সাথে কিছু কথা বলার ছিলো আপনার বাবার সাথে কথা হয়েছে। তার পর তাকে নিয়ে আমাদের বাড়ির বাগানে গিয়ে বসি। সে ছোট্ট মেয়েটিকে দেখিয়ে বলতে শুরু করলো ঊর্মি জন্মের পরই মাকে হারিয়েছে আমি স্ত্রী হারানোর ব্যথা আর দেশের এই পরিস্থিতির মধ্যে নিজেকে এতটাই ব্যস্ততার মধ্যে রেখেছি মেয়েটাকে কোনো দিন সময়ই দিতে পারিনি জন্মের সময় মা মারা গিয়েছে বলে গ্রামের মানুষ এই ছোট্ট মেয়েটাকেও ছার দেয় নি রাক্ষস বলে আক্ষাহিত করেছে, এখন কাকে কি বলবো আমার বাবাই এখনো মেয়েটাকে দেখতে পারে না। এই আট, নয় বছর মেয়েটা তার মায়ের বাড়িতে ছিলো কিন্তু সেখানেও শান্তি কই মেয়েটাকে রোজ তার মামিরা খোটা দিতো মাকে খাইছে এখন আমাদের খাইতে আইছে আমার কানে এই সব আসতেই আমি দৌড়ে এসেছি এখন আমার হাতে এতো সময়ও নেই আবার ফিরতে হবে যোদি যুদ্ধে শহিদ হয়ে যাই কোনো দিন না ফেরা হয় আমার মেয়েটা সমাজের খোটার শিকার হবে। শান্তি ঐশ্বর্যর হাত ধরে বলল, তোর বাবা ওই দিন আমার সামনে হাত জোর করে বলে আমি যেনো তার মেয়ের দায়িত্ব নেই। কেনো জানি না মেয়েটাকে দেখে আমার মায়া শুধু বৃদ্ধি হচ্ছিলো তাই আর না ভেবে ঊর্মির মুখের দিকে তাকিয়ে আমি হে বলে দেই। তার পর কেটে গেলো এক টা বছর দেশ স্বাধীন হলো তুই আমাদের মাঝে আসলি। তোর বাবা দেশের কাজে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেনি। আমি অসুস্থ থাকলে ওই দশ বছর বয়সের মেয়েটা রান্না বাদে সংসারের সকল কাজ করে দিতো আমার খারাপ সময়ের এক মাত্র খুটি ছিলো ঊর্মি অথচো আজ আমাদের খুশির সমঅয়ে সাথে নেই। ঐশ্বর্য সব শুনে তার মাকে জরিয়ে ধরে বলল আচ্ছা বুবুকে রফিক ভাইয়ের সাথে বিয়েটা করাইয়া দিতা তাহলেই তো সে আজ আমাদের মাঝ খানে থাকতো তার পর ঐশ্বর্য চিঠির কথা গুলো বলল। শান্তি বলল ঊর্মি আমাকে কোনো দিন রফিকের কথা বলেইনি আমি সেদিনি জানতে পারি যেদিন ওরা পালিয়ে গেলো। ওরা জাওয়ার পর তোর বাবা পুরো দোষ আমার উপর চাপিয়ে দেয় আর আমি তখন সন্তান সম্ভবা তাই কিছু বলতাম না কিন্তু সেদিন রাতে আমাকে খুব মার ধোর করে। তোর বাবা ওই ঘটনার পর আমি জেল থেকে আসার পর থেকেই আমার উপর প্রতিদিন হাত তুলত আর শারিরীক চাহিদা মেটাতো। আর আমি সেদিনি রাতেই ভেবে নিয়েছিলাম তোর বাবার সাথে আমি মরে গেলেও কথা বলবো না। সে দিন আমাকে গলায় চেপে ধরে মেরেই ফেলতো মধ্য রাতে কেউ নেই ফেরানোর মতো। তখনি রহমত ভাই আমাকে বাচায় সেদিন ওই লোকটা না থাকলে আজ হয়তো..! আল্লাহ ফেরেস্তা বানিয়ে পাঠিয়েছে তাকে। সে তোর বাবাকে শান্ত করে আর বলে কি করতাছিলি এইসব তোর মাইয়া এতদিন প্রেম করছে তোর বউ ছিলো জেলখানাই তুই তোর মাইয়ারে দেইক্ষা রাখতে পারছ নাই তোর দোষ তুই এই নিরিহ মানুষটার উপর চাপাইয়া দিতাছস। তোর বাবা আরো ভরকে যায় আর বলে হরমত ভাই তুমি এইসবের মধ্যে আইও না, তোর বাবা রেগে গেলে কিনবা তোর দাদুর সাথে একান্ত ভাবে কথা বললে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেন। তার পর তোর বাবা আরো বলল নিরিহ এই মহিলা নিরিহ! কেমনে অয় নিরিহ! যে এত নিকৃষ্ট ভাবে একটা মানুষরে মারতে পারে অর কারনে আমার মাইয়াডা বাড়ি ছাইরা গেছে এই খাচ্চর মহিলা একটা অপায়া। আমি সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছি যার হাত ধরার জন্য নিজের মা বাবা কে ছেরেছি সে আজ আমাকে অপায়া বলল। রহমত ভাই বলে তুই কিছু জানস ওই দিন তর শহরের ভাই কি করছে? তোর বউ না থাকলে আইজ তোর আদরের মাইয়া সমাজে ধর্সিতা বইলা পরিছয় পাইতো। তোর বাবার রাগ আরো বেরে যায় সে রহমত ভাইয়ের ফতুয়ার কর্লার চেপে ধরে। রহমত ভাই হেসে বলে আমার মুখে হুইনা তর এত রাগ উঠলো যহন মানুষ কইতো তহন কেমন লাগতো। আর শুন আমি ওইদিন তর ছোডো মাইয়ারে রহিমের সাথে তোর শশুর বাড়ি পাডায়া দিছিলাম আর তোর বউ একলা মারে নাই মুরাদরে আমিও মারছি। আসলে সেদিন রহমত ভাইকে আমি মানা করেছিলাম সে যেনো পুলিশের সামনে না আসে রহমত ভাই তাই করলো সে ঊর্মিকে নিয়ে তোর নানুর বাসায় রেখে আসে। কিন্তু সেদিন রাতে সে তোর বাবাকে নিজের কথা না ভেবে ওইদিন বলে দিলো সব। আমি ভেবেছিলাম রহমত ভাইকেও ছার দিবেন না উনি। তোর বাবা সব শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে সে ওই অবস্থাতেই বেরিয়ে পরে ঊর্মির দেওয়া ঠিকানা খুজতে। আর আমাকে বলে যায় যেদিন ঊর্মি বাড়িতে ফিরে আসবে সেদিন আমি আমার সকল পাপের সকল অত্যচারের ক্ষমা চাইবো তুমার কাছে। তার পর বেরিয়ে যায় আর বাড়িতে ফেরেনি। এত বছর পর তোর এই অবস্থা শুনে আবার ফিরে এসেছে কিন্তু আমার সামনে এসে কথা বলার সাহস এখনো হয়নি উনার। ঐশ্বর্যর চখে পানি ভাবতে থাকে, এই জন্যই বাবা কে এতো বছর বাড়িতে ফিরতে দেখিনি আমার বাবাকে দেখতে মন চাইলে বাবা লোক পাঠিয়ে দিতো আমাকে নিয়ে জাওয়ার জন্য নইলে দাদুকে নিয়ে শহরে যেতে হতো। ঐশ্বর্য জিজ্ঞেস করলো আচ্ছা আম্মা দাদুতো আমাকে খুব আদর করতেন তুমি তো বললে সে আমাকে পছন্দ করতো না। শান্তি বলল তোর এই সব মনে থাকবে কি করে ইউসুফ হওয়ার পর তোর দাদু সব রাগ ঝেরে ফেলে দেয় আর তার ভাইয়ের ছেলের সত্যটা জানতে পেরে আমার উপরও আর রাগ করে থাকেন না, আচ্ছা অনেক কথা হয়ছে ভিতরে এসে খেয়ে নে তোর দাদুর করব জেয়ারতে যেতে হবে। ঐশ্বর্য বলল আচ্ছা আম্মা তুমি কিন্তু ঐদিন রাতের ঘটনা এখনো বললেনা। শান্তি বলল তুই এখনো ওই রাত নিয়ে পরে আছিস। ঐশ্বর্য বলল এমন ভয়ানক রাত কে ভুলতে পারে। শান্তি বলল আচ্ছা খেতে আই বের হতে হবে জেয়ারত করে জেলেও তো যেতে হবে। ঐশ্বর্য বলল হে নওয়াজ ছেলেটা খুব ভালো। শান্তি বলল হে ঠিক বলেছিস এমন ছেলে খুব বিরল তোর কান্না দেখে সে নিজে এতো বড় সাস্থি মাথায় নিলো। ঐশ্বর্য বলল আম্মা তুমি কথা ঘুরাচ্ছো আমার ওইদিন রাতের ঘটনা জানতেই হবে। শান্তি কঠোর কন্ঠে বলল এখন যেটা বলছি সেটা কর। ঐশ্বর্য আর কিছু বলার সাহস পেলো না, ঘরে এসে ভাবতে থাকে কি এমন ঘটেছে যে আমাকে বলা যাবে ঐশ্বর্যর মনে পরে রহিমও ওইদিন ঘাটেই ছিলো তাই সে দৌরে রহিমের কাছে চলে যায় রহিমকে জিজ্ঞেস করতে।
.
.
ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
পর্ব ১৪ জলদি আসবে পাশে থাকবেন ধন্যবাদ।
105
View