এই প্রশ্নের উত্তর পাবেন ১৯৪৭ পরবর্তী পূর্ব বাংলার ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে। ১৯৪৯ সালে মুসলিম লীগ ভেঙে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার অনেক ডাকসাইটে নেতা মিলে এই দল গঠন করেন। যদিও শহীদ সাহেব দলের কোন পদ নেননি। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী দলটার সভাপতির দায়িত্ব নেন।
ভাসানী ছিলেন পুরোদস্তুর একজন কম্যুনিস্ট, চীনপন্থী। নতুন দলটাকে অসাম্প্রদায়িক রুপ দিতে তিনি দলের নাম থেকে "মুসলিম" শব্দটি বাদ দিয়ে করেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। শেখ মুজিবুর রহমান তখনও লাইম লাইটে নেই, তরুণ নেতা। নতুন এই দল গঠনের পর থেকেই দেশের মানুষ রাজনৈতিকভাবে দুই ভাগ হয়ে যায়। আওয়ামী এবং আওয়ামী বিরোধী। কারণ মুসলিম লীগ তখনও নিখিল পাকিস্তানের এলিট শ্রেণীর কাছে জনপ্রিয় দল। পরে অবশ্য ভাসানী সাহেব আওয়ামী লীগে থাকেননি। তিনি নতুন বামপন্থী দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (NAP) গঠন করেন, "ধানের শীষ" ছিলো যার দলীয় প্রতীক।
যাইহোক, ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন, ৭০ এর নির্বাচন, মুক্তিযুদ্ধ প্রেক্ষাপটগুলো সময়ের প্রয়োজনে আওয়ামী লীগকে সামনে নিয়ে আসে। কিন্তু সেই এন্টি-আওয়ামী সেন্টিমেন্ট কিন্তু থেকে যায়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অত্যাচারের কারণে আওয়ামী বিরোধী মানুষও কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপক হারে অংশ নেয়।
বাংলাদেশ স্বাধীন হলে পূর্ব বাংলা থেকে মুসলিম লীগ চিরতরে হারিয়ে যায়। কিন্তু তাদের সমর্থকরাতো আর হারিয়ে যায়নি। এই এন্টি-আওয়ামী সেন্টিমেন্ট তখন ভাসানীর পার্টির দিকে ঝোকে। জাসদ গঠিত হলে কিছু সমর্থক সেখানে যায়। ৭৫ এর পর থেকে জাসদের রাজনীতিও হারিয়ে যেতে থাকে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার নের্তৃত্বে ১৯৭৯ সালে গঠিত হয় জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল বা জাগো দল। তখন মশিউর রহমান যাদু মিয়ার উদ্যোগে ভাসানীর ন্যাপ থেকে প্রায় শতভাগ নেতা প্রেসিডেন্ট জিয়ার নতুন এই দলে যোগ দেন। এই জাগো দলের নতুন নাম হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল বা বিএনপি।
তখন থেকেই এন্টি-আওয়ামী সেন্টিমেন্টের প্রায় শতভাগ বিএনপিতে কেন্দ্রীভূত হয়। অর্থাৎ স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় ১০ বছর বিক্ষিপ্ত থাকা এন্টি-আওয়ামী ভোটগুলো বিএনপির বাক্সে ঠিকানা খুজে পায়। সে কারণেই এরশাদ প্রায় ১০ বছর শাসন করলেও তার দল জাতীয় পার্টি বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগের বিকল্প হতে পারেনি।
অর্থাৎ আওয়ামী লীগের ভোট ছাড়া বাকি সব ভোট মূলত এন্টি-আওয়ামী ভোট। আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করেই অন্য দলগুলো রাজনীতির মাঠে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। অবধারিতভাবে এদের নেতা-কর্মীরাও ঐতিহাসিকভাবে এন্টি-আওয়ামী ঘরানার। সেকারণেই নির্বাচনের সময় বিএনপির সাথে জোট বাধা ছাড়া সংসদে যাওয়া এদের জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। এই হল বাংলাদেশে বাইনারি ভোট ব্যাবস্থার হিসাব।