Posts

চিন্তা

প্রতিবাদ লিপি! গাজায় জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে!

March 19, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

223
View

নোবেলজয়ী কিংবদন্তি মার্কিন শিল্পী বব ডিলান তাঁর কালজয়ী গান Blowin’ in the Wind-এ সেই ১৯৬২ সালেই গেয়েছিলেন—
"আর, কতবার একজন মানুষকে তাকাতে হবে
আকাশটাকে দেখতে পাওয়ার আগে?
আর, তার কানে কত আর্তনাদ পৌঁছতে হবে
অন্যদের কান্না শুনতে পাওয়ার আগে?
আর, কত মৃত্যু ঘটবে এই পৃথিবীতে
যতক্ষণ না সে বোঝে, অনেক বেশি মানুষই মারা গেছে?
উত্তর, বন্ধু আমার, বাতাসে ভাসে,
উত্তরটি বাতাসে ভাসে।"

উত্তর তখনও বাতাসে ভাসছিল। আজও ভাসছে। তবে গাজার বিধ্বস্ত আকাশের নিচে কোনো উত্তর নেই, আছে শুধু ধ্বংসস্তূপ, রক্তমাখা শিশুদের লাশ আর এক নিশ্চিহ্নপ্রায় জাতির করুন আর্তনাদ।

জামাইকার বিপ্লবী শিল্পী বব মার্লে তাঁর War গানে বলেছিলেন—
"যতক্ষণ না সেই দর্শন সম্পূর্ণরূপে অবমানিত ও পরিত্যক্ত হয়,
যা এক জাতিকে শ্রেষ্ঠ এবং অন্য জাতিকে নিম্ন মনে করে—
ততক্ষণ সর্বত্র যুদ্ধ চলবে।"

গাজায় আজ সেই যুদ্ধ চলছে—শুধু যুদ্ধ নয়, পরিকল্পিত গণহত্যা। ইসরায়েলি আগ্রাসন এখন আর কেবল দখলদারিত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; এটি এক জাতিকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করার সুপরিকল্পিত নীলনকশা।

মানবতার এমন করুণ পরাজয়ে, নীরব কেন বিশ্ব বিবেক? গাজা আজ এক বিশাল গণকবর। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে একেকটি স্বপ্ন, একেকটি পরিবার, একটি জাতির ভবিষ্যৎ। জাতিসংঘের চার্টার, জেনেভা কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক আইনের সকল বিধান পদদলিত করে দখলদার ইসরায়েল একের পর এক গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ—কেউ রেহাই পাচ্ছে না। হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির—সবই তাদের বোমাবর্ষণের লক্ষ্যবস্তু।

বিশ্ব মোড়লরাও জানে এটি কোনো দ্বিপাক্ষিক যুদ্ধ নয়, বরং একপাক্ষিক নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ। কারণ তারা নিজেরাই এই হত্যাযজ্ঞের পৃষ্ঠপোষক। অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে তারা ইসরায়েলকে গণহত্যার লাইসেন্স দিয়েছে। গণতন্ত্রের ধ্বজাধারীরা আজ নীরব কেন? ন্যায়বিচার কি কেবল শাসকদের দাসত্ব করবে?

আমাদের অবস্থান বরাবরই ফিলিস্তিনের পাশে, বিপন্ন মানবতার পক্ষে। মজলুমের আর্তনাদ আমাদের সমন্বিত ক্রন্দন। আমরা এই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে সোচ্চার। দখলদার ইসরায়েলের গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা তাদের পৃষ্ঠপোষকদেরও চিহ্নিত করি এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাই।

ফিলিস্তিনের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আমাদের দৃঢ় সমর্থন রয়েছে। আমরা দাবি জানাই—
• ইসরায়েলি আগ্রাসন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
• গাজার অবরোধ প্রত্যাহার করতে হবে।
• ফিলিস্তিনি জনগণকে নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্ণ অধিকার দিতে হবে।
• যুদ্ধবাজদের হাতে অস্ত্র নয়, মানবতার পক্ষেই বিশ্বকে দাঁড়াতে হবে।

আমরা বিশ্বাস করি, আজ যারা নীরব, ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না। আজ যারা গাজার গণহত্যা নিয়ে চোখ বুঁজে আছে, কাল তাদেরকেও বিবেকের আদালতে জবাবদিহি করতেই হবে।

দ্য বিটলসের বিখ্যাত শিল্পী জন লেনন তাঁর Imagine শীর্ষক গানে বলেন...
"Imagine there's no countries, it isn't hard to do
Nothing to kill or die for, and no religion too
Imagine all the people living life in peace.You may say I'm a dreamer, but I'm not the only one. I hope someday you'll join us, and the world will be as one."(কল্পনা করো, দেশ বলে কিছু নেই, খুব কঠিন নয় তা ভাবতে, নেই কিছু মারার বা মরার জন্য, নেই কোনো ধর্মের বাধ্যবাধকতা,
কল্পনা করো, সব মানুষ শান্তিতে জীবন কাটাচ্ছে। তুমি হয়তো বলবে আমি একজন স্বপ্নদর্শী, কিন্তু আমি একা নই। আমি আশা করি একদিন তুমি আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে, এবং পৃথিবী এক হয়ে যাবে।)

আমরাও সমস্বরে চিৎকার করে বলি। আমরা একা নই। শুভবোধের পথে হাঁটতে আমাদের সাথে তোমাকেও যোগ দিতে হবে বন্ধু‌। বিভাজন ও ভেদাভেদ ছাড়া এক পৃথিবীর মানুষ হয়ে একসাথে বাঁচতে চাই আমরা সবাই।

লেখক: সাংবাদিক 
১৯ মার্চ ২০২৫

Comments

    Please login to post comment. Login