Posts

চিন্তা

বিজ্ঞান চেনায় বিশ্বব্রহ্মাণ্ড!

March 19, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

125
View

মানুষের জ্ঞানের পরিধি যতই বাড়ছে, ততই প্রসারিত হচ্ছে মহাকাশ অভিযানের দিগন্ত। আমাদের কাছে অ্যাস্ট্রোনটরা শুধু বৈজ্ঞানিক অভিযাত্রী নন, বরং তাঁরা মানবজাতির দূরদর্শিতা, অধ্যবসায় ও সীমাহীন জ্ঞানের প্রতীক। নাসার অ্যাস্ট্রোনট কোরের সদস্য হওয়া নিঃসন্দেহে সর্বোচ্চ যোগ্যতার স্বীকৃতি। মহাকাশ থেকে পৃথিবী দেখার সৌভাগ্য সবার হয় না; এর জন্য প্রয়োজন প্রগাঢ় সাধনা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য এবং অসীম ত্যাগের মানসিকতা।

আজ ভোরে, দীর্ঘ ২৮৬ দিন ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরেছেন অ্যাস্ট্রোনট সুনীতা উইলিয়ামস (Sunita Williams), ব্যারি বুচ উইলমোর (Barry Wilmore) ও তাঁদের দুই সারথি। ভারতীয় সময় বুধবার ভোর ৩ টা ২৭ মিনিটে স্পেসএক্স-এর মহাকাশযান তাঁদের নিয়ে ফ্লোরিডার সমুদ্রে সফলভাবে অবতরণ করে। এরপর হাসিমুখে ক্যাপসুল থেকে বেরিয়ে আসেন তাঁরা, যা বিশ্বজুড়ে মানুষকে উচ্ছ্বসিত করেছে।

ভোররাতে নাসা এই অ্যাস্ট্রোনটদের ফিরে আসার গোটা পর্বের লাইভ টেলিকাস্ট করেছে, হাঁ করে দেখেছে বিশ্ববাসী। কেউ হেসেছে আনন্দে, কেউ কেঁদেছে আবেগে।

দ্য ওয়াল জানাচ্ছে, এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ২৩ বছর আগের এক করুণ অধ্যায়। ২০০৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, নাসার কলম্বিয়া মহাকাশযান দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে সাতজন অভিজ্ঞ মহাকাশচারী প্রাণ হারান, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নভোচারী কল্পনা চাওলা। ১৯৬১ সালে ভারতের হরিয়ানায় জন্ম নেওয়া কল্পনার জন্য মহাকাশযাত্রা ছিল এক অকল্পনীয় স্বপ্ন। নারীবিদ্বেষী সমাজব্যবস্থাকে অতিক্রম করে তিনি নাসার প্রথম ভারতীয় নারী অ্যাস্ট্রোনট হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর অবদান মহাকাশবিজ্ঞান ও নারীর অগ্রগতির অনন্য অনুপ্রেরণা হয়ে রয়েছে।

কলম্বিয়া ট্র্যাজেডির পর মহাকাশ অভিযানের নিরাপত্তা আরও কঠোর হয়। কিন্তু তবুও ঝুঁকি থেকেই যায়।

২০০৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে কলম্বিয়ার দুর্ঘটনা বড় বিষাদ জাগানিয়া। সেদিন ব্যর্থ হয়েছিল প্রযুক্তি, সাড়া দেয়নি যন্ত্র। থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে গোটা কন্ট্রোল রুম দেখেছিল সাত সাতজন অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত মহাকাশচারী কীভাবে মহাকাশের বুকেই অনন্ত সমাধি নিলেন। এই দুর্ঘটনার পর টানা দু’বছর সব রকমের মহাকাশ অভিযান বন্ধ রেখেছিল নাসা।

এমন বাস্তবতা ও উৎকণ্ঠা মাথায় নিয়ে ২৮৬ দিন মহাকাশে কাটানোর পর স্পেসএক্সের মহাকাশাযানে পৃথিবীতে ফিরলেন সুনীতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরসহ চার অ্যাস্ট্রোনট। সুনীতারা এখন নিজেদের বাড়িতে বা পরিবারের কাছে ফিরতে পারবেন না। তাদের ক্রু কোয়ার্টারে থাকতে হবে। কয়েক সপ্তাহ ধরে তাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা হবে। তারপর তারা ফিরতে পারবেন নিজেদের পরিবারের কাছে। গতবছর জুন মাসে সুনীতা উইলিয়ামসরা আট দিনের জন্য মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন। কিন্তু বোয়িং স্টারলাইনারের মহাকাশযানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। তাদের ফিরে আসার সময় পিছিয়ে যায়।

সুনীতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর যে ২৮৬ দিন মহাশূন্যে কাটিয়েছেন, তা এক অনিশ্চিত, চরম শারীরিক ও মানসিক চাপের জীবন।

আচ্ছা এই নয় মাসের অনিশ্চিত জীবনযাপনের আর্থিক মৃল্যমান কেমন? নয় মাসের জন্য সুনীতা ও বুচ ৯৩ হাজার ৮৫০ থেকে এক লক্ষ ২২ হাজার চার ডলার পাবেন। এছাড়া এক হাজার ১৪৮ ডলার ইনসিডেন্টাল পে পাবেন।

দেখুন বাংলাদেশে যেভাবে টাকা উড়ে এদেশ থেকে ওদেশে চলে যায় তার তুল্যমূল্যে এই অর্থ একটা পান খাওয়ার মূল্যের সমানও না। অথচ সুনীতারা মহাশূন্যে থেকে কতশত জাদুকরী গবেষণাই না করেন। যার বিনিময়ে আমরা পাই পৃথিবীর আনন্দকর ও সাবলীল জীবন যাপনের নিশ্চয়তা। তাঁদের গবেষণা ও সংগ্রামের সুফলেই পৃথিবীর মানুষ ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করে।

সুনীতা উইলিয়ামসদের মতো নারী মহাকাশচারীরা আমাদের চোখে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন জাগান। তাঁরা প্রমাণ করেছেন, নারীদের জন্য অন্তরাল নয়, আকাশের বিশালতাই প্রকৃত জীবন। বাংলাদেশের নারীদেরও সুনীতা ও কল্পনার জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত—সীমাবদ্ধতা নয়, মহাবিশ্বের অবারিত সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাওয়াই নারীর প্রকৃত পরিচয়।

সুনীতা উইলিয়ামসদের এই ত্যাগ তিতিক্ষা কোনো মূল্যেই বিচার্য নয়। তাঁরা সশরীরে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন, স্বজনদের সান্নিধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারবেন, নতুন অ্যাস্ট্রোনটদেরকে স্পেস সায়েন্স শেখাবেন -এইটুকুই তাদের পরম পাওয়া।

আমাদের নারীদের বলব সুনীতা ও কল্পনা চাওলাদেরকে প্রেরণায় রাখুন। অন্তরাল কোনো জীবন নয়, জীবন হলো আকাশের মতো উদার।

লেখক: সাংবাদিক
১৮ মার্চ ২০২৫

Comments

    Please login to post comment. Login