তৃষ্ণা আর আরিয়ান তাদের সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করলেও, তাদের ভালোবাসার পথে নানা বাধা এসে দাঁড়িয়েছিল। একদিকে ছিল তাদের পারিবারিক সমস্যাগুলি, যা যেন তাদেরকে একে অপরের থেকে দূরে ঠেলে দিতে চাইছিল।
তৃষ্ণার পরিবারে এক অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তার বাবা-মা সব সময় তার জীবন এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত থাকতেন, বিশেষ করে তার সম্পর্কের বিষয়ে। তারা কখনোই আরিয়ানকে মেনে নিতে পারছিল না, কারণ তার সামাজিক অবস্থান এবং পরিবারের মধ্যে বিশাল একটি ফারাক ছিল। তৃষ্ণার মা, যিনি বরাবরই তার প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল ছিলেন, বলেছিলেন, "তৃষ্ণা, তুমি যদি এই ছেলের সঙ্গে থাকো, তাহলে আমাদের সামাজিক অবস্থান নষ্ট হয়ে যাবে। তুমি জানো না, সমাজ কীভাবে আমাদের তাকাবে। তুমি এভাবে নিজের জীবন নষ্ট করো না।"
তৃষ্ণা একেবারে চুপ হয়ে গেল। তার মায়ের কথা, তার চিন্তা, সবকিছুই তার মনকে ভারী করে দিয়েছিল। সে জানত, তার পরিবার তার কাছে কিছু প্রত্যাশা রেখেছে, কিন্তু আরিয়ানকে ছেড়ে দেয়া তার জন্য অসম্ভব ছিল। তার ভালোবাসা এত গভীর ছিল যে, কোনো কিছু তাকে তা থেকে সরিয়ে নিতে পারছিল না।
অন্যদিকে, আরিয়ানও একই পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিল। তার পরিবারও তার সম্পর্কের বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করছিল। তার মা, যিনি একসময় তার জীবনের সবচেয়ে বড় সমর্থক ছিলেন, এখন তাকে বলছিল, "আরিয়ান, তুমি জানো, তৃষ্ণা একটা ভালো মেয়ে। কিন্তু তুমি কি জানো তার পরিবার কোথায় দাঁড়িয়ে? তুমি জানো না, তারা তোমার মতো একটি সাধারণ ছেলের সাথে সম্পর্ক রাখতে পারবে কি না।"
আরিয়ান স্তম্ভিত হয়ে গেল। সে কখনো ভাবেনি যে তার পরিবার এমন কিছু বলবে। কিন্তু তার ভেতরে গভীর বিশ্বাস ছিল—এটা শুধু ভালোবাসা নয়, এটা তাদের জীবন। কিন্তু তার পরিবারের চাপ তাকে নাজুক অবস্থায় ফেলেছিল।
একদিন, তৃষ্ণা আর আরিয়ান তাদের সম্পর্ক নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করছিল। তারা জানতো, তাদের ভালোবাসার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা তাদের পরিবার এবং সমাজের মধ্যে আসবে।
"আরিয়ান, তুমি জানো, আমাদের সম্পর্কের জন্য আমাদের পরিবার কি ভাববে?" তৃষ্ণা নিরবে বলল, তার চোখে আকাশের মতো বিষণ্ণতা ছিল।
আরিয়ান তৃষ্ণার হাতটি শক্ত করে ধরল এবং বলল, "তৃষ্ণা, আমি জানি, আমাদের ভালোবাসা সহজ হবে না। কিন্তু আমি কখনও তোমাকে হারাতে চাই না। আমরা যদি একে অপরকে বিশ্বাস করি, আমাদের ভালোবাসা এই সব বাধা পার করতে পারবে।"
তৃষ্ণা একটু থেমে থেকে বলল, "কিন্তু আমাদের পরিবার... তারা আমাদের অনুমতি দেবে না। তারা আমাদের সম্পর্কের বিরুদ্ধে যাবে। তুমি কী করবে?"
আরিয়ান কিছু সময় চুপ থেকে তারপর বলল, "তৃষ্ণা, আমি জানি আমাদের সম্পর্কের জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করতে হবে। কিন্তু আমি প্রতিজ্ঞা করছি, আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাব না। আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি শুধুমাত্র ভালোবাসা নয়, বিশ্বাসও। যদি আমাদের পরিবার আমাদের সম্পর্ক না মেনে নেয়, তবে আমরা একে অপরকে গ্রহণ করব, তবুও।”
তৃষ্ণা এক মুহূর্ত চুপ থেকে তারপর বলল, "এটা খুব কঠিন, আরিয়ান। আমি জানি না কী হবে, কিন্তু আমি চাই তুমি আমার পাশে থাকো।"
আরিয়ান তার চোখে গভীর দৃষ্টি নিয়ে বলল, "তৃষ্ণা, আমি তোমার পাশে থাকব, আর আমি জানি, কোনো কিছু আমাদের একে অপরকে আলাদা করতে পারবে না।"
এভাবেই, তাদের সম্পর্ক পারিবারিক সংকটের মাঝেও একে অপরের প্রতি গভীর আস্থা এবং ভালোবাসা দিয়ে আরো শক্তিশালী হতে শুরু করেছিল। তারা জানতো, তাদের পথ সহজ নয়, কিন্তু একে অপরকে ভালোবাসা ছিল তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি, যা সব বাধা অতিক্রম করে তাদের একসাথে রাখবে।
চলবে.....