রাজীব আজ আবার ছাদে এসেছে। ২০ তলা ভবনের এই ছাদ তার কাছে এক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এখানে এলে মনে হয়, সে আবার নীহারিকার কাছে যেতে পারবে। মনে হয়, তার স্ত্রী এখনো পাশেই আছে, কেবল একটা ডাকে ফিরে আসবে।
রাতের শহরটা অদ্ভুত সুন্দর। জ্বলজ্বলে আলো, নিচে ছুটে চলা গাড়িগুলো, আর আকাশে ঝুলে থাকা এক ফালি চাঁদ—সবকিছু যেন একসাথে জীবন্ত। কিন্তু রাজীবের চোখে এগুলো কেবলই ছায়া, নিস্তেজ, অনুভূতিহীন।
সে দাঁড়িয়ে আছে ছাদের কিনারায়, নিচের দিকে তাকিয়ে। বাতাসে একটা চাপা গুঞ্জন, যেন কেউ ওর নাম ধরে ডাকছে।
"এবার চল না, রাজীব! আমরা একসাথে উড়বো!"
কান পাতলে সে শুনতে পায় প্রিয়তমা স্ত্রী নীহারিকার কণ্ঠস্বর। কিন্তু নীহারিকা তো মারা গেছে—তিন বছর হলো! তারপরও সে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে, অনুভব করতে পারছে তার অস্তিত্ব।
রাজীব কাঁপতে থাকা ঠোঁটে মৃদু হাসির রেখা টানে।
"আমি প্রস্তুত, নীহা। এবার তো আর হাত ছাড়বে না, তাই তো?"
সেদিনও তারা একসাথে দাঁড়িয়েছিল এই ছাদে। কিন্তু নীহারিকা হাত ছেড়ে দিয়েছিল। বাতাস চিরে নিচে পড়ে গিয়েছিল সে, রেখে গিয়েছিল অসীম শূন্যতা।
এরপর থেকে সে বারবার এই ছাদে আসে, বারবার লাফ দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রতিবারই পা আটকে যায়, এক অদৃশ্য হাত তাকে ধরে ফেলে।
হাসপাতালের ডাক্তাররা বলে, এটা তার মানসিক অসুস্থতা—সিজোফ্রেনিয়া। কিন্তু রাজীব জানে, নীহারিকা তাকে ডাকে, তাকে প্রতীক্ষা করায়।