অবিভক্ত কোরিয়া মূলত জাপানিদের দখলে ছিল। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হেরে যাবার সময় জাপানিরা সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে আত্মসমর্পণ করে। তার ফলে ১৯৪৮ সালে কোরিয়া ২ ভাগে ভাগ হয়ে যায়।
এরপর দুই কোরিয়ার মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধের পর দক্ষিণ কোরিয়া ছিল বিশ্বের অন্যতম গরীব দেশ। এজন্য তখন থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ার অধিকাংশ মানুষদেরকে উন্নতির জন্য পরিশ্রম করতে হত। এই দক্ষিণ কোরিয়ারই একটি প্রদেশ চুংচেওং।
যে সময়ে এ ঘটনাটি ঘটেছিল তখন দুই কোরিয়ার মধ্যে একটি যুদ্ধ চলছিল। ঠিক সেই সময়ে একটি মেয়ে তার স্বপ্নের মধ্যে একটি লাল সাপে পরিণত হয়।
যদিও কোরিয়ান সংস্কৃতিতে ড্রাগন হচ্ছে শক্তিমত্তা, জ্ঞান, সাহসীকতা ও সৌভাগ্যের প্রতীক। এরপরও লাল সাপের সেই অবিস্মরণীয় অবদানের কথা এখনও দক্ষিণ কোরিয়ায় শোনা যায়।
মেয়েটি ছিল বর্তমান সময়ের একটি মেয়ে যে কিনা তার স্বপ্নের ভিতর যেয়ে পৌঁছায় চুংচেওং এর একটি রাস্তায়, তখন ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার একটি উৎসবের দিন, সুসক অর্থাৎ ধন্যবাদ জানানোর দিবস।
কিন্তু মেয়েটি কাউকেই চিনতে পারে না, এমনকি তার কোনো আত্নীয় স্বজন আছে কি না তাও মনে করতে পারে না, সে আশ্রয় নেয় একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে শুধু রাতটা কাটানোর আশায়।
সেখান থেকেই সে জানতে পারে যে তাদের ছোট্ট মেয়েটি উত্তর কোরিয়ায় বন্দি। আজ তার বাবা মার লোভের কারণেই তার এই অবস্থা। সুসকের দিন সবাই যখন আনন্দ করছে তখন তাদের পরিবারে কোনো আনন্দ নেই। সেখানে শুধুই ভয় আর ঘৃণা।
ইশ্ , তারা যদি তাদের মেয়ের উপর দোষ না চাপাতো, ছোট্ট মেয়ে কিই বা বুঝতে পারে। এখন কি তাদের সর্বস্ব খোয়াতে হবে না কি। মানুষগুলোকে তো তাদের মেয়ে খুন করে নাই। লাল সাপের কিংবদন্তি ছড়াতেই তো তারা বলেছে যে তারা লাল সাপকে দেখেছে।
যে কিনা উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদেরকে খুন করছে, যদি না তার বাবা একজন উত্তর কোরীয় জেনারেল হত আর মা একজন দক্ষিণ কোরীয় অধিবাসী হত, তাহলে তাদের কোনো ক্ষমতার লোভই থাকত না।
এখন যদি কাল সকালে তাদের মেয়ে লাল সাপকে হাজির করতে না পারে, তাহলে তো মেয়েটাকে তাদের ড্রাগন দেবতার উদ্দেশ্যে বলি দেওয়া হবেই, উপরন্তু তাদের সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।
অথচ, তারা যে সমঝোতা করতেই এমনটা করেছে তাও প্রমাণিত হবে না। এভাবেই তাদের রাতের কথপোকথন শেষ হয়।
আশ্রিতা মেয়েটি সবকিছুই শুনতে পায়। পরদিন যখন ছোট্ট মেয়েটিকে বলি দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন অনেকেই চোখের পানি সামলাতে পারছিল না। কারণ সে চুক্তিমত লাল সাপকে আনতে পারে নি, যে কিনা কোরীয়দের গোপন ধনসম্পদের ব্যাপারে জানত পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার কিছু মানুষের খুনের জন্যও দায়ী।
ছোট্ট মেয়েটি কিন্তু তখনও জানত না যে তার নিষ্ঠুর বাবা মার কি পরিণতি হবে? সে কেবল নিজের দুঃখেই কাঁদছিল একা একা। তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল উত্তর কোরীয় রাজার প্রাসাদের সামনে বলিদানের উদ্দেশ্যে।
ঠিক সেই মুহূর্তে হঠাৎ একটি লাল সাপ চলে আসে সেখানে তার ভয়ানক রুপ নিয়ে।
লাল সাপকে দেখে উত্তর কোরীয় সৈন্যদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়। লাল সাপ একটানে মেয়েটিকে ছুটিয়ে নিয়ে যায় দক্ষিণ কোরিয়ার চুংচেওং-এ। সেখানে আশ্রিতা মেয়েটি সকাল হতেই উধাও। কিছুই বোঝা যায় না যে এসবের কারণ কি?
এদিকে ছোট্ট মেয়েটির বাবা মা ক্ষোভে, দুঃখে, অপমানে চুপ হয়ে বসে ছিল, সারারাত পরেও যেন ঘুম নেই তাদের দু'চোখের পাতায়। তাদের মাথায় কেবল একটাই চিন্তা, তাদের ছোট্ট মেয়েটির সাথে এখন কি হচ্ছে?
এই মুহুর্তেই বাইরে অনেক মানুষের চিৎকার শোনা যায়। তারা এর কারণ জানতে বাইরে ছুটে আসে। এসে দেখে তাদের ছোট্ট মেয়েটি দরজায় দাঁড়িয়ে। তার পেছনে একটা মস্ত বড় লাল রঙের সাপ। এটা দেখে তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাল সাপ দ্রুত উধাও হয়ে যায়।
ছোট্ট মেয়েটির মা দৌড়ে এসে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে। সেই থেকে সেই লাল সাপকে কখনও কোরিয়ায় দেখা যায়নি। কিন্তু তার কথা এখনও কোরিয়ানরা মনে রেখেছে হয়তো।