তৃষ্ণা আর আরিয়ান এখন আলাদা পথে চলতে শুরু করেছিল। তাদের সম্পর্কের কঠিন পরিস্থিতি ছিল, আর সেই পরিস্থিতি তীব্র হয়ে উঠছিল। তারা একে অপরকে মিস করছিল, তবে পরিবার এবং সমাজের চাপ তাদের মধ্যে একটা অদৃশ্য দূরত্ব তৈরি করেছিল। তৃষ্ণা যখনো কিছুটা দূরে চলে যেত, তখন তার মন তৃষ্ণা ছাড়া কিছুতেই শান্তি পেত না, আর আরিয়ানও তাকে ছাড়া অদ্ভুতভাবে একাকী অনুভব করছিল।
তৃষ্ণা তার পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল, কিন্তু সে জানত যে আরিয়ানকে নিয়ে তার পথ যেন বাধা-বিপত্তিতে পূর্ণ। একদিন, তৃষ্ণা চুপচাপ নিজের ঘরে বসে ছিল, জানালার বাইরে বৃষ্টি পড়ছিল, আর তার মন একদিকে ঝড়ের মতো ছিল।
এমন সময়, আরিয়ান তাকে দেখতে এলো। তার চোখে ছিল এক ধরনের অদ্ভুত তীব্রতা, যেন কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু মুখ থেকে শব্দ বের হচ্ছিল না। তৃষ্ণা চোখ তুলে তাকে দেখল, এবং খুব মৃদু গলায় বলল, "আরিয়ান, তুমি কেন এলে?"
আরিয়ান ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে এসে তৃষ্ণার হাতে তার হাত রাখল, গভীর শ্বাস নিল। "তৃষ্ণা, আমি জানি আমরা আলাদা পথে চলছি, কিন্তু আমি আর পারছি না। আমার মন আর আমার হৃদয় কিছুই বুঝতে চাইছে না। আমি তোমার কাছে ফিরে আসতে চাই, কিন্তু আমি জানি যে তুমি কিছু কারণে না চাইতেই চলে যাবে। আমি পারছি না, তৃষ্ণা।"
তৃষ্ণা চুপ হয়ে রইল, তার মনের মধ্যে একটা ঝড় বয়ে যাচ্ছিল। সে জানত, আরিয়ান সঠিক বলছিল, তবে কিছু ভয় তার মধ্যে জমে ছিল। সে জানত, তাদের সম্পর্কের কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু তারপরও, তার হৃদয়ে সেই অদৃশ্য আকর্ষণ ছিল, যা তাকে কোনোভাবেই ছাড়াতে পারছিল না।
"আরিয়ান, তুমি কেন এমন বলছো? আমাদের পরিবার আমাদের সম্পর্ক মেনে নেবে না। আমাদের পথ তো আলাদা হয়ে গিয়েছে।" তৃষ্ণা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল।
আরিয়ান তৃষ্ণার হাত আরও শক্ত করে ধরল, এবং তার চোখে এক ধরনের উন্মাদনা ছিল। "তৃষ্ণা, আমি জানি আমি যা বলছি তা সহজ নয়, কিন্তু আমি পারছি না। তুমি ছাড়া আমি কিছুই হতে পারি না। আমার জীবন তোমার জন্য, আর আমি জানি তুমি আমাকে বুঝবে। তোমার পাশে থাকতে আমি আর কোনো কিছুই চাই না।"
তারপর, আরিয়ান তৃষ্ণাকে একটু কাছে টেনে নিল, যেন তার শ্বাস প্রশ্বাস তৃষ্ণার শরীরের কাছে এক হয়ে গেছে। আর তৃষ্ণা, যেই মুহূর্তে আরিয়ানের কাছাকাছি এল, তার মনের সব ভীতি, সংকট আর দূরত্ব হঠাৎ করে মিটে গেল।
"আমি পারছি না, তৃষ্ণা," আরিয়ান আবার বলল, "আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে পারছি না, না তোমার থেকে দূরে থাকতে।"
তৃষ্ণা অশ্রুভরা চোখে তাকে দেখল, এবং তার হৃদয়ে এক অদ্ভুত অনুভূতি হল। সে জানতো, তাদের সম্পর্কের পথে অনেক কষ্ট ছিল, অনেক বাধা ছিল, কিন্তু তার ভালোবাসা তখনো একই রকম ছিল। সে জানতো, তার ভালোবাসা আর আরিয়ানের ভালোবাসা তাদের সব বাধা কাটিয়ে একে অপরকে কাছে আনবে।
"আরিয়ান," তৃষ্ণা কাঁপা গলায় বলল, "আমি জানি, আমরা কি করতে যাচ্ছি। কিন্তু আমি তোমাকে কখনো ছেড়ে যেতে চাই না। তুমি আমার কাছে না থাকলে, আমার জীবনে কিছুই থাকবে না।"
আরিয়ান তার মুখে এক মিষ্টি হাসি ফোটাল এবং তৃষ্ণার কপালে একটি চুমু দিয়ে বলল, "তৃষ্ণা, আমি জানি, আমি তোমার কাছে ফিরে এসেছি। আর কিছুই আমাকে তোমার থেকে আলাদা করতে পারবে না।"
তৃষ্ণা আর আরিয়ান একে অপরকে এক মুহূর্তের জন্য ছেড়ে দিতে পারল না, যেন তাদের হৃদয় এক হয়ে গিয়েছে। তবে তাদের সামনে এখনো অনেক পথ ছিল, অনেক পরীক্ষা ছিল—কিন্তু তারা জানতো, একে অপরকে ভালোবাসতে কোনো বাধাই তাদের থামাতে পারবে না।
চলবে....