রবিভাই নজরুলকে খুব সুন্দরভাবে বুঝতে পারেন !
বইটির নাম দেওয়া হয়েছে আমারে দেব না ভুলিতে৷ বইটিতে একটি বিশেষ সময়যুগলকে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।১৮৯৯ থেকে ১৯৭৬ ,নজরুলের জন্ম মৃত্যু সাল, ঠিকই ধরেছেন। বইয়ের প্রচ্ছদেও নজরুলের একটি অসম্পূর্ণ অবয়ব। এটাই ঠিক করে দিচ্ছে বইটি শুধুমাত্র নজরুল কেন্দ্রিক নয়। একারণে ব্যাপকার্থে আমি বইয়ের আলাদা একটি নাম ধরে নিয়েছি - " আমাদের দেব না ভুলিতে। "
বইটি সম্পূর্ণ ফ্যাক্ট ফিগার দিয়ে ভরে রাখা হয় নি। লেখক হওয়ার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে ।চরিত্রগুলোর নাম পরিবর্তন করা গেলেই এটাকে দিব্যি উপন্যাসের বই হিসেবে বিকিয়ে দেওয়া যেত। বইটাকে আমি উপন্যাসের মোড়কে জীবনী হিসেবেই দেখেছি এবং পড়েছি। এক্ষেত্রে কথা সত্য যে নজরুলের জীবনের চিত্রায়ণ খুবই ভালোভাবে এবং বিচক্ষণভাবে করা হয়েছে, যাতে একইসাথে জিনিসটাকে আষাড়ে গালগল্প অথবা দলিলভিত্তিক কোনো কিছু মনে না হয়।
এবার বইয়ের কথায় আসি। বইটি আসলে অনেকগুলো বিষয়কে প্রতিনিধিত্ব করে। আমি মোটা দাগে কিছু কথা এখানে বলবো। নজরুলের বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করা - এই জিনিসটা নিয়ে কিছু বলি।এই ঘটনা নজরুলের চাহিদাকে যেভাবে তুলে ধরে ঠিক তেমনি নজরুলের বাজারে লেখক কিংবা পত্রিকার লেখক হয়ে যাবার একটি শঙকার পথও সৃষ্টি করে। এমনকি নজরুল নিয়মিত রাজনৈতিক কলামও লিখতেন। যেখানে সকল সাহিত্যিকরা এই জিনিসটাকে খুবই সাবধানে এড়িয়ে চলতেন কিংবা এখনও যান। পত্রিকায় লেখালেখির কারণে নজরুলকে জেলেও যেতে হয়েছে।
জেলে বসে তিনি ১৪ দিনের অনশনও করেছেন। রবীন্দ্রনাথ একটি বই উৎসর্গ করেও তার অনশন ভাঙাতে পারেননি। শেষমেষ কার কথায় তিনি অনশন ভেঙেছিলেন সেই কথা আমি আর এখানে না বলি।
তার লেখালেখির শক্তি কতটুকু সেইসম্পর্কে একটু বলি। তার লেখালেখির কারণে একটি পত্রিকাকে (নবযুগ) সরকার বন্ধ পর্যন্ত করে দিয়েছিলো।
তার পত্রিকায় লেখার বদৌলতেই আমরা পেয়েছি " শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির" মতো বিদ্রোহী কবিতা। একারণে পত্রিকাগুলোর কাছে আমরা আজন্ম ঋণী থাকতেই পারি।আমি মনে করি এই পত্রিকাগুলোই নজরুলকে অনেকটা সময় পর্যন্ত সাহস জুগিয়েছে, নিরাপত্তা দিয়েছে।
নজরুলের চরিত্রের আরেকটি দিক হলো কোনো জায়গায় আটকে না থাকা, ক্ষেত্রবিশেষে প্রজাপতি কিংবা পাখির বেশ নেওয়া। নজরুলের এই চারিত্রিক দিকটাও খুব ভালোমতো চিত্রায়িত করা হয়েছে এই বইটিতে। নজরুলের বিভিন্ন কবিতা এই বইয়ে স্থান পেয়েছে। কবিতা স্থান পেয়েছে এটা বড় কথা না, বড় কথা হলো কবিতা সৃষ্টির পেছনে একটি গল্প বলা হয়েছে, হ্যা এটা অবশ্যই সত্য যে এই কবিতার প্রেক্ষাপটগুলো কিছুটা লেখকেরই সৃষ্টি। জ্যোছনা ও জননীর গল্প কিংবা দেয়ালে আমরা এই একই প্যাটার্নে অভ্যস্ত। কিন্তু সেগুলো কোণোটাই নজরুল কেন্দ্রিক নয়। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি আমরা এই প্যাটার্নে অভ্যস্ত কিন্তু গল্পগুলোতে নয়। এক্ষেত্রে রবিভাইর স্বার্থকতা।
এছাড়াও এ বইতে উঠে এসেছে দ্যা গ্রেট বেঙগল সার্কাসের সুশীলা সুন্দরীর কথা, সোনাগাছি রুপোগাছির ভিন্ন ভিন্ন থিয়েটার , শরৎচন্দ্রের বাইজি বাড়িতে যাওয়া, গজাদা এবং শহীদুল্লাহর ভিন্ন ভিন্ন সাহিত্যিক আড্ডা এবং দু জায়গাতেই নজরুলের প্রাধান্য পাওয়া, ছোট্ট সত্যজিত রায়,নজরুল - রবিঠাকুরের সম্পর্ক। শেষের দিকে অনেকগুলো পৃষ্টাতেই স্থান পেয়েছে রবীন্দ্রনাথ এর কথা। রবীন্দ্রনাথ এর ভবলীলা সাঙগকে কেন্দ্র করে নজরুলের লেখা গান আমার খুবই ভালো লেগেছে। আমি এখানে সেইটা প্রকাশ করার লোভ সামলাতে পারলাম না ।
ঘুমাইতে দাও শান্ত রবিরে,
জাগায়ো না,জাগায়ো না,
সারাটা জীবন যে আলো দিলো,
ডেকে তার ঘুম ভাঙায়ো না।
বইটির বিশালত্ব আসলে ব্যাপক। এই ক্ষুদ্র পরিসরে সবগুলো জিনিসকে নিয়ে কথা বলা সম্ভবপর হবে না।
বইয়ের এক জায়গায় স্থান পেয়েছে নজরুল এবং প্রমীলা দেবীর বিয়ে। নজরুলের এই বিয়েকে নিয়ে দাঙগার সম্ভাবনা থাকলেও আসলে হয়েছে উল্টো।
হিন্দু মুসলমান এক হয়ে গেলো যে কোনোভাবেই নজরুলকে বিয়ে করতে দেওয়া যাবে না। এসময় "ধর্মমাতাল " নামক একটি বিশেষণকে আমরা দেখতে পাই। এই একটি বিশেষণ সমাজের সেই সময়ের একটা চিত্রকে তুলে ধরে যার রেপ্লিকা আজও সমাজে লক্ষণীয় বলে আমি মনে করি।
আশীফ এন্তাজ রবি সেইসময়ের কলকাতা কেন্দ্রিক এবং কলকাতার বাইরেও যেই সাহিত্যচর্চা চলছিল তার কথাও বইয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। এক্ষেত্রে লেখক সমাজে যে একটি বৈষম্য নীতি চলছিল তার কিছুটা আন্দাজ করা যায়।
নজরুল এবং ফজিলাতুন্নেছার একটি বন্য তথা অসমাপ্ত প্রেম বইয়ে দেখানো হয়েছে। জিনিসটা আমার কাছে বাড়াবাড়ি লেগেছে। আমি যতটুকু জানি ফজিলাতুন্নেসার সাথে কথা বলার জন্য নজরুলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।এই জিনিসটা বইয়ে উল্লেখ থাকলে আরও ভালো লাগতো।
বইটির বিশালত্ব আসলে ব্যাপক। এই ক্ষুদ্র পরিসরে সবগুলো জিনিসকে নিয়ে কথা বলা সম্ভবপর হবে না।
বইটিতে কোনো একঘেয়েমিতা নেই, এক শ্বাসে পড়ার মতোই। সবচেয়ে ভালো লাগার জিনিস বইটি পড়লে আপনি নজরুলকে নজরুলের চোখ দিয়েই দেখতে পারবেন, অন্য কারো চোখ দিয়ে নয়।
কিছু বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও বই স্থান পেয়েছে,যেগুলো আপনার চোখকে শান্ত করবে, মনকে প্রশান্ত। এইগুলো সবই আমার ব্যাক্তিগত অভিমত। আশা করি বইটি খুব তাড়াতাড়ি পড়ে ফেলবেন।
বইটির নাম দেওয়া হয়েছে আমারে দেব না ভুলিতে৷ বইটিতে একটি বিশেষ সময়যুগলকে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।১৮৯৯ থেকে ১৯৭৬ ,নজরুলের জন্ম মৃত্যু সাল, ঠিকই ধরেছেন। বইয়ের প্রচ্ছদেও নজরুলের একটি অসম্পূর্ণ অবয়ব। এটাই ঠিক করে দিচ্ছে বইটি শুধুমাত্র নজরুল কেন্দ্রিক নয়। একারণে ব্যাপকার্থে আমি বইয়ের আলাদা একটি নাম ধরে নিয়েছি - " আমাদের দেব না ভুলিতে। "
বইটি সম্পূর্ণ ফ্যাক্ট ফিগার দিয়ে ভরে রাখা হয় নি। লেখক হওয়ার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে ।চরিত্রগুলোর নাম পরিবর্তন করা গেলেই এটাকে দিব্যি উপন্যাসের বই হিসেবে বিকিয়ে দেওয়া যেত। বইটাকে আমি উপন্যাসের মোড়কে জীবনী হিসেবেই দেখেছি এবং পড়েছি। এক্ষেত্রে কথা সত্য যে নজরুলের জীবনের চিত্রায়ণ খুবই ভালোভাবে এবং বিচক্ষণভাবে করা হয়েছে, যাতে একইসাথে জিনিসটাকে আষাড়ে গালগল্প অথবা দলিলভিত্তিক কোনো কিছু মনে না হয়।
এবার বইয়ের কথায় আসি। বইটি আসলে অনেকগুলো বিষয়কে প্রতিনিধিত্ব করে। আমি মোটা দাগে কিছু কথা এখানে বলবো। নজরুলের বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করা - এই জিনিসটা নিয়ে কিছু বলি।এই ঘটনা নজরুলের চাহিদাকে যেভাবে তুলে ধরে ঠিক তেমনি নজরুলের বাজারে লেখক কিংবা পত্রিকার লেখক হয়ে যাবার একটি শঙকার পথও সৃষ্টি করে। এমনকি নজরুল নিয়মিত রাজনৈতিক কলামও লিখতেন। যেখানে সকল সাহিত্যিকরা এই জিনিসটাকে খুবই সাবধানে এড়িয়ে চলতেন কিংবা এখনও যান। পত্রিকায় লেখালেখির কারণে নজরুলকে জেলেও যেতে হয়েছে।
জেলে বসে তিনি ১৪ দিনের অনশনও করেছেন। রবীন্দ্রনাথ একটি বই উৎসর্গ করেও তার অনশন ভাঙাতে পারেননি। শেষমেষ কার কথায় তিনি অনশন ভেঙেছিলেন সেই কথা আমি আর এখানে না বলি।
তার লেখালেখির শক্তি কতটুকু সেইসম্পর্কে একটু বলি। তার লেখালেখির কারণে একটি পত্রিকাকে (নবযুগ) সরকার বন্ধ পর্যন্ত করে দিয়েছিলো।
তার পত্রিকায় লেখার বদৌলতেই আমরা পেয়েছি " শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির" মতো বিদ্রোহী কবিতা। একারণে পত্রিকাগুলোর কাছে আমরা আজন্ম ঋণী থাকতেই পারি।আমি মনে করি এই পত্রিকাগুলোই নজরুলকে অনেকটা সময় পর্যন্ত সাহস জুগিয়েছে, নিরাপত্তা দিয়েছে।
নজরুলের চরিত্রের আরেকটি দিক হলো কোনো জায়গায় আটকে না থাকা, ক্ষেত্রবিশেষে প্রজাপতি কিংবা পাখির বেশ নেওয়া। নজরুলের এই চারিত্রিক দিকটাও খুব ভালোমতো চিত্রায়িত করা হয়েছে এই বইটিতে। নজরুলের বিভিন্ন কবিতা এই বইয়ে স্থান পেয়েছে। কবিতা স্থান পেয়েছে এটা বড় কথা না, বড় কথা হলো কবিতা সৃষ্টির পেছনে একটি গল্প বলা হয়েছে, হ্যা এটা অবশ্যই সত্য যে এই কবিতার প্রেক্ষাপটগুলো কিছুটা লেখকেরই সৃষ্টি। জ্যোছনা ও জননীর গল্প কিংবা দেয়ালে আমরা এই একই প্যাটার্নে অভ্যস্ত। কিন্তু সেগুলো কোণোটাই নজরুল কেন্দ্রিক নয়। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি আমরা এই প্যাটার্নে অভ্যস্ত কিন্তু গল্পগুলোতে নয়। এক্ষেত্রে রবিভাইর স্বার্থকতা।
এছাড়াও এ বইতে উঠে এসেছে দ্যা গ্রেট বেঙগল সার্কাসের সুশীলা সুন্দরীর কথা, সোনাগাছি রুপোগাছির ভিন্ন ভিন্ন থিয়েটার , শরৎচন্দ্রের বাইজি বাড়িতে যাওয়া, গজাদা এবং শহীদুল্লাহর ভিন্ন ভিন্ন সাহিত্যিক আড্ডা এবং দু জায়গাতেই নজরুলের প্রাধান্য পাওয়া, ছোট্ট সত্যজিত রায়,নজরুল - রবিঠাকুরের সম্পর্ক। শেষের দিকে অনেকগুলো পৃষ্টাতেই স্থান পেয়েছে রবীন্দ্রনাথ এর কথা। রবীন্দ্রনাথ এর ভবলীলা সাঙগকে কেন্দ্র করে নজরুলের লেখা গান আমার খুবই ভালো লেগেছে। আমি এখানে সেইটা প্রকাশ করার লোভ সামলাতে পারলাম না ।
ঘুমাইতে দাও শান্ত রবিরে,
জাগায়ো না,জাগায়ো না,
সারাটা জীবন যে আলো দিলো,
ডেকে তার ঘুম ভাঙায়ো না।
বইটির বিশালত্ব আসলে ব্যাপক। এই ক্ষুদ্র পরিসরে সবগুলো জিনিসকে নিয়ে কথা বলা সম্ভবপর হবে না।
বইয়ের এক জায়গায় স্থান পেয়েছে নজরুল এবং প্রমীলা দেবীর বিয়ে। নজরুলের এই বিয়েকে নিয়ে দাঙগার সম্ভাবনা থাকলেও আসলে হয়েছে উল্টো।
হিন্দু মুসলমান এক হয়ে গেলো যে কোনোভাবেই নজরুলকে বিয়ে করতে দেওয়া যাবে না। এসময় "ধর্মমাতাল " নামক একটি বিশেষণকে আমরা দেখতে পাই। এই একটি বিশেষণ সমাজের সেই সময়ের একটা চিত্রকে তুলে ধরে যার রেপ্লিকা আজও সমাজে লক্ষণীয় বলে আমি মনে করি।
আশীফ এন্তাজ রবি সেইসময়ের কলকাতা কেন্দ্রিক এবং কলকাতার বাইরেও যেই সাহিত্যচর্চা চলছিল তার কথাও বইয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। এক্ষেত্রে লেখক সমাজে যে একটি বৈষম্য নীতি চলছিল তার কিছুটা আন্দাজ করা যায়।
নজরুল এবং ফজিলাতুন্নেছার একটি বন্য তথা অসমাপ্ত প্রেম বইয়ে দেখানো হয়েছে। জিনিসটা আমার কাছে বাড়াবাড়ি লেগেছে। আমি যতটুকু জানি ফজিলাতুন্নেসার সাথে কথা বলার জন্য নজরুলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।এই জিনিসটা বইয়ে উল্লেখ থাকলে আরও ভালো লাগতো।
বইটির বিশালত্ব আসলে ব্যাপক। এই ক্ষুদ্র পরিসরে সবগুলো জিনিসকে নিয়ে কথা বলা সম্ভবপর হবে না।
বইটিতে কোনো একঘেয়েমিতা নেই, এক শ্বাসে পড়ার মতোই। সবচেয়ে ভালো লাগার জিনিস বইটি পড়লে আপনি নজরুলকে নজরুলের চোখ দিয়েই দেখতে পারবেন, অন্য কারো চোখ দিয়ে নয়।
কিছু বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও বই স্থান পেয়েছে,যেগুলো আপনার চোখকে শান্ত করবে, মনকে প্রশান্ত। এইগুলো সবই আমার ব্যাক্তিগত অভিমত। আশা করি বইটি খুব তাড়াতাড়ি পড়ে ফেলবেন।