তৃষ্ণা আর আরিয়ানের সম্পর্ক এখন এক ভয়ঙ্কর দোলাচলে। ভালোবাসা একদিকে শক্ত হয়ে উঠছে, অন্যদিকে পরিবারের অস্বীকৃতি তাদের ক্রমাগত দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। যতই তারা একে অপরের দিকে এগিয়ে যায়, ততই যেন কোনো অদৃশ্য হাত তাদের টেনে নিচ্ছে বিপরীত দিকে।
তৃষ্ণার পরিবার সবকিছু দেখে বুঝতে পারলো যে মেয়েকে জোর করে দূরে সরিয়ে রাখা সম্ভব না। তৃষ্ণা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছিল, আরিয়ানও তার মতোই। তৃষ্ণার মা-বাবা উপলব্ধি করলেন, যদি তারা এই সম্পর্ককে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে, তাহলে হয়তো তারা তাদের মেয়েকে চিরতরে হারিয়ে ফেলবে।
এক সন্ধ্যায়, তৃষ্ণাকে তার বাবা-মা ডেকে বসলেন। ঘরভর্তি নীরবতা, যেন বাতাসও থমকে গেছে। তৃষ্ণার বাবা সরাসরি বললেন, "তৃষ্ণা, আমরা তোমার ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানাচ্ছি। আমরা আর বাধা দেব না।"
তৃষ্ণার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল। সে কখনো আশা করেনি যে তার বাবা-মা এত সহজে রাজি হয়ে যাবে। তার গলা কাঁপছিল, সে ধীরে ধীরে বলল, "বাবা, তুমি সত্যি বলছো?"
তার মা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, "হ্যাঁ, মা। আমরা রাজি, কিন্তু একটা শর্ত আছে।"
শর্ত?
তৃষ্ণার বুক ধক করে উঠল। ভালোবাসার পথে শর্তের বেড়াজাল মানে অদূর ভবিষ্যতে আবার কোনো বাধা অপেক্ষা করছে।
তার বাবা দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, "তোমরা যদি একসাথে থাকতে চাও, তাহলে তোমাদের দুজনকে আমাদের শর্ত মেনে চলতে হবে। নাহলে আমরা এই সম্পর্ককে মেনে নেব না।"
তৃষ্ণা কিছুটা শঙ্কিত গলায় বলল, "কি শর্ত?"
তার মা বললেন, "প্রথম শর্ত, তোমাদের একে অপরের থেকে ছয় মাস আলাদা থাকতে হবে। এই ছয় মাসে কোনো যোগাযোগ থাকবে না, কোনো দেখা হবে না। যদি এই সময় পার হওয়ার পরেও তোমরা একইরকম অনুভব করো, তাহলে আমরা তোমাদের সম্পর্ক মেনে নেব।"
তৃষ্ণার মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হলো না। ছয় মাস? ছয় মাস কোনো যোগাযোগ ছাড়া?
তার বাবা বললেন, "দ্বিতীয় শর্ত, এই ছয় মাসে আরিয়ানকে প্রমাণ করতে হবে যে সে তোমাকে শুধু আবেগের বশে ভালোবাসে না, বরং তার ভবিষ্যত তোমার জন্য প্রস্তুত। সে যদি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, তাহলে আমরা বাধা দেব না।"
তৃষ্ণা হতবাক হয়ে গেল। সে জানতো, এই শর্তগুলো সহজ নয়।
তার মা সংযত কণ্ঠে বললেন, "আমরা চাই না তোমরা আবেগের কারণে ভুল সিদ্ধান্ত নাও। যদি তোমাদের ভালোবাসা সত্যি হয়, তাহলে এই ছয় মাসের দূরত্ব তোমাদের আলাদা করতে পারবে না। আর যদি এই সময় তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা আসে, তাহলে সেটা প্রমাণ করবে যে এই সম্পর্ক টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী নয়।"
তৃষ্ণার মনে হল যেন কেউ তার হৃদয়কে পাথর দিয়ে চেপে ধরেছে। সে কিছু বলতে পারলো না, শুধু অসহায়ের মতো তার বাবা-মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
আরিয়ান যখন শর্তের কথা শুনলো, তখন তার ভেতর একরকম তীব্র কষ্টের ঢেউ বয়ে গেল। কিন্তু সে জানতো, তৃষ্ণার পরিবার সহজে রাজি হবে না। এই শর্তই ছিল তাদের ভালোবাসার সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা।
আরিয়ান দৃঢ় কণ্ঠে বলল, "আমি রাজি। আমি ছয় মাস অপেক্ষা করবো, যদি এটা তোমাদের বিশ্বাস আনে যে আমার ভালোবাসা শুধু আবেগ নয়। আমি প্রমাণ করবো যে তৃষ্ণা শুধু আমার মনের নয়, আমার জীবনেরও অংশ।"
তৃষ্ণার চোখ ভরে উঠল জলেতে। সে জানে, এই ছয় মাস সহজ হবে না। কিন্তু এই দূরত্ব কি তাদের ভালোবাসাকে দুর্বল করবে? নাকি এটিই হবে তাদের প্রেমের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা?
চলবে……