ছোটবেলা থেকেই আমি রহস্য আর অ্যাডভেঞ্চারের প্রতি ভীষণ টান অনুভব করতাম। গল্পের বইয়ের পাতায় পাতায় হারিয়ে গিয়ে ভাবতাম, যদি সত্যিকারের কোনো রহস্যের মুখোমুখি হতে পারতাম! অবশেষে সেই সুযোগ এলো গত গ্রীষ্মে, যখন আমি আর আমার তিনজন বন্ধু ঠিক করলাম, সুন্দরবনের গভীরে একটি অভিযান চালাব।
আমরা খুলনা থেকে লঞ্চে চেপে সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। লঞ্চ নদীর বুক চিরে এগিয়ে চলল, চারপাশে কেবল সবুজ আর পানি। দু’পাশে দেখা যাচ্ছিল গাছের সারি, মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছিল অজানা পাখির ডাক। সন্ধ্যার দিকে আমরা এক নির্জন ঘাটে পৌঁছালাম। সেখান থেকে গাইড নিয়ে নৌকায় চেপে আরও ভেতরের দিকে চললাম।
গভীর জঙ্গলে পা রাখতেই গা ছমছমে অনুভূতি হলো। বিশাল বিশাল সুন্দরী গাছের ছায়ায় আলো-আঁধারির খেলা। হঠাৎ কোথাও একটা শুকনো পাতা মচমচ শব্দ করে উঠল, আমরা চমকে তাকালাম। গাইড মৃদু হেসে বললেন, "ভয় পাবেন না, ওটা হরিণের পায়ের শব্দ।"
হাঁটতে হাঁটতে আমরা যখন বনের আরও গভীরে ঢুকলাম, তখনই শুরু হলো আসল রহস্য। একটি পুরোনো কাঠের পাটাতন দেখতে পেলাম, যা মাটির নিচে আধা চাপা পড়ে ছিল। কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে আমরা পাটাতন সরাতে লাগলাম। একটু খনন করতেই বেরিয়ে এলো একটা লোহার বাক্স। মনে হচ্ছিল, কোনো গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছি!
বাক্সটা খুলতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। ভেতরে ছিল পুরোনো মানচিত্র, যার কিছু অংশ ঝাপসা হয়ে গেছে। গাইড বললেন, "এটা হয়তো প্রাচীন জলদস্যুদের গুপ্তধনের মানচিত্র হতে পারে। অনেক বছর আগে এই এলাকায় জলদস্যুরা লুকিয়ে থাকত।"
আমাদের কৌতূহল চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাল। আমরা ঠিক করলাম মানচিত্রের রহস্য উন্মোচন করব। মানচিত্রে চিহ্নিত স্থানে পৌঁছাতে হলে আমাদের আরও গভীরে যেতে হবে। পরদিন খুব ভোরে আবার বেরিয়ে পড়লাম।
দুপুরের দিকে আমরা এক বিরাট গাছের নিচে এসে দাঁড়ালাম—ঠিক মানচিত্রে দেখানো জায়গা। সেখানে কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করার পর একটি মাটিচাপা মাটির পাত্র খুঁজে পেলাম। যদিও এটি গুপ্তধন ছিল না, তবে তার ভেতরে ছিল কিছু পুরোনো মুদ্রা আর একটি ধাতব ফলক। ফলকে একটি প্রাচীন লিপি খোদাই করা ছিল, যা হয়তো এখানকার কোনো ইতিহাসের সাক্ষী।
অভিযান শেষে মনে হলো, গুপ্তধন হয়তো পেলাম না, কিন্তু একটা অমূল্য অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। সুন্দরবনের সেই গোপন রহস্য আর অজানা জগত আমাদের মনে চিরকালের জন্য গেঁথে থাকবে।
যাত্রা শেষ হলেও, সেই মানচিত্র আজও আমার ডেস্কের পাশে ঝুলছে—নতুন রহস্যের ডাকের অপেক্ষায়!