Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....(পর্ব -১৫)

March 24, 2025

Boros Marika

112
View


ছয় মাস—এই ছয় মাস যেন তৃষ্ণা আর আরিয়ানের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় হয়ে উঠেছিল। সময় এগিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু একে অপরের স্পর্শ, কণ্ঠস্বর, এমনকি ছোটখাট অভ্যাসগুলোও তাদের প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিল।

তৃষ্ণা যখন রাতের অন্ধকারে একা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকত, তখন আরিয়ানের কথাগুলো তার কানে বাজতো। "আমি অপেক্ষা করবো, যত দিন লাগুক..." এই প্রতিশ্রুতির শব্দগুলো তার হৃদয়ে শক্তি জোগাতো, তবুও একাকিত্বের কষ্ট তার চোখ ভিজিয়ে তুলতো।

আরিয়ানও সহজে কাটিয়ে দেয়নি সময়টা। দিনের পর দিন নিজের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য পরিশ্রম করছিল, কারণ এই পরীক্ষায় তাকে শুধু ভালোবাসা নয়, দায়িত্ববোধও প্রমাণ করতে হতো। তার একটাই লক্ষ্য ছিল—তৃষ্ণাকে একদিন গর্বিত করা, তার পরিবারের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো।

ছয় মাস পর…

তৃষ্ণার বাবা একদিন তাকে ডেকে বললেন, "তোমার সিদ্ধান্ত এখনো বদলায়নি তো?"

তৃষ্ণা দৃঢ়ভাবে মাথা নাড়লো, "না বাবা। আমি এখনো আরিয়ানকেই চাই।"

তার মা এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন, "আরিয়ান এখন কেমন আছে?"

তৃষ্ণা জানতো না, কারণ তাদের কোনো যোগাযোগ হয়নি। কিন্তু সে বিশ্বাস করতো, আরিয়ান অবশ্যই নিজেকে প্রমাণ করেছে।

তৃষ্ণার বাবা একটু থেমে বললেন, "তাহলে ওকে নিয়ে এসো। আমরা কথা বলতে চাই।"

এই কথা শুনে তৃষ্ণার বুক ধক করে উঠলো। এতদিনের অপেক্ষার পর অবশেষে সময় এসেছে! সে দ্রুত ফোন বের করলো, এবং কয়েক মুহূর্ত দ্বিধার পর আরিয়ানকে ফোন করলো।

দীর্ঘ ছয় মাস পর প্রথমবারের মতো ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে এলো সেই পরিচিত কণ্ঠ—"তৃষ্ণা?"

শুধু একটা শব্দই যথেষ্ট ছিল। তৃষ্ণার গলা কেঁপে উঠলো, সে কিছু বলতে পারছিল না।

আরিয়ান আবার বলল, "তৃষ্ণা, তুমি কেমন আছো?"

সে চোখের জল আটকানোর চেষ্টা করে হাসল, "ভালো… তুমি কেমন?"

আরিয়ান গভীর শ্বাস নিয়ে বলল, "আমি প্রতিশ্রুতি রেখেছি, তৃষ্ণা। আমি ফিরে এসেছি, আমাদের জন্য।"

তৃষ্ণার চোখ জলে ভরে গেল, কিন্তু এবার সে কাঁদলো না। এবার সে জানতো, এই কান্না সুখের, এই কান্না অপেক্ষার অবসানের।


---

পরের দিন, আরিয়ান তৃষ্ণার বাড়িতে এলো। দীর্ঘ ছয় মাস পর তাকে সামনে দেখে তৃষ্ণার হৃদয় আবার দ্রুত ধুকপুক করতে লাগলো। আরিয়ান আরো পরিণত, আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে।

তৃষ্ণার বাবা আরিয়ানকে দেখে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তারপর বললেন, "তুমি কি আমাদের শর্ত রেখেছিলে?"

আরিয়ান বিনয়ের সাথে মাথা নত করলো, "হ্যাঁ, কাকু। আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে আমি প্রমাণ করবো, আমি তৃষ্ণার জন্য শুধু ভালোবাসা নয়, ভবিষ্যতও দিতে পারবো। আমি এখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি, আমি তৃষ্ণার দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।"

তৃষ্ণার বাবা কিছুক্ষণ নীরব রইলেন, তারপর ধীর কণ্ঠে বললেন, "তাহলে আমরাও রাজি।"

এই কথাটা শুনে তৃষ্ণার মনে হলো যেন পুরো দুনিয়া থমকে গেছে! সে যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না!

আরিয়ান তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। তৃষ্ণা হেসে ফেললো, চোখ ভিজে গেলেও এবার সে কাঁদলো না। এবার সে জানে, তারা নতুন করে শুরু করতে পারবে।

তৃষ্ণার বাবা বললেন, "কিন্তু এবার সবকিছু বুঝে-শুনে করতে হবে। এটা আবেগের নয়, দায়িত্বের সম্পর্ক। তোমাদের দুজনকে একসাথে জীবন গড়তে হবে।"

তৃষ্ণা আরিয়ান একসাথে মাথা নেড়ে বলল, "আমরা প্রস্তুত।"

এই মুহূর্তেই যেন তাদের সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। অপেক্ষার প্রহর শেষ, ভালোবাসার পথ আবার আলোকিত হলো। এবার তারা একসাথে পথচলার প্রতিশ্রুতি দিলো, যেখানে প্রেম শুধু আবেগ নয়, বরং দায়িত্বেরও নাম।

চলবে.......

Comments

    Please login to post comment. Login