প্রথম অধ্যায়: শুরুটা ছিল স্বপ্নের মতো
ঢাকার ব্যস্ত শহরে, রোহান একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করে। বয়স ২৮, সুদর্শন, পরিশ্রমী, কিন্তু ভালোবাসার প্রতি একটু উদাসীন। সে ভালোবাসায় বিশ্বাস করে, কিন্তু জীবনে কখনও গভীরভাবে প্রেমে পড়েনি।
কামিনী, ২৪ বছরের চঞ্চল এক মেয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করছে, বই পড়তে ভালোবাসে, আর তার স্বপ্ন নিজে কিছু একটা করবে। জীবনকে সে খুব সহজভাবে নেয়, কিন্তু ভালোবাসার প্রতি সে খুবই আবেগপ্রবণ।
একদিন বিকেলে ক্যাফেতে বসে থাকা রোহান বই পড়ছিল। হঠাৎ করেই পাশের টেবিলে বসা কামিনীর গ্লাস উল্টে তার বই ভিজিয়ে দিল।
— "ওহ! আই অ্যাম সো সরি!"
রোহান একটু বিরক্ত হলেও হাসিমুখে বলল, "কোনো ব্যাপার না। বইটা আমার খুব প্রিয় ছিল, কিন্তু এখন মনে হয় নতুন একটা কিনতে হবে!"
এই সামান্য ঘটনাই ছিল তাদের প্রথম পরিচয়ের সূচনা। এরপর নিয়মিত দেখা, কথা বলা, ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব গাঢ় হতে লাগল।
দ্বিতীয় অধ্যায়: ভালোবাসার গভীরতা
কয়েক মাস পর, রোহান বুঝতে পারল যে সে কামিনীকে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু সে জানত না কামিনীও তার জন্য একই অনুভূতি পোষণ করে কি না।
এক সন্ধ্যায়, বসুন্ধরা পার্কে হাঁটছিল তারা। হঠাৎ কামিনী বলল,
— "রোহান, যদি কাউকে সত্যিকারের ভালোবাসা দেই, সে যদি আমাকে ছেড়ে চলে যায়, তাহলে কেমন কষ্ট হবে?"
রোহান একটু থেমে বলল, "ভালোবাসা যদি সত্যি হয়, তাহলে সে কখনো ফেলে যাবে না। আর যদি চলে যায়, তাহলে বুঝবে সে কখনো সত্যিকারের ছিল না।"
কামিনী মুচকি হেসে বলল, "তাহলে যদি কেউ খুব সত্যি সত্যি ভালোবাসে?"
রোহান চুপ করে রইল। সে জানত, সে নিজেও কামিনীকে হারাতে চায় না।
তৃতীয় অধ্যায়: ভাগ্যের নিষ্ঠুর খেলা
ভালোবাসা ধীরে ধীরে গভীর হচ্ছিল। রোহান সিদ্ধান্ত নেয়, সে কামিনীকে বিয়ে করবে। কিন্তু তখনই আসে দুঃসংবাদ— কামিনীর বাবা তার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন এক ব্যবসায়ীর ছেলের সঙ্গে।
কামিনী কাঁদতে কাঁদতে রোহানের কাছে আসে, "রোহান, আমি কী করবো? আমি তো তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না!"
কিন্তু রোহান জানত, সমাজের নিয়ম ভাঙা এত সহজ নয়। সে সিদ্ধান্ত নেয়, সে কামিনীকে কষ্ট দেবে না।
— "তুমি যদি সুখী হও, তাহলে সেটাই আমার ভালোবাসা।"
কামিনী বিশ্বাস করতে পারছিল না। সে শেষবার রোহানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদল, তারপর চলে গেল।
চতুর্থ অধ্যায়: পুনর্মিলন নাকি বিদায়?
পাঁচ বছর পর, এক সন্ধ্যায় বৃষ্টির মাঝে রোহান হাঁটছিল। হঠাৎ করে সে দেখে, এক ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে কামিনী!
— "রোহান?"
রোহান তাকিয়ে থাকে। কামিনী আগের মতোই সুন্দর, তবে চোখের কোণে এক ধরনের বিষাদ।
— "তুমি কেমন আছো?"
রোহান হেসে বলল, "বেঁচে আছি। তুমি?"
কামিনী কিছু বলল না। শুধু চোখের জল গড়িয়ে পড়ল।
সে জানায়, তার বিয়ে টেকেনি। স্বামী তাকে সম্মান দিত না, ভালোবাসত না। তাই সে এখন একা।
রোহান এবার আর চুপ করে থাকতে পারল না। সে কামিনীর হাত ধরে বলল,
— "তাহলে চলো, এবার আমরা একসাথে থাকি। কারণ এই ভালোবাসা অপূরণীয়…"
বৃষ্টির মাঝে তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে, আর চারপাশের শহর যেন তাদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে থাকে।
শেষ কথা
ভালোবাসা কখনো কখনো সময়ের পরীক্ষায় পড়ে যায়। কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না। এটি অপেক্ষা করে, ফিরে আসে।