সবাই তো শেখায় কিভাবে অর্থ আয় করতে হয়। এখন আসুন শিখি কিভাবে আয় করা উচিৎ না।
অনেকে ভাবে, টাকা আয় করলেই হলো, পদ্ধতি যাই হোক না কেন! কিন্তু সত্য হলো, খারাপ পথে উপার্জিত অর্থ বেশিদিন টেকে না, বরং বিপদ ডেকে আনে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি যায়। তাই কোন কোন উপায়ে টাকা কামানো উচিত নয়, সেটা বুঝে নেওয়া দরকার।
১. Scam
চেন-মার্কেটিং, ফেক ইনভেস্টমেন্ট, ভুয়া অনলাইন কোর্স—এসব দিয়ে অন্যকে ঠকিয়ে উপার্জন করলে একদিন ধরা পড়তেই হবে। কিছুদিনের জন্য টাকা হাতে এলেও সম্মান আর বিশ্বাস চলে যায়। একবার প্রতারক হিসেবে পরিচিত হলে ভবিষ্যতে কোনো ভালো কাজের সুযোগও পাওয়া যায় না।
২. Fake পণ্য বিক্রি
সস্তা কসমেটিক্সের গায়ে দামি ব্র্যান্ডের স্টিকার লাগিয়ে বিক্রি, আসল বলে নকল ইলেকট্রনিক্স ধরিয়ে দেওয়া, ওষুধে ভেজাল মিশিয়ে বাজারজাত করা—এসব শুধু অন্যের ক্ষতি করে না, নিজের বিবেকও মেরে ফেলে। দীর্ঘমেয়াদে, এসব ব্যবসায়ীর সুনাম শেষ হয়ে যায়, আর একবার আইনি ঝামেলায় পড়লে উঠে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে যায়।
৩. দেশি পণ্যকে বিদেশি বলে চালানো
স্থানীয় বাজার থেকে কমদামে কিছু কিনে সেটাকে "ইন্ডিয়ান", "থাই", বা "অরিজিনাল পাকিস্তানি" বলে বেশি দামে বিক্রি করা খুব সাধারণ প্রবঞ্চনা। এতে মানুষ প্রতারিত হয়, দেশের অর্থনীতিরও ক্ষতি হয়। কেউ যদি বুঝতে পারে, সে যে জিনিসটা কিনেছে, তা আসলে লেবেল চেঞ্জ করা দেশি মাল, তাহলে সে আর কখনো বিশ্বাস করবে না। ফলে ব্যবসায় দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হবেই।
৪. অন্যের টাকা আত্মসাৎ করা
বন্ধু বা আত্মীয়ের কাছ থেকে "ঋণ" নিয়ে আর ফেরত না দেওয়া, অফিসের তহবিল থেকে লুকিয়ে টাকা সরানো, অন্যের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া—এসব সহজ ইনকামের পথ মনে হলেও আসলে ধ্বংসের রাস্তা। অন্যের কষ্টার্জিত টাকা আত্মসাৎ করলে একসময় নিজের জীবনেও এর প্রতিফলন আসে।
৫. হারাম ইনকাম
সুদ, ঘুষ, মাদক ব্যবসা, অসৎ উপায়ে টাকা কামানো—এসব শুধু দুনিয়াতেই নয়, পরকালেও ভয়ংকর পরিণতি বয়ে আনে। অনেকে ভাবে, "সবাই তো করছে," কিন্তু অন্য কেউ ভুল পথে হাঁটলে তাকেও অনুসরণ করতে হবে, এমন কোনো নিয়ম নেই। বরং যারা সৎভাবে চলে, তারা শেষ পর্যন্ত শান্তি পায়।
৬. Shortcut
ভাইরাল ভিডিও বানিয়ে রাতারাতি তারকা হওয়া, স্ক্রিপ্টেড কন্টেন্ট দিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে টাকা কামানো, জুয়া বা ফরেক্সের নামে ধোঁকাবাজি—এসবের শেষে বেশিরভাগ মানুষই ধরা খায়। ইনকাম হতে পারে, কিন্তু সেটা টেকসই হয় না। বরং নিজের যোগ্যতা বাড়িয়ে, সময় নিয়ে শিখে উপার্জন করলে সেটা অনেকদিন স্থায়ী হয়।
৭. Unethical practice
অনেকে ভাবে, বড়লোক হতে হলে নৈতিকতা বিসর্জন দিতেই হবে। তাই চাকরির জন্য ঘুষ দেওয়া, অন্যের ক্রেডিট নিজের বলে চালানো, ফেক সার্টিফিকেট বানিয়ে সুযোগ নেওয়ার মতো কাজ করে। কিন্তু এসব উপায়ে যা অর্জন হয়, তা কোনো না কোনো সময়ে ফাঁস হয়ে যায়, আর তখন সব হারাতে হয়।
টাকা কি আসলেই সুখের চাবিকাঠি?
টাকা দরকার, সেটা ঠিক। কিন্তু সেটা যেন সৎ পথে আসে। হারাম বা প্রতারণার টাকা সাময়িক সুখ দিতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে মানসিক অশান্তি, সম্মানের ক্ষতি, আর ভয়াবহ ফল বয়ে আনে। পরিশ্রম আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে, ধৈর্যের সঙ্গে হালাল পথে আয় করলে সেটাই সবচেয়ে লাভজনক।
সুতরাং, ইনকাম করতে চাইলে বুদ্ধি খাটাও, কিন্তু নীতি বিসর্জন দিও না!