গল্পের নাম: নিজের জন্য
শান্তর স্বপ্ন ছিল ফুটবলার হওয়া। ছোটবেলা থেকেই ফুটবল ছিল তার জীবন। বলের সঙ্গে সময় কাটানোই ছিল তার সবচেয়ে বড় আনন্দ। কিন্তু তার বাবার স্বপ্ন ছিল ভিন্ন—তিনি চেয়েছিলেন শান্ত বড় হয়ে ডাক্তার হবে, কিংবা কোনো ভালো চাকরি করবে। ফুটবলকে কখনোই গুরুত্ব দেননি।
বাবা বলতেন, "ফুটবল খেলে কতজনের ভবিষ্যৎ হয়েছে বলো তো? পড়াশোনা কর, ভালো একটা চাকরি পাও—তবেই জীবন সফল হবে!"
কিন্তু শান্তর জন্য সফলতার সংজ্ঞা ছিল অন্যরকম। তার দিন কাটতো মাঠে ফুটবল নিয়ে, আর রাত কাটতো বইয়ের পাতায়।
স্কুলের প্রতিটি টুর্নামেন্টে সে নিজেকে প্রমাণ করত। তার ড্রিবলিং, পাসিং, আর গোল করার দক্ষতা দেখে সবাই বলত, "এই ছেলে একদিন বড় ফুটবলার হবে!" কিন্তু বাবা এসব পাত্তা দিতেন না।
ক্লাসের বন্ধুরা যখন কোচিং সেন্টারে যেত, শান্ত তখন মাঠে গিয়ে একা একা অনুশীলন করত। ক্লাস এর ফাঁকে লুকিয়ে সে মেসি, রোনালদো আর পেলের জীবন কাহিনি পড়ত। শিখতে চাইত, কীভাবে তারা শূন্য থেকে উঠে এসে বিশ্বকে জয় করেছিল।
তবে সবকিছু এত সহজ ছিল না। বাবা যখন তার ফুটবলে আগ্রহ টের পেলেন, তখন তিনি রাগান্বিত হয়ে বললেন, "এখন থেকে পড়াশোনার বাইরে ফুটবল খেলতে গেলে তোমার আর বাড়ি পেরার দরকার নাই।
শান্ত কষ্ট পেল, কিন্তু হাল ছাড়ল না। রাতের পর রাত চুপচাপ অনুশীলন করত, দিনের পর দিন সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।
একদিন শহরের বড় ক্লাবের ট্রায়ালের ডাক এলো। স্কুলের কোচ নিজে এসে বললেন, "এটাই তোমার সুযোগ, শান্ত! এমন সুযোগ সবার আসে না!"
কিন্তু সমস্যা তখনই এলো—সেদিনই ছিল তার বোর্ড পরীক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন।
বাবা বললেন, "একটা পরীক্ষা নষ্ট করলে তোমার ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে যাবে!"
কোচ বললেন, "একটা সুযোগ নষ্ট করলে তোমার স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে!"
ঘরে এক অদ্ভুত নীরবতা নেমে এলো। শান্ত বাবার চোখের দিকে তাকাল। একসময় নরম স্বরে বলল—
"সারা জীবন তোমাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য কাটিয়ে ছিলাম, বাবা... এবার না হয় নিজের জন্য খেলতে চাই।"
তারপর শান্ত ব্যাগ গুছিয়ে নিলো, আর এক মুহূর্তও দেরি না করে বেরিয়ে গেল। দরজার কাছে এসে থামল না, পেছন ফিরে তাকালও না।
ক্লাবের ট্রায়ালে শান্ত প্রথম দিকে একটু নার্ভাস ছিল। দেশের বড় বড় প্রতিভাবান খেলোয়াড়েরা সেখানে এসেছিল, সবাই নিজেকে প্রমাণ করতে মরিয়া। কিন্তু শান্ত জানত, তার জীবন এখানে নির্ভর করছে।
ট্রায়ালের প্রথম রাউন্ডে সে অসাধারণ ড্রিবলিং দেখাল। দ্বিতীয় রাউন্ডে তার নিখুঁত পাসিং দেখে কোচরা তাকিয়ে রইলেন। আর যখন গোলের পালা এলো, শান্ত এক মুহূর্ত দেরি না করে জোরালো শটে বল জালে পাঠিয়ে দিলো।
ট্রায়ালের শেষে কোচ এসে তার কাঁধে হাত রাখলেন, বললেন, "আমরা তোমাকে চাই। তোমার মধ্যে একজন চ্যাম্পিয়নের প্রতিভা আছে!"
সেদিন শান্ত শুধু ক্লাবে সুযোগ পায়নি, বরং নিজের জন্য নতুন একটা জীবন শুরু করেছিল।
বছর কয়েক পর, শান্ত যখন জাতীয় দলের জার্সি পরে মাঠে নামল, তখন গ্যালারিতে তার বাবা দাঁড়িয়ে ছিলেন, চোখে গর্বের অশ্রু নিয়ে।
শান্ত প্রমাণ করেছিল—"স্বপ্নের পেছনে ছুটলে, একদিন স্বপ্নও তোমার পেছনে ছুটবে।"