১
রাত গভীর। অরণ্য শহরের জানালার পাশে বসে আছে। হাতে একটা পুরোনো চিঠি, চোখের কোণে জমে থাকা জল ঠিকরে পড়ছে না, কিন্তু বুকের ভেতর হাহাকার জমেছে। এই চিঠিটা লিখেছিল রূপা, আজ থেকে পাঁচ বছর আগে।
রূপা ছিল অরণ্যের প্রথম প্রেম। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষেই তাদের দেখা, তারপর ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব, আর একসময় সেটা ভালোবাসায় রূপ নেয়। রূপার হাসিটা ছিল অরণ্যের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য।
কিন্তু জীবনের নিয়ম সব সময় মনের মতো হয় না। রূপার পরিবার বিয়ের জন্য পাত্র ঠিক করে রেখেছিল—একজন সফল ব্যবসায়ী, যার সামাজিক অবস্থান আর অর্থনৈতিক দিক থেকে অরণ্যের সঙ্গে কোনো তুলনাই চলে না।
২
অরণ্য অনেক চেষ্টা করেছিল, রূপার বাবা-মাকে বোঝানোর জন্য। কিন্তু ওরা একটুও নমনীয় হয়নি। রূপা নিজেও হাল ছেড়ে দিয়েছিল। তার পরিবার ছিল কঠোর, আর সে কখনোই তাদের বিরুদ্ধে যেতে পারেনি।
শেষবার যখন দেখা হয়েছিল, রূপা শুধু বলেছিল,
— "আমার যদি সাহস থাকতো, তাহলে হয়তো তোমার হাত ধরেই সারাজীবন কাটিয়ে দিতাম। কিন্তু আমি পারলাম না... ক্ষমা করো আমাকে।"
সে চলে গিয়েছিল। অরণ্য একা দাঁড়িয়ে ছিল সেই সন্ধ্যায়, নিঃস্তব্ধ আর পরাজিত।
৩
পাঁচ বছর পর, আজকের এই রাতে, অরণ্য জানালার পাশে বসে সেই চিঠিটা পড়ে যাচ্ছে। চিঠির প্রতিটি শব্দ যেন তার হৃদয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
“অরণ্য,
আমি জানি, আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু বিশ্বাস করো, তোমাকে ভালোবেসেই দূরে চলে গেছি। যদি কখনো আমাদের পথ আবার মিলে যায়, তবে হয়তো সব বাধা পেরিয়ে তোমার হাত ধরতে পারবো। কিন্তু যদি না পাই, তাহলে শুধু এটাই মনে রেখো—আমি সবসময় তোমাকে ভালোবেসেছি…!”
অরণ্য জানে, সেই পথ আর কখনো মিলবে না। রূপা এখন অন্য কারও স্ত্রী, অন্য কারও সংসার তার বাস্তবতা।
বাইরে আকাশে কালো মেঘ জমেছে। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। হয়তো আজ রাতেও বৃষ্টি হবে—ঠিক সেদিনের মতো, যেদিন রূপা তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল…