একদিন সকালে গাঁয়ের এক মুরগি (নাম তার — "বিচি আপা") ঘোষণা দিলো,
— "আমার বিয়ে হবে! এবং বিয়েতে পুরো বন এবং গ্রামের পাখিদের নিমন্ত্রণ!"
গোটা বন হইচই করে উঠলো।
চড়ুই বলল,
— "কে বর?"
বিচি আপা গর্বের সঙ্গে বলল,
— "আমার বর হলো মোরগ সাহেব, যিনি দিনে তিনবার 'কুক্কুড়ুকু' বলেন।"
কাক বলল,
— "আমি তো দিনে ছয়বার কা-কা করি। আমি কি কম যোগ্য?"
বিচি আপা বলল,
— "আপনার কা-কা শোনার পর আমাদের ডিমও ফাটে না! তাই না!"
গোটা বন হাসিতে ফেটে পড়ল।
বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হলো।
বাদামগাছ থেকে বাদাম এনে সাজানো হলো,
গুড়ের হাঁড়ি এল মাটির হাঁড়িতে,
আর সবার জন্য দাওয়াতের কার্ড ছাপা হলো কলাপাতায়।
সেই কার্ডে লেখা ছিল:
"আমার বিয়ে, তোমাদের সঙ্গী হয়ে খেতে হবে ভুরিভোজ।
মেনুতে আছে ভাত, ডাল, ঘাসের ভর্তা এবং কেঁচো ভাজি!"
বিড়াল মিয়া কার্ড দেখে জোরে হেসে বলল,
— "ঘাসের ভর্তা! বাহ! শাকাহারি বিয়ে!"
অবশেষে বিয়ের দিন এল।
বনভোজন শুরু হলো। বিয়ের আসরে হাঁস এসে বলল,
— "আমাকে তো নিমন্ত্রণ পাঠাওনি!"
বিচি আপা বলল,
— "পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু হয়তো ডাকপাখি তোমার কাছে পৌঁছায়নি।"
ডাকপাখি লজ্জা পেয়ে বলল,
— "আমি না… পোষ্টমাস্টার বকের সঙ্গে গল্পে ব্যস্ত ছিলাম।"
মজার ঘটনা হলো বর মোরগ সাহেব এসে বলল,
— "আমার বিয়ের জন্য তো নতুন পালক চাই!"
পাহাড়ি ময়ূর বলল,
— "আমার পালক দিয়ে দেব? শর্ত একটাই — বিয়েতে নাচতে হবে!"
বিচি আপা বলল,
— "নাচ তো বরই করবে।"
মোরগ সাহেব পালক পরে নাচতে গেল। কিন্তু মঞ্চে গিয়ে সেই পালক গায়ে না টিকিয়ে মোরগ এমনভাবে ঘুরতে লাগল যে শেষে ও নিজের পায়ে নিজেই পড়ে গেল!
সবাই হেসে গড়াগড়ি।
এবার খাওয়ার পালা।
খাবারের পাতে ঘাসের ভর্তা দেখে বক বলল,
— "আমি তো শুধু মাছ খাই!"
বিচি আপা রেগে বলল,
— "আজ থেকে শাকাহারি হও। নতুন জীবন শুরু করো!"
বক মুখ চুপ করে বসে রইল।
সবচেয়ে মজার ঘটনা ঘটল যখন হাঁস, কবুতর এবং শালিক একসাথে লাড্ডু খেতে গিয়ে লাড্ডুটা গড়িয়ে পুকুরে পড়ল।
তারা তিনজন একসাথে ঝাঁপ দিল। তারপর মাথা বের করে হাঁস বলল,
— "লাড্ডুটা তো এক কইলগা (কই মাছ) খেয়ে ফেলল!"
মাছটা লাফিয়ে উঠে বলল,
— "আমিও বিয়েতে নিমন্ত্রণ পেয়েছি, তাই না?"
সবাই হেসে জলের ওপর ডানা ঝাপটাতে লাগল।
বিয়ের শেষে উপহার দেওয়া হলো:
কাককে দেওয়া হলো কালো কালি, যেন ও চিঠি লিখতে পারে।
কবুতরকে দেওয়া হলো চিঠি, যাতে সে প্রেমপত্র পৌঁছে দিতে পারে।
হাঁসকে দেওয়া হলো স্যান্ডেল। হাঁস বলল,
— "আমি জলে হাঁটি, স্যান্ডেলের দরকার কী?"
বিচি আপা হেসে বলল,
— "শুধু ফ্যাশনের জন্য!"
বিয়ের রাতে বর-কনের পাশে গিয়ে দাঁড়াল টিয়া।
টিয়া বলল,
— "যদি বিবাহ-পরবর্তী ঝগড়া শুরু হয়, আমায় ডেকো। আমি দুই পক্ষের হয়ে কথা বলব!"
গোটা বন হাসতে হাসতে লাফাল।
পরদিন সকালেই বনজঙ্গলের পত্রিকায় শিরোনাম বের হলো:
"বনের ইতিহাসে প্রথম পাখির বিয়ে যেখানে বিয়ের ভোজে লাড্ডু খেল মাছ!"
এখনো পর্যন্ত সেই গল্প বনজঙ্গলের গল্পের আসরে চলে আসে। আর যখনই বনের কেউ বিয়ে করতে যায়, সবাই জিজ্ঞাসা করে:
— "লাড্ডু থাকবে তো?"
গল্পের শিক্ষা:
বিয়ে মানে শুধু অনুষ্ঠান না; তা মজা, খাওয়া আর হাসির সুন্দর স্মৃতি।
91
View