রোদেলা দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের এক কোণে বসে আছে রাফি। তার পাশে একটা খোলা ডায়েরি, তাতে কিছু এলোমেলো শব্দ ছড়ানো। চোখ দুটো ক্লান্ত, কিন্তু মনের ভেতর এক ঝড় বইছে। আজ তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিন।
দুই বছর ধরে রাফি আর নীলা ছিল একে অপরের ছায়াসঙ্গী। পরিচয়টা হয়েছিল লাইব্রেরিতে, একটা পুরোনো বইয়ের পৃষ্ঠা ওল্টাতে গিয়ে। নীলা তখন একগুচ্ছ কবিতা লিখছিল, রাফি পাশে বসে চুপচাপ দেখছিল। এরপর তাদের বন্ধুত্ব গাঢ় হলো, ভালোবাসার রঙ লাগলো।
নীলা ছিল স্বপ্নবাজ মেয়ে, তার ইচ্ছে ছিল বিদেশে পড়তে যাবে, বড় কিছু করবে। রাফি চেয়েছিল নীলাকে ধরে রাখতে, কিন্তু সে জানত ভালোবাসা কখনও শেকল হতে পারে না। তবু একদিন নীলাকে বলে ফেলেছিল,
— "নীলা, তুমি কি আমায় রেখে যেতে পারবে?"
নীলা মৃদু হাসল, তারপর বলল,
— "ভালোবাসা মানে তো বাঁধন নয় রাফি, ভালোবাসা মানে মুক্তি। আমি যদি আমার স্বপ্ন ছেড়ে দেই, তাহলে হয়তো আমি আর আমি থাকবো না।"
রাফি বোঝে, কিন্তু মেনে নিতে পারে না। এভাবে কেটেছিল কিছু মাস। তারপর একদিন নীলা জানাল, তার ভিসা হয়ে গেছে। তিন সপ্তাহ পর সে উড়াল দেবে।
সেদিন সন্ধ্যায় তারা একসঙ্গে শহরের সবচেয়ে উঁচু ব্রিজে দাঁড়িয়ে ছিল। বাতাসে চুল উড়ছিল, রাফির চোখে পানি জমছিল।
— "তুমি কি একবারও ভাবলে না আমি কী করব?"
— "আমি তোমাকে আমার ভেতর নিয়ে যাচ্ছি রাফি, তুমি আমার প্রতিটা কবিতায় থাকবে, প্রতিটা স্বপ্নে থাকবে।"
কিন্তু রাফির মনে হচ্ছিল, কিছু একটার অপূরণীয় অভাব হয়ে যাবে।
নীলা চলে গেলো। রাফি প্রতিদিন তার পুরনো বার্তাগুলো পড়ে, পুরনো স্মৃতিগুলো মনে করে। একদিন সে দেখল, নীলার পাঠানো শেষ চিঠিটা পড়তে পড়তে তার চোখে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
নীলা লিখেছিল,
"রাফি, তুমি যদি সত্যি আমাকে ভালোবাসো, তবে আমার স্বপ্নগুলোকে ভালোবেসো। কারণ সেখানেই আমি আছি।"
রাফি জানে, নীলাকে সে হারিয়েছে, কিন্তু ভালোবাসাটা হারায়নি। সেই ভালোবাসা আজও তার ডায়েরির পাতায় বেঁচে আছে, নীল আকাশের নিচে ঘুরে বেড়াচ্ছে।