আলোচনার পরিবেশটা ভারী হয়ে গিয়েছিল। কেউ আর স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারছিল না। পরিস্থিতি এমন একটা জায়গায় চলে গিয়েছিল, যেখানে একদিকে ছিল ভালোবাসার শক্তি, আর অন্যদিকে সমাজের বাস্তবতা।
শেষ পর্যন্ত তৃষ্ণার বাবা কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে বললেন, "আচ্ছা, আজকের মতো এখানেই শেষ করি। পরে আবার বসে কথা বলা যাবে।"
এই কথার পর আর কারও কিছু বলার থাকল না। সবাই ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো। বিদায়ের সময়ও পরিবেশটা স্বাভাবিক ছিল না, এক ধরনের চাপা অস্বস্তি চারদিকে ছড়িয়ে ছিল।
তৃষ্ণার ঘরে:
সন্ধ্যার পর তৃষ্ণা চুপচাপ নিজের ঘরে বসে ছিল। মনের মধ্যে কেমন একটা শূন্যতা কাজ করছিল। হঠাৎ তার মা এসে পাশে বসলেন।
মা নরম কণ্ঠে বললেন, "মা, কিচ্ছু মনে করিস না। তোর কাকা আসলে তোকে নিয়েই চিন্তিত।"
তৃষ্ণা মৃদু হাসল, কিন্তু চোখের ভেতরের কষ্টটা চেপে রাখার চেষ্টা করলো। "আমি বুঝি, মা। কিন্তু কখনো কখনো বেশি চিন্তা ভালোবাসার থেকেও বেশি কষ্ট দেয়।"
তার মা গভীরভাবে মেয়ের দিকে তাকালেন। "তুই কি কষ্ট পেলি?"
তৃষ্ণা মাথা নাড়িয়ে বলল, "না মা, আমি কিছু মনে করিনি।"
কিন্তু তার কণ্ঠের কম্পন বলে দিচ্ছিল, কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয়।
আরিয়ান বুঝতে পারল…
অন্যদিকে, আরিয়ান গাড়ির জানালার বাইরে চুপচাপ তাকিয়ে ছিল। আজকের আলোচনার পর তার মনের মধ্যে হাজারটা চিন্তা ঘুরছিল। সে সবসময় জানতো, সমাজের কিছু বাস্তবতা আছে, কিন্তু আজ প্রথমবারের মতো সে সত্যিকার অর্থে টের পেল যে শুধু ভালোবাসা থাকলেই হয় না, বাস্তবতাকেও জয় করতে হয়।
তৃষ্ণার পরিবার তাদের ভালোবাসার প্রতি সন্দেহ করছে না, কিন্তু তারা কি সত্যিই বিশ্বাস করতে পারছে যে সে তৃষ্ণাকে সারাজীবন সুখে রাখতে পারবে?
সেই রাতেই আরিয়ান নিজের মনে প্রতিজ্ঞা করল—"আমি নিজেকে এমন জায়গায় নিয়ে যাবো, যেখানে কেউ আর কখনো আমার ভালোবাসার মূল্য নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না।"
কিন্তু তৃষ্ণা কি বুঝতে পারবে যে সে একা লড়াই করতে চায় না? যে সে শুধু সফল হওয়ার জন্য নয়, বরং তৃষ্ণাকে হারানোর ভয়েই আরও শক্তিশালী হতে চাইছে?
চলবে......