২৬ মার্চ ২০২৫ এর মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের সরকার প্রণীত বিশেষ ক্রোড়পত্র পড়লাম। রাষ্ট্রপতির স্বাধীনতা শুরু হয়েছে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। এরপর দীর্ঘ ন'মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যম চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। এরপর মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদদের সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ। শেষে স্বাধীনতার অপূর্ণ স্বপ্নগুলো পূরণের জন্য জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তরুণ প্রজন্মের রক্তের ঋণ শোধ করবার পবিত্র কর্তব্য স্মরণ।
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, স্বাধীনতা অর্জন ছিল আমাদের আত্মমর্যাদা ও অস্তিত্ব রক্ষা এবং অধিকার আদায়ের দীর্ঘ লড়ায় সংগ্রামের চূড়ান্ত ধাপ। প্রধান উপদেষ্টাও সশ্রদ্ধ চিত্তে মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের স্মরণ করেছেন। অতঃপর গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অবদানে স্বৈরাচারের রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত হয়েছে দেশ এমনটা উল্লেখ করেছেন।
মৎস উপদেষ্টা ফরিদা আখতার 'স্বাধীনতা দিবস: অন্য অনুভূতি' শীর্ষক প্রধান লেখায় ওই একইরকমভাবে ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বরেরর বিজয় তারপর জুলাই আন্দোলনের নানা প্রসঙ্গ বর্ণনা করতে গিয়ে শেখ হাসিনার রাজাকার গালির প্রতিক্রিয়ায় ঢাবি ও ইডেন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামার কথা বলেছেন।
দ্বিতীয় নিবন্ধটি লিখেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম। তাঁর লেখার শিরোনাম, 'স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মুক্তি'। তিনি স্বাধীনতা এক মনোহর ধারণা দিয়ে শুরু করেছেন। শেষ করেছেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে 'স্বাধীনতা' ও 'সার্বভৌমত্বের' মতো বিমূর্ত ধারণাকে তুলনামূলকভাবে মূর্তরূপে উপভোগ করার সামষ্টিক শর্ত তৈরি করতে পারার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। লেখাটির মাঝখানে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, মুক্তি নিয়ে তত্ত্বগত আলোচনা করেছেন।
ক্রোড়পত্রে হাসান রোবায়েত ও রুম্মানা জান্নাত কবিতা লিখেছেন। 'স্বাধীনতার মোনাজাত' ও ' মুক্তির সিলসিলা' কবিতা দুটির বিষয়বস্তুও সাধারণ পাঠকের বোধগম্যের বাইরে।
মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান, সামরিক শক্তিকে উজ্জীবিত করে মুক্তিকামী মানুষকে সমরকেন্দ্রিক যুদ্ধাবস্থায় নিয়ে যেতে শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতার আলাপ দিতে গেলে অনিবার্যভাবে এই দুই ব্যক্তিত্বের নাম আপনাকে নিতে হবেই। বিশেষ ক্রোড়পত্রে এদের নামনিশানা নাই।
এমনকি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সুত্রধর মওলানা ভাসানীর গণ আন্দোলনের কথাও ক্রোড়পত্রের কোথাও নেই। যুদ্ধের ব্যাকগ্রাউন্ড, প্রবাসী সরকার গঠন, ৩০ লাখ শহীদ, ২ লাখ মা বোনের সম্ভ্রম হারানো কিংবা কোটি মানুষের কারুণ্যভরা শরণার্থী জীবনের নিরেট ইতিহাস অন্তর্বর্তী সরকারের বয়ান থেকে উধাও হয়ে গেছে। সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ'র ছবি ছাপা হলেও তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তাদের নামনিশানা পেলাম না। জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটা কথাও নাই!
বিগত ১৫ বছর দেখেছি অন্যদের অবদানকে একেবারে নাই করে দিয়ে এক ব্যক্তির আরোপিত গুণকীর্তন। হাজার বছরের নিরিখে পারিবারিক ডাইনেস্টির বাহুল্য বিবরণ। আর এ বছর দেখলাম যথোচিত ইতিহাসকেও পাশ কাটানো হলো।
তাহলে এত ভাসা ভাসা কি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস? এটাই কি গণ-অভ্যুত্থানে পাওয়া নতুন সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আনকোরা ন্যারেটিভ? একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হওয়া কি আপনাদের বড় কোনো ব্যথার কারণ?
লেখক: সাংবাদিক
২৬ মার্চ ২০২৫