গল্প : ভুতের কবলে বিস্তৃত গল্প
লেখক : T H Rifat sorkar
এক বৃষ্টির রাতে আকাশে মেঘে ঢাকা এবং প্রলয়ংকরী বাতাসে পরিবেশের আকাশটা পুরোপুরি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল। অর্ণব, একজন তরুণ এবং সাহসী মানুষ, এক নির্জন গ্রামে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। গ্রামটি ছিল শহরের অনেক দূরে, একেবারে একাকী, যেন সময়ের ধারাবাহিকতায় আটকে আছে। গ্রামটির নাম ছিল "বিষণ্ণপুর", যেখানে মানুষ আর প্রকৃতির মাঝে মিশে গিয়েছিল এক অদ্ভুত অন্ধকারের মধ্যে। লোকেরা বলত, এখানে কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটে এবং এক পুরনো ভূতবাড়ি আছে যা বহু বছর ধরে খালি পড়ে আছে। সেখানে কোনো এক রাতের সময় অদ্ভুত ঘটনার পর, গ্রামের লোকেরা আর সেখানে যেত না। অর্ণব, যিনি সাহসী এবং রহস্যে আগ্রহী, ঠিক করল যে সে সেই ভূতবাড়ি দেখবে।
গ্রামে পৌঁছানোর পর, সে দেখতে পেল যে সবকিছু নির্জন, যেন কোথাও কোনো প্রাণী নেই। কেবল গাছগাছালি আর বাতাসের হালকা সাঁই সাঁই শব্দ শোনা যাচ্ছিল। সে জানত যে ভূতবাড়িটা অনেক দূরে, কিন্তু সে এক মুহূর্তের জন্যও ভয় পায়নি। একের পর এক তীব্র বৃষ্টি তার শরীর ভিজিয়ে ফেললেও অর্ণব হাল ছাড়ল না, সে বাড়িটির দিকে এগিয়ে চলল। অবশেষে, একটা অন্ধকার পথ ধরে, তার সামনে উঠে এল সেই প্রাচীন ভূতবাড়ি।
ভূতবাড়িটা দেখেই অর্ণবের হৃদয়ে একটা অদ্ভুত শূন্যতা অনুভব হলো। বাড়িটি পুরনো এবং পুরোপুরি অযত্নে পড়ে ছিল। দেয়ালগুলোর উপর মেঝে থেকে উঠে আসা ধূসর পুঁতে থাকা প্যাঁচ, দরজার বাঁটের হালকা শিকল, আর জানালার ফাঁকে ফাঁকে মেঘের মতো অন্ধকার ছায়া—এ সবই যেন এক ভয়ঙ্কর অনুভূতির সৃষ্টি করছিল। অর্ণব এক পা এগিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করল। বাড়ির দরজা খোলার সময় এক অদ্ভুত শব্দ হলো, যেন সেই বাড়ি তাকে স্বাগত জানাচ্ছিল।
ভেতরে ঢুকে অর্ণব অনুভব করল, চারপাশে যেন এক ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। কোথাও কোনো প্রাণী ছিল না, শুধু পুরনো আসবাবপত্র এবং মেঝের উপর জমে থাকা ধুলো ছিল। সে বাড়ির ভিতরের প্রতিটি ঘর পরীক্ষা করতে লাগল, কিন্তু কোনো অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পেল না। তবে সে লক্ষ্য করল, কিছু ছবি দেয়ালে ঝুলছে—সবগুলো ছবির মধ্যে কিছু অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য ছিল। ছবির মধ্যে কিছু লোকের চোখ সরাসরি অর্ণবের দিকে তাকিয়ে ছিল, তবে তারা আর আগের মতো মানুষের মতো মনে হচ্ছিল না। যেন ছবি গুলি জীবন্ত হয়ে উঠেছিল।
হঠাৎ, একটা তীব্র আওয়াজ তার কানে এলো। "তুমি এখানে কী করতে এসেছ?" আওয়াজটা আসছিল কোথা থেকে, বুঝতে পারছিল না। অর্ণব চমকে উঠল, তার মন বলছিল যে সে একাকী নয়। সে আরও এক পা এগিয়ে গেল, কিন্তু ঘরটা যেন আরও অন্ধকার হয়ে উঠছিল। এবার তাকে লাগছিল, যেন কোনো কিছু তার চারপাশে ঘুরছে, কিন্তু তার কোনো অস্তিত্ব সে দেখতে পাচ্ছিল না।
এক মুহূর্ত পর, একটি ধূসর ছায়া অর্ণবের সামনে দাঁড়াল। সেই ছায়াটি একদম নীরব, যেন বাতাসের মতো পলকে এসে উপস্থিত হয়েছে। অর্ণবের গা শিরশির করে উঠল। সে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু তার শরীর যেন থেমে গেল। সে কিছুই করতে পারছিল না। সেই ছায়াটি ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে অর্ণবের চোখের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, "তুমি কেন এসেছো?"
অর্ণব কিছু না বলে দৌড়ানোর চেষ্টা করল, কিন্তু বাড়ির প্রতিটি দরজা এবং জানালা বন্ধ হয়ে যেতে লাগল। সে বুঝতে পারল, বাড়ি তার দিকে এগিয়ে আসছে, আর কোনো উপায় নেই পালানোর। সে ভয় পেয়ে গিয়ে আবার ছায়াটির দিকে তাকাল। এবার ছায়াটি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল, আর অর্ণব দেখে, এটা এক নারীর চেহারা—একটি মৃত, অশরীরী নারী। তার মুখে ছিল এক ভয়ানক হাসি এবং তার চোখে ছিল অদ্ভুত শূন্যতা। সে বলল, "তুমি যখন একাই চলে আসো, তখন জানোই না আমি কখন তোমাকে ছেড়ে দেব।"