এরপর থেকে এমন ঘটনা আরও কয়েকবার ঘটতে লাগল। যখনই দুই পরিবার একসাথে বসে বিয়ের বিষয়ে কথা বলতে চাইল, তখনই তৃষ্ণার কাকা কিংবা দূরসম্পর্কের কেউ না কেউ এমন কিছু বলে বসত, যা পুরো পরিবেশটাকে ভারী করে তুলত।
একদিন, আরিয়ান তৃষ্ণার বাড়িতে এলো। দুই পরিবার আবার বসেছে, এবার দিন স্থির করার জন্য।
"আরিয়ান তো এখন সফল, কিন্তু ব্যবসার দুনিয়ায় তো হাজার রকমের ওঠা-নামা আছে। আজ আছো, কাল যদি না থাকো?" তৃষ্ণার কাকা কথাটা বলতেই পুরো পরিবেশ থমথমে হয়ে গেল।
আরিয়ান এবার নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। এতদিন সে শান্ত থাকার চেষ্টা করেছে, কিন্তু আজ আর পারল না।
"আপনারা কি আসলেই মনে করেন আমি ব্যর্থ হবো?" তার কণ্ঠ আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন শোনালো।
তৃষ্ণার কাকা একটু অপ্রস্তুত হলেও বললেন, "না, কিন্তু আমরা চাইছি মেয়েটার ভবিষ্যৎ নিরাপদ হোক। এটা আমাদের অধিকার।"
আরিয়ান এবার চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়ালো। তার চোখ জ্বলজ্বল করছিল, যেন ভেতরের আগুন বাইরে বেরিয়ে আসার অপেক্ষায়।
"আপনারা বারবার আমাকে প্রমাণ দিতে বলছেন। আমি কি শুধু আপনাদের সন্তুষ্ট করার জন্য বেঁচে আছি? আমি কি ভালোবাসার জন্য কিছুই করিনি?"
তার এই আচরণে সবাই হতভম্ব হয়ে গেল। আরিয়ান সাধারণত এতটা উত্তেজিত হয় না।
তৃষ্ণা পুরো সময়টাই চুপচাপ বসে ছিল, কিন্তু এবার সে অবাক হয়ে আরিয়ানের দিকে তাকাল। তার কপালে ভাঁজ পড়ল।
"আরিয়ান, তুমি এত রেগে যাচ্ছ কেন?"
আরিয়ান এবার তৃষ্ণার দিকে তাকাল, তার চোখে এক ধরনের অভিমান। "আমি কি রাগবো না? বারবার আমাকে ছোট করা হচ্ছে, তুমি কিছু বলছ না!"
তৃষ্ণা এবার ধীর কণ্ঠে বলল, "আমার পরিবার শুধু চিন্তা করছে, যেমন তোমার পরিবারও করে।"
এই কথা শুনে আরিয়ান যেন আরও ক্ষেপে গেল। "তোমার পরিবার তো শুধু চিন্তা করছে না, তারা আমার প্রতি সন্দেহ করছে! তুমি এটা বুঝছ না, তাই না?"
তৃষ্ণা এবার সত্যিই কষ্ট পেল। এতদিন ধরে সে আরিয়ানের সব রাগ, কষ্ট বুঝতে চেয়েছে, কিন্তু আজ সে যেন এক নতুন আরিয়ানকে দেখছে—একজন অভিমানী, রাগান্বিত, আর অস্থির মানুষ।
সে গভীরভাবে তাকিয়ে বলল, "তাহলে তুমি কি বলছ? আমাদের বিয়েটাই ভুল সিদ্ধান্ত?"
আরিয়ান হতভম্ব হয়ে গেল।
তৃষ্ণা এবার নরম কিন্তু দৃঢ় গলায় বলল, "তোমার পরিবার থেকেও তো অনেক কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু আমি তো কখনো এসব নিয়ে কিছু বলিনি। তাহলে তুমি কেন এত কিছু নিয়ে ভাবছ? আমাদের বিয়ে হচ্ছে, এতকিছুর পরেও তুমি কি খুশি নও? নাকি তুমি সবকিছু ভুলে কেবল এইসব কথাগুলো নিয়েই পড়ে থাকতে চাও?"
তার কণ্ঠে গভীর কষ্ট ছিল।
আরিয়ান এবার স্তব্ধ হয়ে গেল। সে কখনো ভাবেনি যে তার রাগ, তার উত্তেজনা তৃষ্ণাকে এতটা কষ্ট দেবে। সে এতদিন ধরে লড়াই করেছে শুধু তৃষ্ণার জন্য, অথচ আজ সে বুঝতে পারল, এই লড়াইয়ে সে একাই এগিয়ে যাচ্ছে, তৃষ্ণাকে না বুঝেই।
সবার সামনে নীরবতা নেমে এলো।
তৃষ্ণা এবার আস্তে করে বলল, "আমি জানি তুমি অনেক কষ্ট করেছ, কিন্তু যদি তোমার ভালোবাসায় আত্মবিশ্বাস থাকত, তাহলে তুমি এভাবে রেগে যেতে না।"
আরিয়ান চুপ হয়ে রইল।
আজ তৃষ্ণার কণ্ঠে এক অন্যরকম সত্য ফুটে উঠেছিল, যা আরিয়ানকে ভাবিয়ে তুলল।
চলবে.....