যিনি লেখক অথবা কবি কিংবা ঔপন্যাসিক, তিনি কেন, কিভাবে, কি কারণে এবং হয়ত কোন গরজ থেইকা লেখেন সেইটা তার নিজস্ব অনুসন্ধিৎসা হওয়াটা জরুরি। এই জরুরত আমি অনুধাবন করতেছি, বিষয়টা মাত্র অতটুকু না। আমি নিশ্চিত যেহেতু আমি এতখানি ভাবছি, তার মানে আরও বহু কবি-লেখক এই ভাবনাটুকু অথবা আরও গভীরে ভাইবা গেছেন এবং আরও অনেকে ভাবতেছেন। এই ভাবনা ভাইবা কি হইবো? ফেসবুকের রিচ বাড়বো? নাকি দুইশ কপি বই বেশি বেচা হইবো? হয়ত কোনটাই না। তবে, হয়ত, লেখাটা লেখা যাইবো। লেখাটা হয়ত তার মোকামের পথে অন্তত যাত্রাটা শুরু করতে পারবো। এই মোকামটা কোথায় সেইটা গ্রস প্রক্সিমিটিতে হইলেও ভাইবা রাখাটা জরুরি মনে করি। সেই মোকামে হইতে পারে একজন স্বপ্নবাজ লেখক কোনদিন পৌঁছাইতে পারলেন না, কিন্তু তার যাত্রাটা রয়া যাইবো তার লেখা লাইনের ফাঁকে ফাঁকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের লেখা, বইমেলার বইয়ের লেখা সাধারণ্যে সাহিত্য হয়া ওঠার দৌড় দৌড়াইতে বাধ্য না। বইমেলায় রান্নার রেসিপির সাথে তিনটা পুতুপুতু প্রেমের কবিতা আর একটা ইরেটিক থ্রিলার গল্প দিয়া লোকে বই বানায়া ফেলতে পারে। এবং সেই বই দুই চার হাজার কপি বেচাবিক্রিও হয়া যাইতে পারে। কারণ সেই বইয়ের সাহিত্যমান নিয়া আলোচনা হওয়াটা ইনএভিটেবল ঘটনা না। সেই বইয়ের বাণিজ্যটাই প্রথম আলাপ, তারপর অন্য সব আলাপ। ফেসবুকের লেখালেখিতে কয়েকদল কবি-লেখক দেখতে পাওয়া যায়। একদল আছে ভাল লেখেন কিন্তু তারা এলগরিদম হ্যাক কইরা ভাইরাল হইবার চায়। একদল আছে তারা নিজের মত লেইখা যাইতে চায়, রিচ নিয়া বদার করে না। একদল আছে ভাল অথবা যেমনই লেখেন না কেন, তারা রিডাররে রিচ কইরা পপুলার হইতে চায়, মানে নিজের ভাবনার চাইতে বেশি রিডারের ট্রেন্ডিং বিহেভিয়ার প্যাটার্ন ফলো কইরা থাকেন। তো সবগুলা দলের থেইকা আল্টিমেট অবজার্ভেশন হইল, আপনে যদি ভাল লেখা না চিনেন তাইলে আপনে ভাল লিখতে পারবেন না। আর দিন শেষে লেখা ভাল না হইলে রিচ পাইবেন না, পপুলারিটি পাইবেন না, শুধু লেইখা যাওয়াতেও লাভ হইবো না। তবে হ্যাঁ, আরেকটা দল আছে যারা কিছু পেটোয়া পান্টুদের তেলবাজিতে তুষ্ট হয়া দিন গুজরান করতে চান, “আহা! আমি যে এত মাল লেখক সেইটা তো বাকি দুনিয়া মোটে মানলোই না, সব শালা জেলাসিত!”
যাই হোক আসল কথায় আসি, আপনি কেন, কিভাবে, কি কারণে এবং হয়ত কোন গরজ থেইকা লেখেন? সেইটা আপনি ভাইবা বাইর করবেন। সেইটা আপনার কাজ, যদি প্রয়োজন মনে করেন। তবে আপনের ভাবনা এবং লক্ষ্য হিসাবে আপনে নিজেই ভাল লেখা কারে বলতে চান, সেইটা ফিক্স করেন, জরুরি কাজ। আজকে আপনে যা লিখা ফেসবুকে দিতাছেন অথবা বই ছাপাইতাছেন হাতেগোনা মানুষদের বাহবা পাওয়ার জন্য, কালকে লোকে সেই লেখাগুলা সম্পূর্ণ নির্মোহ জায়গার থেইকা পইড়া খারিজ করবো নাকি এক্সেপ্ট করবো - সেইটা ডিসাইড করবো। আজকে আপনে আত্মতুষ্টিতে আহ্লাদিত হন, কালকে ঠিকই অপাঙক্তেয় হয়া যাবেন। এই বিষয়টারে সাহিত্যের সাথে প্রতারনাও বলতে পারেন। শুধুমাত্র দুই কলম লেইখা ছাপানোর সুযোগ ছিল বইলা মন মর্জি লেইখা বই না বানায়া আপনার প্রকৃত শক্তি কোথায় সেইটা বোঝার চেষ্টা সব লেখকদের করা ফরজ, আমি মনে করি। সেই শক্তিটারে শাণিত করেন। কে বলতে পারে, পাঁচ ছয় বছর পরে আপনের লেখা কোন উচ্চতায় পৌঁছাইবো? গোড়া শক্ত করলে পলকা গাছও ঝড়ের তোড় সামলায় যাইতে পারে। গাছ বড় আর উচা হওয়ার চাইতে শক্তিশালী হওয়া বেশি জরুরি। আপনের লেখালেখির গাছের প্রতি যত্নবান হোন। পৃথিবী প্রতি সেকেন্ডে যাকে প্রেরণা দিতে থাকে তার নাম, সৃষ্টি।