(ইসলামের ইতিহাসে প্রথম খলিফা হযরত আবুবক ( রাঃ), এবং সর্বশেষ শেষ স্বাধীন সুলতান খলিফা হযরত পায়িতাথ আব্দুল হামিদ(রহঃ) ও ইসলামের ইতিহাস)
(প্রথম অংশের পর দ্বিতীয় অংশ ),
উসমানীয় সাম্রাজ্যের, সুলতানদের পূর্বপুরুষ তুর্কিরা ছিলেন মধ্য এশিয়ার বাসিন্দা। তারা ছিলেন অনেকটা যাযাবর গোষ্ঠী।সেখান থেকে ১০ম শতকে তারা পার্সিয়া বা আধুনিক ইরানের ভেতর দিয়ে নিজেদের বসবাসের উপযোগী জমির সন্ধানে অভিবাসন শুরু করেন,('ওসমান'স ড্রিম' বইয়ে গবেষক ও ইতিহাসবিদ ক্যারোলিন ফিঙ্কেল অটোমান সাম্রাজের প্রতিষ্ঠা থেকে পতন পর্যন্ত ঘটনাবলীর বিস্তৃত আকারে বর্ণনা করেছেন। ১১শ শতকের দিকে তারা আর্মেনিয়া এবং আনাতোলিয়ার ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করতে থাকেন। এবং তৎকালীন সেই সমস্ত এলাকা ছিল বাইজেন্টাইন রাজত্বের অধীনে, অবশ্য প্রাচীন রোমান সেই শাসকদের জৌলুশ ততদিনে কমতে শুরু করেছে। ইতিহাসবিদদের তথ্য অনুসারে, সেখানে একটি সালতানাত বা রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে সেলজুক রাজবংশ। তাদের পক্ষে সীমান্ত এলাকায় লড়াই করে ভূমি বরাদ্দ পেয়েছিলেন এরকম একটি অভিবাসন গোত্রপতি কাইর গোত্রের প্রধান আর্তগুল গাজী যা পরবর্তীতে অটোম্যান বেলিক নামে পরিচিতি পেয়েছেন। সম্প্রতি আমাদের দেশের একটি চ্যানেলে দিরিলিস আর্তগোল গাজী শিরোনামে উনার জীবন কাহিনী অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্র ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছে, যা জনপ্রিয়তা ও পেয়েছে। তাছাড়া ইতিহাসবিদ স্যার এডওয়ার্ড শেফার্ড ক্রেসির 'হিস্টোরি অফ দি অটোমান টার্কস, ফ্রম দি বিগেনিং অফ দেয়ার এমপায়ার টু দি প্রেজেন্ট টাইম' বইতে সেই সময়কার ঘটনাবলীর বিস্তারিত বর্ণনা আছে।তুরস্কের ভাষায় বেলিক মানে, " ছোট অধিপতি", যারা নিজেদের গোত্র বা বিশেষ এলাকা শাসন করতেন। সেলজুক নিয়মে এসব বেলিক প্রধানদের বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষার নিশ্চয়তা দিতেন সুলতান এবং সেই বদলে প্রয়োজনে তার পক্ষে যুদ্ধ করতে হতো, তবে তারা নিজেদের রীতিনীতি মেনে চলতে কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। যেহেতু নামটি পরিচিত পেয়েছে দারুন ভাবে, তাই আমি সেই নামটিই ব্যবহার করছি, দিরিলিস আর্তগোল গাজীর বাবা ছিলেন সুলেমান শাহ। আমি এই প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গটি উল্লেখ করছি কারণ ইসলামের ইতিহাসে সর্বশেষ খলিফা হযরত পায়িতাথ আব্দুল হামিদ খাঁন উসমানীয় সাম্রাজ্যেরই একজন বংশধর। এখন আসছি , দিরিলিস আর্তগোল গাজী থেকে প্রথম ওসমান তথা উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। "(সুলেমান শাহের সন্তান ছিলেন দিরিলিস আর্তগোল গাজী এবং তার সন্তান ছিলেন প্রথম ওসমান)"। সালতানাতের দূরবর্তী সীমান্ত এলাকায় হওয়ায় কাইর গোষ্ঠী সেই এলাকার পশ্চিম আনাতোলিয়ায় বসবাসকারী অন্যান্য গোত্রের সঙ্গে মিলে একটি সামরিক শক্তি তৈরি করে। মোঙ্গলদের হামলায় সেলজুক রাজত্বের অবসান হলে তাদের এলাকা বিভিন্ন বেলিক বা গোত্রপতিদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়, পাশাপাশি তারা মোঙ্গলদের কর দিয়ে নিজেদের এলাকা শাসন করতেন। দিরিলিস আর্তগোল গাজীর মৃত্যুর পর গোত্রপতি হন তার সন্তান প্রথম ওসমান। তার নামেই পরবর্তীতে ওসমানী , উসমানীয় রাজত্ব বা অটোম্যান সাম্রাজ্যের জন্ম হয়। তার দলের লোকজনদের ডাকা হতো ওসমানী। 'ওসমান'স ড্রিম' বইয়ে ক্যারোলিন ফিঙ্কেল লিখেছেন, বাইজেন্টাইন সীমান্তের কাছাকাছি তার গোত্র বসবাস করলেও, ওসমানের কথা জানা যায় ১৩০১ সালে যখন তিনি প্রথম বাইজেন্টাইন একটি বাহিনীকে যুদ্ধে পরাজিত করে, সেই যুদ্ধক্ষেত্র বাইজেন্টাইন রাজধানী কনস্টান্টিনোপল থেকে দূরে ছিল না।এরপর থেকে তিনি এবং তার উত্তরসূরিরা ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকায় বহু দেশ দখল করেন, এই সাম্রাজ্যের আওতায় ছিল আজকের তুরস্ক, হাঙ্গেরি, সার্বিয়া, বুলগেরিয়া, গ্রীস, আলবেনিয়া, মিশর, মেসিডোনিয়া, রোমানিয়া, জর্ডান, প্যালেস্টাইন, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন, সৌদি আরবের কিছু অংশ এবং উত্তর আফ্রিকার উপকূলের বড় একটি অংশ। এই সাম্রাজ্য তাদের সেরা সময় কাটিয়েছে সুলতান সুলেমান দি ম্যাগনিফিসেন্ট-এর আমলে, তাও আমাদের দেশের একটি চ্যানেলে ," Sultan Suleiman The Magnificent" শিরোনামে পরিবেশিত হয়েছে এবং বিপুল জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। ইতিহাসবিদরা লিখেছেন, ষোল শতক থেকেই অটোমান সাম্রাজ্যের জৌলুশ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। তাঁরা ১৬৮৩ সালে দ্বিতীয় দফা ভিয়েনা দখল করতে গিয়ে পরাজিত হলে সাম্রাজ্যের ক্ষমতার পতন শুরু হয়।
এছাড়া আঠারো শতকে প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া এবং হ্যাপসবার্গ (ভিয়েনা, অষ্ট্রিয়া) সাম্রাজ্যের তুলনায় তাঁদের সামরিক শক্তি কমে যায়, এবং এই সাম্রাজ্যের চুড়ান্ত সমাপ্তি ঘটে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের মাধ্যমে। আমি এই প্রতিবেদনের মধ্যে প্রথমদিকে তাও উল্লেখ করেছি। অটোমান সাম্রাজ্যের আয়ের বড় একটি উৎস ছিল ভারত ও পূর্ব এশিয়া থেকে আসা মসলা ও সিল্ক বাণিজ্যের ওপর আরোপ করা করের উপর। কিন্তু ষোল শতকে যখন নিউ ওয়ার্ল্ড বা নতুন নতুন দেশ আবিষ্কার এবং ভারত-চীনের বাণিজ্যের নতুন নৌ পথ আবিষ্কার হয় , তখন থেকেই অটোম্যান দের এলাকার ওপর নির্ভরশীলতা কমে যায় এবং সেই সঙ্গে পর্তুগাল, স্পেন, ব্রিটেন নৌ-শক্তিতে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বেশ কয়েকটি যুদ্ধে অনেকগুলো এলাকা তাদের হাত ছাড়া হয়ে যায়, যেমনঃ ইউরোপের বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, মলদোভা, সার্বিয়া, মন্টেনেগ্রো অটোম্যান শাসন থেকে বেরিয়ে স্বাধীন হয়ে যায় , পাশাপাশি বেশ কিছু এলাকা রাশিয়ার কাছে হারায় অটোম্যানরা। বাস্তবিক পক্ষে আমার কাছে মনে হয়েছে, অদক্ষ সুলতানদের ক্ষমতায় আসা, জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করা, কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কমে যাওয়া এর মূল কারণ। আঠারো শতকে অটোম্যান শাসনের বিরুদ্ধে একাধিক দেশে বিদ্রোহ শুরু করে যেমনঃ আর্মেনিয়া, গ্রীস, মিশর, পাশাপাশি আরব এলাকায় যুদ্ধ শুরু হয় ও আর্মেনিয়া এবং গ্রীসে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ তৈরি হয় অটোমানদের বিরুদ্ধে। ইতিহাসবিদরা এটিও উল্লেখ করেছেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয় ও তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশে জাতীয়তাবাদের উত্থান অটোম্যান সাম্রাজ্যের পরাজয়ের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাইকেল এ রেনল্ড ও সেন্ট অ্যান্টনি কলেজের অধ্যাপক ইউজেন রোমানের মতে, অতিরিক্ত কৃষি নির্ভরতা, বহু জাতি-গোত্রের শাসন এলাকা, অশিক্ষা, এবং অন্যান্য দেশের ষড়যন্ত্র পরাজয়ের বড় কারণ ছিল। বলকান দেশগুলোর বিদ্রোহে সহায়তা করে রাশিয়া ও অস্ট্রিয়া। সেই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য আর উত্তর এলাকায় অটোম্যান এলাকার দখলে কাজ করেছে ব্রিটেন ও ফ্রান্স। পাশাপাশি ইতিহাসে অটোমান সাম্রাজ্য বিলুপ্তির পেছনে তুরস্কের জাতীয়তাবাদী নেতা কামাল আতাতুর্ক-এর নাম হয়তো বড় করে আসবে , পাশাপাশি কিন্তু প্রবল পরাক্রমশালী এই সাম্রাজ্যের পতনের পেছনে ইয়াং টার্কদের ভূমিকা আর প্রথম মহাযুদ্ধের বিশেষ ভূমিকা ও রয়েছে। এই প্রতিবেদনের প্রথম পর্যায়ে তাও আমি উল্লেখ করেছি। আবারো সংক্ষিপ্ত ভাবে তুলে ধরছি, পশ্চিমা দেশগুলোয় পড়াশোনা করে আসা তুরস্কের তরুণরা অনেক দিন ধরে চাইছিলেন তুরস্কে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করতে, পাশাপাশি ইউরোপীয় অনেক দেশের মতো সুলতানের পদ হবে সাংবিধানিক, দেশ শাসন করা হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে, তরুণ তুর্কি আন্দোলন ১৯০৮ সাল সাংবিধানিক রাজতন্ত্র মেনে নিতে সুলতানকে বাধ্য করেন এরপর থেকেই," চেম্বার অব ডেপুটি'জ গঠন করা হয়", যারা ভোটে নির্বাচিত হতেন। পাশাপাশি তুরস্কের সালতানাতের বিদায়ের বড় ভূমিকা রাখে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ , উল্লেখ থাকে যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্ক জার্মানির সঙ্গে যোগ দেয় এবং ওই যুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ ভূমিকা রাখে তুরস্ক, কিন্তু প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে পরাজয়ের পর বেশ কিছু অপমানজনক শর্ত মেনে নিতে হয় তুরস্ককে। দি অটোম্যান পিপল অ্যান্ড দ্যা এন্ড অব এমপায়ার বইয়ে জাস্টিন ম্যাককার্থি উল্লেখ করেছেন, প্রথম মহাযুদ্ধের পর তাতে অংশ নেয়ার চড়া মূল্য দিতে হয় তুরস্ককে। ট্রিটি অব সেভরেস অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্য ভাগ হয়ে যায় ব্রিটেন আর ফ্রান্সে মধ্যে। ভূমধ্যসাগরের উপকূল চলে যায় ইটালির হাতে, এজিয়ান সাগরের উপকূল যায় গ্রীসের দখলে, টার্কিশ প্রণালী দেয়া হয় আন্তর্জাতিক শক্তির হাতে এবং সেই সঙ্গে আর্মেনিয়ার বড় একটি অংশ স্বাধীন দেশ হিসাবে স্বীকৃত পায়। তুরস্কের জন্য অবমাননাকর এই চুক্তির কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে তরুণ তুর্কিরা। তারা বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করতে শুরু করে।
সেই বিদ্রোহ দমনে তুর্কী জেনারেল মুস্তাফা কামালকে আনাতোলিয়ায় পাঠান সুলতান ষষ্ঠ মেহমেদ। কিন্তু সেখানে গিয়ে মুস্তাফা কামাল বরং জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একজন নেতা হয়ে ওঠেন। আনাতোলিয়া নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য যখন গ্রীস বিশেষ একটি বাহিনী পাঠায়, তখন ১৯১৯ সালের মে মাসে শুরু হয় তুরস্কের স্বাধীনতার লড়াই। জনগণের সমন্বয়ে তারা একটি বিশেষ বাহিনী তৈরি করে, যারা একি সাথে গ্রীস, আর্মেনিয়া, ফ্রান্স আর ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে শুরু করে, পাশাপাশি যৌথ বাহিনীর প্রতিপক্ষ হিসাবে তুরস্কের জাতীয়তাবাদীদের অর্থ ও সামরিক সহায়তা দেয় রাশিয়া। জাতীয়তাবাদীরা আঙ্কারায় গ্র্যান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি নামে পাল্টা সরকার তৈরি করে। জাতীয়তাবাদী বাহিনী গ্রীক, ফরাসিদের তুরস্ক থেকে বিতাড়িত করে। কিন্তু ব্রিটিশরা তখনো ইস্তানবুলের দখল ধরে রেখেছিল। চেম্বার অব ডেপুটি'র সদস্যরা ১৯২০ সালের ২৮শে জানুয়ারি গোপন সভায় মিলিত হন এবং তাঁরা ন্যাশনাল প্যাক্ট নামে এক সিদ্ধান্তে মুস্তাফা কামালকে চেম্বারের প্রেসিডেন্ট হিসাবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সভা শেষ হওয়ার আগেই ব্রিটিশরা তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং এরপর ইস্তানবুলে দমন পীড়ন অভিযান শুরু করে ব্রিটিশ বাহিনী। তাদের পরামর্শে সুলতান ষষ্ঠ মেহমেদ পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেন। ফলে আবার তিনি একক ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন। এবার তার ক্ষমতার নেপথ্য শক্তি ছিল ব্রিটিশ বাহিনী। কিন্তু আবার সর্বময় সুলতান হয়ে উঠলেও এবার তার ক্ষমতা ছিল শুধুমাত্র ইস্তানবুল কেন্দ্রিক এবং তুরস্কের বাকি অংশ ছিল জাতীয়তাবাদীদের দখলে। অটোমান সাম্রাজের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন তুরস্কের জাতীয়তাবাদী নেতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক। যখন জাতীয়তাবাদীদের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন সুলতান, তখন পাল্টা ব্যবস্থা নেন মুস্তাফা কামাল, যিনি পরবর্তীতে আতাতুর্ক নামে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি তুরস্কের সব গভর্নর ও সামরিক বাহিনী কমান্ডারদের কাছে চিঠি পাঠান, যেন গ্র্যান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করে পাঠানো হয়। তিনি ইসলামিক বোর্ডের কাছে চিঠি লিখে জানান, তিনি সুলতানের জন্যই লড়াই করছেন এবং ইসলামের বর্তমান খলিফা। তিনি যৌথ বাহিনীর কাছ থেকে খলিফাকে উদ্ধার করে আনতে চান। তিনি 'ধর্ম যুদ্ধে' নামার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। ১৯২০ সালের ২৩শে এপ্রিল অ্যাসেম্বলির সভায় মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ককে স্পিকার ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হয়। 'ওসমান'স ড্রিম' বইয়ে ক্যারোলিন ফিঙ্কেল লিখেছেন, ব্রিটিশদের সঙ্গে কয়েক দফা যুদ্ধের পর অবশেষে ১৯২২ সালের ১১ই অক্টোবর আর্মিসটিস অফ মুদানয়া স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে তুরস্কের স্বাধীনতা মেনে নেয়া হয়। এরপরই গ্র্যান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সামনে সালতানাত বাতিলের প্রস্তাব তুলে ধরেন মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক ও সেখানে বলা হয়, যেহেতু তিনি খলিফা হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন, তাই খলিফার পদটি থাকবে, তবে কে খলিফা হবে, তা পার্লামেন্ট ঠিক করবে। পহেলা নভেম্বর অটোম্যান সালতানাত বিলুপ্তির পক্ষে ভোট দেয় তুরস্কের পার্লামেন্ট। এর ১৭ দিন পর সুলতান মেহমেদ একটি ব্রিটিশ জাহাজে করে মাল্টার উদ্দেশ্যে চলে যান। খলিফা হিসাবে তার স্থলাভিষিক্ত হন রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য ও সাবেক সুলতানের কাজিন আবদুলমেসিদ, এরপর আরও একবছর ইস্তানবুল যৌথ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকে। ট্রিটি অব লুসানের পর ১৯২৩ সালের দোসরা অক্টোবর যৌথ বাহিনী ইস্তানবুল ছেড়ে চলে যায়। দুই বছর পরে অটোমান খেলাফতও বিলুপ্ত করা হয়। সেই সময় ওসমানী রাজপরিবারের প্রায় ১২০ জন সদস্যদের সবাইকে তুরস্ক থেকে বহিষ্কার করা হয়।
বাস্তবিক অর্থে অটোম্যান, ওসমানী কিংবা উসমানীয় সাম্রাজ্যের সর্বশেষ খলিফা কিংবা শেষ স্বাধীন সুলতান হলেন, পায়িতাথ আব্দুল হামিদ খাঁন বা দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ খাঁন, উনার পরে যে সুলতানরা এসেছেন, অনেকটা পুতুলের মতো, ঠিক সহজ সরল উদাহরণের ভাষায় বললে, অন্যেরা যা বলতো ঠিক তেমনটিই করতে হতো।।
আমার এই প্রতিবেদনের সাথে সংযুক্ত করছি,(উসমানীয় খিলাফতের শেষ দিন শিরোনামে , ৩/৩/২০২১ ইং, কালের কণ্ঠ , উসমানীয় খিলাফতের শেষ দিন, ৩ মার্চ ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে আইন পাসের মাধ্যমে উসমানীয় খিলাফতের বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়। এর মাধ্যমে উসমানীয় রাজবংশের প্রায় সাত শ বছরের শাসনের অবসান হয় এবং ইসলাম আগমনের প্রথমবারের মতো ‘ইসলামী খিলাফত’ ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিকতা হারায়। সেলজুক রাজবংশের জামাতা আর্তুগুল গাজি প্রথমে রোমের সেলজুক সালতানাতের নিযুক্ত একজন আঞ্চলিক শাসক ছিলেন। তাঁকেই উসমানীয় খিলাফতের স্বপ্নদ্রষ্টা মনে করা হয়। তাঁর ছেলে প্রথম উসমানের নামানুসারে খিলাফতের নামকরণ করা হয়। ১৫২৬ সালে হাঙ্গেরি জয়ের মাধ্যমে ইউরোপের বিস্তীর্ণ অঞ্চল উসমানীয় খিলাফতের অধীন হয়। ১৬০০ ও ১৭০০ শতাব্দী ছিল উসমানীয় খিলাফতের উত্থানকাল। বিশেষত সুলতান প্রথম সুলাইমানের সময় উসমানীয় খিলাফত দক্ষিণপূর্ব ইউরোপ, উত্তরে রাশিয়া কৃষ্ণ সাগর, পশ্চিম এশিয়া, ককেসাস, উত্তর আফ্রিকা ও হর্ন অব আফ্রিকাজুড়ে, মধ্যপ্রাচ্য ও আরব অঞ্চলসহ বিস্তৃত একটি শক্তিশালী বহুজাতিক ও বহুভাষিক সাম্রাজ্যে পরিণত হয়। এ সময় উসমানীয় খিলাফত ৩৬টি প্রদেশ ও বেশ কিছু অনুগত রাজ্যে বিভক্ত ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর উসমানীয় খিলাফত বিলুপ্তি হলে খিলাফতের অধীন বলকান ও মধ্যপ্রাচ্যের সাবেক অংশগুলো ৪৯টি স্বাধীন রাষ্ট্রে আত্মপ্রকাশ করে।
দ্বিতীয় মুরাদের ছেলে দ্বিতীয় মুহাম্মদ রাষ্ট্র ও সেনাবাহিনীর পুনর্গঠন করেন। ১৪৫৩ সালের ২৯ মে দ্বিতীয় মুহাম্মদ কনস্টান্টিনোপল জয় করেন। ১৫০০ ও ১৬০০ শতাব্দীতে উসমানীয় সাম্রাজ্য বিস্তৃতির যুগে প্রবেশ করে। প্রথম সুলাইমানের শাসনের সমাপ্ত হওয়ার সময় তিন মহাদেশব্যপী সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল। ১৭১৬-১৭১৮ সালের অস্ট্রো-তুর্কি যুদ্ধের পর পাসারোউইতজের চুক্তি অনুযায়ী বানাত, সার্বিয়া ও অল্টেনিয়া অস্ট্রিয়ার হাতে ছেড়ে দিতে হয়। এই চুক্তির পর ইউরোপে উসমানীয়দের জয়যাত্রা থেমে যায়। সময়ের প্রয়োজনে উসমানীয়রা রাষ্ট্র, প্রশাসন, শিক্ষা ও গবেষণা ব্যবস্থায় উন্নয়নে প্রয়াসী হয়। ১৯০৮ সালে তরুণ তুর্কি বিপ্লবের পর দ্বিতীয় সাংবিধানিক যুগ শুরু হয়। গৃহবিবাদের সুবিধা নিয়ে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি ১৯০৮ সালে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা দখল করে নেয়। ১৯১৪ সাল নাগাদ উসমানীয় খিলাফত ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকায় তার বেশির ভাগ অঞ্চল হারিয়ে ফেলে। ১৯১৬ সালে আরব বিদ্রোহ শুরু হলে তা মধ্যপ্রাচ্য রণাঙ্গনে উসমানীয়দের স্রোতকে উল্টে দেয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর ১৯২২ সালের ১ নভেম্বর সালতানাত বিলুপ্ত করা হয় এবং শেষ সুলতান ষষ্ঠ মুহাম্মদ ১৭ নভেম্বর দেশ ছেড়ে চলে যান। সালতানাত বিলুপ্ত হলেও এ সময় খিলাফত বিলুপ্ত করা হয়নি। ষষ্ঠ মুহাম্মদের স্থলে দ্বিতীয় আবদুল মজিদ খলিফার পদে বসেন। ১৯২৩ সালের ২৯ অক্টোবর গ্র্যান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি তুরস্ককে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে। ১৯২৪ সালের ৩ মার্চ খিলাফত বিলুপ্ত করা হলে সর্বশেষ খলিফা দ্বিতীয় আবদুল মজিদ দেশত্যাগ করেন)"।
পরিশেষে ইসলামের ইতিহাসে প্রথম খলিফা হযরত আবুবক (রাঃ) কে সাথে নিয়েই এই প্রতিবেদনের ইতি টানবো, মহানবী (সা.)-এর পরেই ইসলামের প্রথম খলিফা নিযুক্ত হন হযরত আবু বকর (রা.) । খলিফা নিযুক্তির পর হযরত আবু বকর (রা.) তাঁর প্রথম ছোট্ট ভাষণে বলেন, ‘আমি আপনাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ নই।আপনাদের সকলের সাহায্য ও পরামর্শ আমার কাম্য। আমি ন্যায় ও সত্যের পথে থাকলে আপনারা আমাকে সমর্থন করবেন, পাশাপাশি বিপথগামী হলে আমাকে উপদেশ দেবেন। আমি বরণ করবো সত্য, বর্জন করবো মিথ্যা। আমার চোখে ধনী গরীব, সবল দুর্বল সকলেই সমান। আপনারা আমাকে যতক্ষণ মেনে চলবেন, যতক্ষণ আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে মেনে চলব ততদিন পর্যন্ত আমি থাকবো, অন্যথায় আপনাদের নেতা হওয়ার আমার কোনো অধিকারই থাকবে না।' বিশেষ কিছু ঘটনা উল্লেখ করছি, খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যথারীতি কাপড়ের ব্যবসার জন্য বাজারে যাচ্ছিলেন। রাস্তায় হযরত ওমর (রা.)-এর সঙ্গে দেখা হলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোথায় যাচ্ছেন?' জবাবে আবু বকর (রা.) বললেন, ‘ব্যবসা করতে বাজারে যাচ্ছি।' তখন হযরত ওমর (রা.) বললেন, এভাবে বাজারে গেলে খেলাফতের কাজ কিভাবে চলবে?' আবু বকর (রা.) বললেন, ‘তাহলে আমার পরিবার পরিজনের ভরণ-পোষণের কি হবে?' জবাবে ওমর (রা.) বললেন, ‘আপনার হাতে মুসলমানদের যে কোষাগার (বায়তুলমাল) আছে, তা থেকে আপনার ভরণ-পোষণের খরচ বাবদ ভাতা নির্দিষ্ট করা হবে। যেহেতু আপনি সকল মুসলমানের তরফে খেলাফতের কাজে নিয়োজিত আছেন।' অতপর তারা দু'জনে মিলে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের পরামর্শক্রমে একজন সাধারণ মুহাজিরের ভাতার সমপরিমাণ ভাতা খলিফার জন্য নির্ধারণ করলেন। একদিন খলিফার স্ত্রী কিছু মিষ্টিদ্রব্য খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন, খলিফা বললেন, আমার কাছে অতিরিক্ত পয়সা নেই, আর বায়তুলমালের পয়সা জনগণের। খলিফার স্ত্রী বললেন, আমি দৈনন্দিন পারিবারিক খরচ থেকে কিছু কিছু করে সঞ্চয় করে মিষ্টিদ্রব্য আনার জন্য খলিফাকে অনুরোধ করেন, কিন্তু খলিফা বললেন, অভিজ্ঞতা থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, এই পরিমাণ পয়সা বায়তুলমাল থেকে কম নিলে পরিবার-পরিচালনায় কোনোরূপ অসুবিধা হবে না। অতএব খলিফার হুকুমে স্ত্রীর সঞ্চিত পয়সা বায়তুলমালে জমা করে দেয়া হলো এবং তৎসঙ্গে তিনি নির্দেশ দিলেন, পরবর্তীতে এই পরিমাণ পয়সা যেন তার ভাগ থেকে কম করা হয়। হযরত আবু বকর (রা.) জনগণ ও সেনাবাহিনীকে দশটি অমূল্য উপদেশ দিয়েছিলেন তার বর্ণনা করছি, "( ‘কাউকে প্রতারিত করো না, চুরি করো না, ব্যভিচার করো না, বিশ্বাসঘাতকতা করো না, কারো অঙ্গচ্ছেদ করো না, স্ত্রী লোক ও বৃদ্ধকে হত্যা করো না, খেজুর গাছ নষ্ট করো না, ফলবান বৃক্ষ নষ্ট করো না, শস্য বা শস্যক্ষেত নষ্ট করো না এবং প্রয়োজন ব্যতীত গবাদিপশু হত্যা করো না)"। সত্যবাদিতা হযরত আবু বকর (রা.)-এর প্রধান পরিচয়। এর জন্য তাঁকে সিদ্দিক বা সত্যবাদী বলে ডাকা হতো। তাঁর খেলাফতের জামানায় একজন বুড়ি, যাকে দেখাশোনা করার কেউ ছিল না। খলিফা স্বয়ং রাতের অন্ধকারে সেই বুড়ির ঘর-দুয়ার, বিছানাপত্র পরিষ্কার করে নিজ হাতে বুড়িকে খাওয়াতেন। এ তাঁর দৈনন্দিন অন্যান্য কাজের মতোই এটাও একটা বিশেষ কাজ ছিল। নবীজির সাথী ইসলামের প্রথম খলিফা, আল্লাহ কর্তৃক ঘোষিত ব্যক্তিত্ব, আখেরাতের (পরকালের) নির্ভয়প্রাপ্ত হযরত আবু বকর (রা.) একদিন এক তৃণখন্ড হাতে নিয়ে বলছেন, ‘হায়! আমি যদি তৃণখন্ড হতাম যা পশু খেয়ে ফেলতো।' কখনও বলতেন, ‘আমি যদি কোনো মুমিনের শরীরের পশম হতাম যা কেটে ফেলা হতো।' একদিন একটি ছাগলকে গাছের নিচে শুয়ে থাকতে দেখে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন, ‘হায়! আমি যদি এই ছাগলের মতো হতাম, চলতাম ফিরতাম, গাছের ছায়ায় আরাম করতাম, তাহলে পরকালে কোনো বিচারের মুখোমুখি হতাম না।' হযরত আবু বকর (রা.)-এর চরিত্রের কথা বলতে গিয়ে অনেকেই এমন ধারণা পোষণ করে থাকেন যে, ‘মুহাম্মদ (সা.) যদি একজন জ্ঞান প্রতারক হতেন, তাহলে তিনি কখনোই এমন একজন মহানুভব বিশ্বাসী বন্ধু লাভ করতে পারতেন না, যিনি শুধু বিচক্ষণ, দূরদর্শী ও জ্ঞানীই ছিলেন না, বরঞ্চ সমগ্র জীবনে নিষ্ঠাবান ও সৎ ছিলেন। অনেক ইসলামী চিন্তাবিদ, হযরত আবু বকর (রা.) সম্পর্কে বলেছেন, ‘তার নম্রতা একনিষ্ঠতা, অনাড়ম্বর জীবন অতিসূক্ষ্ম নীতিজ্ঞান, গরীব, দরদী মন, কঠিন সংকল্প, ক্লান্তিহীন অধ্যবসায়, সর্বোপরি এক আল্লাহতে অটল ও অফুরন্ত বিশ্বাস প্রভৃতি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ইতিহাসে মহানবীর পরই তাঁর অবস্থান। তাছাড়া হযরত আবু বকর (রা.) তাঁর গুরু অর্থাৎ মহানবী (সা.)-এর মতো দৈনন্দিন জীবনে
আচারে-ব্যবহারে একেবারেই অনাড়ম্বর ছিলেন। তিনি কোমল অথচ কঠোর ছিলেন। জনসাধারণের কল্যাণে ও নতুন রাষ্ট্রের শাসনাকার্যে তিনি সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন। তিনি এতই নম্র ছিলেন যে, সব কথায় বলতেন, ‘আমাকে আল্লাহর খলিফা বলো না, আমি আল্লাহর রাসূলের খলিফা মাত্র। পাশাপাশি আমার একটি অভিমত ব্যক্ত করি হযরত আবুবক ( রাঃ) প্রসঙ্গে, আজ থেকে আমি যদি এই মহান খলিফার কার্যাবলী, নীতি আদর্শ, উনার সময়কার শাসন পরিচালনা , বিচার ব্যবস্থা প্রভৃতি বর্ণনা করতে যায়, মৃত্যু অবধি পর্যন্ত শেষ করতে পারবো না বা সম্ভবপর হবে না। পরিশেষে এই কথা বলে শেষ করবো, খিলাফত শব্দের আভিধানিক অর্থ প্রতিনিধিত্ব করা বা অন্য কারও স্থানে স্থলাভিষিক্ত হওয়া এবং খলিফা শব্দের অর্থ প্রতিনিধি, স্থলাভিষিক্ত,"(এই খলিফা শব্দের বহুবচন হচ্ছে খুলাফা এবং খালাইফ)"। ইসলামে ‘খিলাফত’ এমন এক শাসনব্যবস্থার নাম, যা মহান আল্লাহর বিধান ও মহানবী (সা:)এর সুন্নাহ দ্বারা পরিচালিত। সূত্র ,(নয়াদিগন্ত)। এই শাসনব্যবস্থায় সার্বভৌমত্বের অধিকারী একমাত্র মহান আল্লাহ এবং তিনিই বিশ্বজগতের স্রষ্টা এবং সর্বোচ্চ শাসক। মানুষের মর্যাদা হচ্ছে , সে সর্বোচ্চ শাসকের প্রতিনিধি বা খলিফা এবং তার রাজনৈতিক ব্যবস্থা হবে সর্বোচ্চ শাসকের বিধানের অধীন। খলিফার কাজ হলো, সর্বোচ্চ শাসক আল্লাহর আইনকে তাঁর প্রকৃত লক্ষ্য অনুযায়ী কার্যকর করা এবং তাঁর নির্দেশিত পথে রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করা। এই সম্পর্কে সাহাবিদের অভিমত, খিলাফত একটি নির্বাচনভিত্তিক পদমর্যাদা এবং তা মুসলমানদের পারস্পরিক পরামর্শ এবং তাঁদের স্বাধীন মতামত প্রকাশের মাধ্যমেই কায়েম করতে হবে। বংশানুক্রমিকভাবে বা বল প্রয়োগের দ্বারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া কিংবা নেতৃত্ব দেয়া খিলাফত নয়, বরং তা রাজতন্ত্র। খিলাফত ও রাজতন্ত্রের যে স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ধারণা সাহাবিরা পোষণ করতেন, হজরত আবু মূসা আল-আশআরি (রা:) তা ব্যক্ত করেছেন এভাবে, খিলাফত হচ্ছে তাই, যা প্রতিষ্ঠা করতে পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে , তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার ও সৎকর্মশীল আল্লাহ তাঁদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তিনি অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন (সূরা আন নূর : ৫৫) । ইসলামে নবুওয়াতের পদমর্যাদার পর এই খিলাফত ব্যবস্থাই সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন এবং এই পদটি পবিত্র দায়িত্বপূর্ণ পদ ও বলা হয়ে থাকে। ইসলামে খিলাফতের দায়িত্ব ও কর্তব্য অত্যন্ত ব্যাপক ও সর্বাত্মক, যাবতীয় বৈষয়িক, ধর্মীয় ও তমদ্দুনিক উদ্দেশ্যের পূর্ণতা বিধান এরই ভিত্তিতে হয়ে থাকে। কুরআন ও হাদিস হতে খলিফার যোগ্যতা ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যা কিছু জানা যায় তার অর্থ এই এবং সেই আলোকে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, খুলাফায়ে রাশেদিনের সময়ই মুসলিম জাহানের খলিফা হওয়ার সর্বাধিক উপযুক্ত। অনেক শুভ কামনা রইলো।
23
View