তোমাকে গাছের পাতা চেনাবো বলে, আর তুমি জানতে চেয়েছিলে, গাছের পাতা সবুজ হয় কেন? কিংবা পাতাদের হঠাৎ এমন চকচকে সবুজ লাগছে কেন, আগে তো এরকম ছিল না—এসব প্রশ্নের উত্তর জানাবো বলে, তোমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াই পুরো রমনা উদ্যান! এ-কথা সে-কথা বলি, কিন্তু তোমার প্রশ্নের উত্তর দেই না, দিতে পারি না।
তুমি চাও বৃষ্টি আসুক, রমনায় বৃষ্টিতে ভেজার খুব শখ তোমার; বয়সের দোষে আমি আর বৃষ্টিতে ভিজতে চাই না তেমন। তবুও তোমার সাথে বৃষ্টি নামার অপেক্ষা করি, আর খুঁজে ফিরি গাছের পাতা সবুজ কেন—সেই প্রশ্নের উত্তর। তোমার কোন প্রশ্নের উত্তরই অতটা ভালোভাবে জানি না বলে, ঘুরে ফিরে অন্য কথায় চলে যাই। কারণ, তুমি তো গভীরভাবে জানতে চাইছো সবকিছু। তুমি হাত ধরার অর্থ খুঁজতে চাইছো, ভালোলাগার কারণ অনুসন্ধান করতে চাইছো, একে অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকাতেও এত সুখ কেন লাগে, তুমি সবই জানতে চাইছো বিষদভাবে। কিন্তু, সেসব প্রশ্নের বিষদ উত্তর আমি দেই কীভাবে? তোমাকে এখনও দেখানো হলো না মাটির গভীরে থাকা শিকড়ের বিন্যাস, চেনানো হলো না গাছের পাতা, ফুলের নাম কিংবা ভালোবাসা!
এসব বৃক্ষজাতীয় প্রশ্নের উত্তর তোমাকে যে কেউ-ই দিতে পারবে। কিন্তু একটু অপেক্ষা করো বালিকা। আমাকে—মানে, তোমার সাথের এই এলোমেলো মানুষটিকে—যাকে তুমি অনেক জ্ঞানী ভাবছো, যার দিকে তাকাচ্ছো মুগ্ধ হয়ে, যার প্রতিটি কথাই তুমি বেদবাক্যের মতো মেনে নিচ্ছো একবাক্যে, আগে তাকে—মানে, আমাকে আগে এসবকিছু জানতে দাও, শিখতে দাও। আমিই চেনাবো তোমাকে গাছের পাতা; চেনাবো কোনটা নাগালিঙ্গম, কোনটা অশোক, বট-পাকুর আর অশ্বত্থের পার্থক্য; একই গাছে কীভাবে বিভিন্ন রঙের ফুল ফোটে; কেন আমাদের হাত ধরতে ভালো লাগে, কীভাবে আমরা ক্রমশ এমন আপন হয়ে যাচ্ছি, কেন আমাদের তাকানোতেই এত শিহরণ জাগছে!
তোমাকে জানাবো আমার বিদ্যার দৌড়—বসন্তে পাতা ঝরে নতুন পাতা গজিয়েছে বলে গাছের পাতাগুলো এমন চকচক করছে, আর গত এক মাস হলো পৃথিবীতে চলছে বসন্ত কিংবা ক্লোরোফিল নামক রঞ্জক পদার্থের কারণে গাছের পাতারা এমন সবুজ হয়—সব শেখাবো তোমাকে।
তাই বলছি, আর কয়েকবার রমনায় দেখা হোক আমাদের। আর কয়েকটা চক্কর হাঁটা হোক এক সাথে। তার পর একদিন পৃথিবীতে সুসময় এলে, তোমাকে চেনাবো ফুল, ফল, লতা, গাছের পাতা এবং ভালোবাসা। অন্য কারো কাছ থেকে তুমি এইসব উদ্ভিদবিদ্যা-প্রাণীবিদ্যা শেখো, তা হতে দিতে পারে না তোমার এই অধম-কবি-প্রেমিক।
(২৩.০৩.২০২৫)