ফুলপুর এক ছোট্ট সুন্দর গ্রাম, প্রকৃতির কোলে লুকিয়ে থাকা এক টুকরো স্বর্গ। নদীর পাড় ঘেঁষে সারি সারি তালগাছ, ধানের মাঠের ওপারে রঙিন ফুলের বাগান, আর ছোট ছোট কুঁড়েঘর যেন এক রূপকথার রাজ্য তৈরি করেছে। এই গ্রামের মানুষজন ছিল সরল, পরিশ্রমী আর ভালোবাসায় ভরা। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার ছিল, এই গ্রামে কেউ কোনোদিন ঝগড়া করত না, দুঃখী হতো না। সবাই সবসময় খুশি থাকত। গ্রামের সবচেয়ে প্রাণবন্ত মেয়ে ছিল তুলিকা। ছোট্ট, চঞ্চল আর কল্পনাপ্রবণ এই মেয়েটির চোখে সবকিছুই রঙিন মনে হতো। তুলিকা নদীর ধারে বসে পাখিদের গান শুনত, মাঠে গিয়ে বাতাসের সাথে দৌড়ে বেড়াত, আর বুড়ো গাছেদের সাথে গল্প করত। তার বিশ্বাস ছিল, এই গ্রামে কোনো এক গোপন জাদু আছে, যা সবাইকে সুখী রাখে। কিন্তু সেই জাদুটার আসল রহস্য কেউ জানত না। একদিন, গ্রামের পাশে থাকা পুরনো বন থেকে এক অদ্ভুত বয়স্ক লোক এসে হাজির হলো। তার লম্বা সাদা দাড়ি, চোখে এক রহস্যময় দ্যুতি। গ্রামের সবাই তাকে দেখে অবাক হলো। বৃদ্ধ বললেন, “এই গ্রামে এক আশ্চর্য জাদু আছে, যা কেবল একজন বিশুদ্ধ হৃদয়ের মানুষই খুঁজে বের করতে পারবে।” গ্রামের মানুষজন কেউ কেউ হেসে উড়িয়ে দিল, কেউ কেউ ভাবলো লোকটা বোধহয় পাগল। কিন্তু তুলিকার মন বললো, এই রহস্য তাকে বের করতেই হবে! সেই রাত থেকেই তুলিকা শুরু করল তার অনুসন্ধান। দিনের পর দিন সে ঘুরে বেড়াতে লাগল গ্রামের আনাচে-কানাচে, জঙ্গল আর নদীর তীরে। সে গ্রামের বড় আমগাছের নিচে বসে ভাবলো, সে কোথায় এই রহস্য খুঁজবে? একদিন, সে সন্ধ্যায় পুরনো বটগাছের নিচে এক আলোর ঝলকানি দেখতে পেল। কাছে গিয়ে দেখে, মাটির নিচ থেকে স্বচ্ছ এক ঝর্ণা ফুঁটে বেরোচ্ছে, যার জল ঝলমল করছে সোনার মতো। তুলিকা হাতে একটু জল নিয়ে দেখল, আর অবাক কাণ্ড! তার মনে এক অপূর্ব প্রশান্তি নেমে এলো। মনে হলো যেন সমস্ত দুঃখ মুহূর্তের মধ্যে উধাও হয়ে গেছে! সে দৌড়ে গ্রামের লোকদের খবর দিল। প্রথমে কেউ বিশ্বাস করতে চাইল না, কিন্তু যখন একে একে সবাই ঝর্ণার জল খেলো, তারা অনুভব করল এক অপূর্ব আনন্দ, যেন সমস্ত কষ্ট কোথায় হারিয়ে গেছে! বৃদ্ধ লোকটি হাসলেন, আর বললেন, “এই ঝর্ণার জল কোনো সাধারণ জল নয়। এটি ভালোবাসা, সততা আর নির্দোষতার প্রতীক। যে ব্যক্তি সত্যিকারের ভালো মন নিয়ে এটাকে খুঁজবে, সেই পাবে এটির আশীর্বাদ।” এরপর থেকে ফুলপুর গ্রামের মানুষরা আরও বেশি ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়ে গেল। সেখানে কেউ আর দুঃখী হতো না, কেউ আর কারও সাথে ঝগড়া করত না। তুলিকা গ্রামের সকলের কাছে এক নায়িকার মতো হয়ে উঠলো, যে তার নিষ্পাপ মন আর সাহসের জোরে গ্রামকে এক নতুন আশীর্বাদ এনে দিল। ফুলপুরের গল্প ছড়িয়ে পড়লো দূর-দূরান্তে, আর সবাই বলত— “এটি এক রূপকথার গ্রাম, যেখানে ভালোবাসাই হলো সবচেয়ে বড় জাদু।”
Comments
-
Pinku Chandra Paul 1 week ago
সুন্দর হয়েছে!