সব ঠিক হয়ে গিয়েছিল।
তৃষ্ণা আর আরিয়ান দুজনেই যেন এক নতুন স্বপ্নের জগতে ছিল। অভিমান আর ভুল বোঝাবুঝির কালো মেঘ কেটে গিয়ে এবার শুধু ভালোবাসার আলো ছড়িয়ে পড়েছিল তাদের চারপাশে। দুই পরিবারও একে অপরের সাথে মানিয়ে নিয়েছিল, শেষ পর্যন্ত তাদের বিয়ের দিনও ঠিক হয়ে গিয়েছিল—আর মাত্র দশ দিন বাকি!
তৃষ্ণার মনে একটা চাপা আনন্দ। সে স্বপ্ন দেখছিল নতুন জীবনের, নতুন পথচলার।
কিন্তু হঠাৎই সেই স্বপ্নে একটা ধাক্কা দিল আরিয়ান।
একদিন তৃষ্ণার বাড়িতে বসে কথা হচ্ছিল, সবাই ব্যস্ত বিয়ের আয়োজন নিয়ে। ঠিক তখনই, আরিয়ান হঠাৎ বলল,
"আমি ভাবছিলাম, বিয়ের তারিখটা কি একটু পেছানো যায়?"
ঘরে মুহূর্তের জন্য পিনপতন নীরবতা নেমে এলো।
তৃষ্ণা অবাক হয়ে তাকাল। তার মা-বাবাও একে অপরের দিকে তাকালেন।
তৃষ্ণা ধীরে ধীরে বলল, "মানে? এখন হঠাৎ করে কেন?"
আরিয়ান একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলল, তারপর বলল, "আমার জন্য একটা বিশাল সুযোগ এসেছে। এক বড় বিসনেস ম্যান আমার কাজ পছন্দ করেছেন, তিনি চান আমি আমার নতুন স্যাম্পল নিয়ে একটা মিটিং করি। এটা যদি আমি করতে পারি, তাহলে আমার বিজনেস এক ধাক্কায় অনেক বড় হয়ে যাবে। কিন্তু পুরো প্রসেসটা শেষ করতে প্রায় ২০ দিন লাগবে। আর আমাদের বিয়ে তো মাত্র ১০ দিন পর।"
তৃষ্ণা কিছু বলল না, শুধু চুপচাপ তার দিকে তাকিয়ে রইল।
আরিয়ান বোঝাতে লাগল, "দেখো তৃষ্ণা, এটা শুধু আমার জন্য না, আমাদের জন্যও অনেক বড় একটা সুযোগ। আমার কাজ যদি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলে যায়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ অনেক বেশি নিরাপদ হয়ে যাবে। আমি চাই না বিয়ের পরপরই আমাকে কাজের জন্য বাইরে যেতে হোক, তাই এটা এখনই সেরে ফেলতে চাই।"
তৃষ্ণা আস্তে করে বলল, "তাহলে?"
"তাহলে যদি আমরা বিয়েটা ২০ দিন পিছিয়ে দেই, তাহলে সবকিছু ঠিকঠাকভাবে সামলানো যাবে," আরিয়ান বলল, চোখে আশার ঝলক।
তৃষ্ণার পরিবার এবার একটু অস্বস্তিতে পড়ল।
তার মা বললেন, "কিন্তু ছেলেপক্ষ থেকে বিয়ের দিন ঠিক করা হয়েছিল, এখন হুট করে পাল্টানো কি ঠিক হবে?"
তৃষ্ণার বাবা একটু চিন্তিত হয়ে বললেন, "আর ব্যবসা তো চলতেই থাকবে, তুমি পরেও তো এগুলো করতে পারো।"
কিন্তু আরিয়ান জোর দিল, "এটা একবারই আসবে, আর আমি এটা হারাতে চাই না।"
তৃষ্ণা এবার একটু কষ্ট পেয়েছিল। সে এতদিন ধরে বিয়ের স্বপ্ন দেখে এসেছে, দিন গুনে অপেক্ষা করেছে। অথচ এখন, মাত্র ১০ দিন বাকি থাকতে, আরিয়ান তার ক্যারিয়ারকে তাদের সম্পর্কের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে!
কিন্তু সে কিছু বলল না।
শুধু আস্তে করে জিজ্ঞাসা করল, "তুমি কি নিশ্চিত, আরিয়ান? এটা কি আমাদের জন্য সত্যিই জরুরি?"
আরিয়ান তার হাতে হাত রেখে বলল, "আমি জানি এটা হঠাৎ শোনাচ্ছে, কিন্তু আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এটা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য সেরা সিদ্ধান্ত হবে। শুধু ২০ দিন অপেক্ষা করো, তারপর সবকিছু আগের চেয়েও সুন্দর হবে।"
তৃষ্ণা গভীরভাবে তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকল।
চলবে......