Posts

গল্প

কৃষকের ৭১

March 31, 2025

মুহাম্মদ আল ইমরান

98
View

ছোটগল্প: কৃষকের ৭১। 
লেখক: মুহাম্মদ আল ইমরান।

Photo make by Gemini AI

“আযানের ধ্বনিতে সকালের সূর্য উদয় হলেও দেশের সূর্য কি উঠবে না? নাকি ৪৭ এর সীমারেখায় প্রতিদিন সূর্য দেখতে হবে? আরো একটি সকাল অতিবাহিত হওয়ার আগে রেডিওতে যেন কিছু একটা শুনতে পাই।” এমন চিন্তাভাবনায় করতে করতে সকালের পান্তা আর মরিচ পোড়া খেয়ে মাঠে যায় কাজী সাহেব। পথে দেখা হয় শ্যালকের সঙ্গে। দুজনই বাংলার কৃষক। মাঠের কাজ আর দেশের কাজ চলে এক সঙ্গে। দেশের বিপদে হাতে তুলে নিতে পারে মৃত্যু। যেমন তুলে নেয় লাঙল ফসল ফলানোর জন্য।

গত বছর উপকূলের বন্যায় হারানো বোনের কথা ভেবে এখনো চোখের কোণে পানি কৃষকের। এই পানি আরো বৃদ্ধি পায় কাজী সাহেবকে দেখে। কাজী সাহেব সম্পর্কে তার বোন জামাই। জীবনের সীমানা পেরিয়ে যখন জীবন চলে তখন সেই জীবন কোনো বাঁধা মানতে চায় না। আজ একটা সভা হবে বলে জানায় কাজী। কৃষকের মই যেমন উঁচু নীচু জমি সমান করে দেয় তেমনি কৃষক সমতার কথা ভাবেন কিন্তু বৈষম্য তাকে ঘিরে ধরে। এই বৈষম্য দূর করার জন্য তাদের এক হতে হবে। এখনো কোন আক্রমণ আসেনি সমুদ্রের কাছাকাছি।

একদিন কৃষক ও তার এক সঙ্গী যাচ্ছে। কাজী সাহেব শ্যালকে জিজ্ঞেস করলে, সে বলে গাছ দেখতে যায়। কিন্তু এই গাছ দেখাকে কঠিন করে দিল ইউনুস খাঁয়ের বলা কথা ও ইঙ্গিত। সে বলল- গাছ দেখতে যায় এই গাছ দেখতে যায়। হাতে দেখালো অস্ত্রের আকৃতি। কাজী সাহেব খানিকটা ভারমুক্ত হলেন। এই সময়ে তো গাছ দেখার সময় না, এই সময় অস্ত্র দেখার সময়। গাছের ফল খেয়ে মানুষ বাঁচে। কিন্তু এখন হাতে অস্ত্র না উঠালে ফল খাবার জন্য জীবন থাকবে না। এভাবে সমমনা কয়েকজন একত্রিত হয়েছে। কৃষক যেমন মাটি ভালো জানে তেমনি তার কাজ ভালো জানে তার মাতৃকা। কেউ জানে না ছেলে কি করে। লোকমুখে প্রচলিত যদি কোন গ্রামে কোন মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া যায় তাহলে ঐ গ্রামই শত্রু পাকিস্তানিদের। তাই মায়ের কাছে বলেই সন্তান দেশমাতৃকার জন্য হাতে অস্ত্র তুলে নেয়।

লোকবল কম। যারা এমন আরো ছোট ছোট অংশে একত্রিত তারা এক হয়ে অপারেশন করার পরিকল্পনা করে। এর ভিতর তাদের দলের এক লোকের বাবার কাছে অস্ত্র আছে এ খবর পেয়ে কয়েকজন পাক-হানাদারের সহযোগী তাকে দিয়ে আসে জেলখানা। সেখানে তাকে প্রাণ দিতে হয় ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে।

মাঠ রেখে নদীর তীরে যাচ্ছে কৃষক। নৌকায় উঠবে এমন সময় নজরুল দৌড়ে এসে খবর দিল, "রতন ডাক্তারকে মারছে। আর্মি এখনো নৌকায় আছে।" ইউনুস খাঁ বললো, লোহালীয়া নদীতে ধরবে তাকে। কিন্তু কৃষক বলে- না, এখানেই ধরব। নদীর তীরে দৌড়ে কিছুটা গিয়ে মাঝিকে বলে নৌকা তীরে আনতে। মাঝিও জানে না তাদের কাছে অস্ত্র আছে। মাঝি প্রথমে না আনতে চাইলেও পরে তীরে আনে। লাঙল রেখে যখন অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে কৃষক তখন সেই অস্ত্রের নিশানা ভুল হওয়ার নয়। নৌকায় থাকা পাক আর্মি পকেটে হাত দিয়ে তার আভিজাত্য প্রদর্শন করবে এমন সময় নৌকায় উঠে মুক্তিবাহিনীর কয়েকজন তাদের থেকে অস্ত্র নিয়ে পিছন থেকে হাত ধরে রাখে। কাজী সাহেব এসে এলোমেলো মার দিতে শুরু করে।

কিছুক্ষণ পর এক পাক আর্মির সিগারেট খেতে মন চায়। কৃষকের কাছে ছিল বক্স সিগারেট তাতে হবে না বলে সে জানায়। কিন্তু উপায় নাই। সিগারেট অর্ধেক খাওয়ার আগেই আবার মার খায়। চরে নিয়ে আসে তাদের। পরে গুলি করে নদীতে দেহ ভাসিয়ে মুছে দেয় চিহ্ন। এরপরই জানাজানি হয়ে যায় কাজী সাহেবদের কাছে আছে অস্ত্র। এরা মুক্তিযোদ্ধা, এরা অস্ত্রধারী।

Comments

    Please login to post comment. Login