Posts

গল্প

অভিশপ্ত বই

March 31, 2025

Bappi Mridha

77
View


"বসতে পারি?"
কন্ঠটা শুনে আমি একটু অবাক হলাম।কেমন একটা ভয় জড়ানো কন্ঠ।আমি প্যাড থেকে মাথা তুলে লোকটার দিকে তাকালাম।উষ্কখুষ্ক চুল।সারা মুখে কেমন একটা আতঙ্ক।
"সিওর বসুন।"
লোকটা ধপ করে চেয়ারে বসলো।
"হ্যা আপনার সমস্যা বলুন।"
"দেখুন ডাক্তার,,,,"
"প্রত্যয়।"
"হ্যা ডাক্তার প্রত্যয়।আসলে আমি একজন ছোট খাটো লেখক।দুই একটা বই ছাপা হয়েছে।আমার নাম বললে দশজনে সাতজন চিনবে।আমি যেহেতু চিকিৎসা করাতে এসেছি তাই আমি আপনার কাছে কিছুই গোপন করবো না।"
লোকটা তার নাম বললো।আমি লিখলাম।
"আপনার এইজ?"
"৫৪"
"এইবার সমস্যা বলুন।দেখুন কোনো তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই।ধীরে সুস্থে বলুন।চাইলে আপনি পায়চারী করতে করতে বলতে পারেন।"
"নো থ্যাংকস। আমি এভাবেই বলতে পারবো।আসলে আমি অনেক গুলো গল্পই লিখেছি।সব গুলোই প্রেমের কাহিনী এবং প্রতিটাই হেপি এন্ডিং ছিল।তাই ভাবলাম এবার এমন একটা গল্প লেখবো যেখানে ছেকা থাকবে।তো গল্পটা লেখা যে দিন শেষ করলাম সেই দিন সকালে কোনো মেয়ের কান্নার কন্ঠে আমার ঘুম ভাঙল। আমি বাসায় একা থাকি।তাহলে কে কান্না করবে।চোখ মেলে যেই বসলাম দেখি আমার লেখার টেবিলের ওখানে চেয়ারে একটি মেয়ে বসে কান্না করছে। আমি তো ভয়ই পেলাম।সাহস করে জিজ্ঞাস করলাম কে?
মেয়েটি শুধু একটা কথাই বারে বারে বলতে লাগলো,আমার সাথে আপনি এটা কেন করলেন?আমি এখন কিভাবে বাচবো?
আমি প্রথমে কিছুই বুঝলাম না।পরে যখন ভালো করে মেয়েটাকে খেয়াল করলাম তখন দেখলাম এই মেয়ের সাথে আমার লাস্ট গল্পের মেয়েটার যাকে আমি ছেকা দিয়েছি গল্পে হুবহু মিল।তখন আমার মাথায় আসলো এই মেয়েটা আসলে আমার হেলুসিনেসন।তো আমি পাত্তা না দিয়ে ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসলাম।খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি চেয়ারে সেই মেয়ে বসা আর সেই একই কথা,আর কান্না।এরপর বিশ্বাস করবেন না আমি যেখানে যাই বাসে, অফিসে, রেস্টুরেন্টে সব খানে সেই মেয়ে।আমি জানি যে এই মেয়ের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই কিন্তু তারপরও,,,"
"আচ্ছা আপনি বাদে আর কেউ ওই মেয়েকে দেখে কিনা সেটা পরীক্ষা করেছেন?"
"হ্যা করেছি।আমি বাদে আর কেউ দেখে না।"
"আই সি।আচ্ছা আমি কি সেই গল্পটা  পড়তে পারি?তাহলে ব্যাপারটা বুঝতে আমার ভালো হতো।"
"সিওর।আমি সাথে করেই একটা কপি নিয়ে এসেছি।এই নিন।"
আমি গল্পের কপিটা নিলাম।"আপনি এক কাজ করেন কাল একবার আমার চেম্বারে আসুন।আজ বাসায় আমি গল্পটা আগে পড়ি।"
"ওকে।থ্যাংকস। "
"তাহলে কাল দেখা হবে।"
এরপর লোকটা চলে গেলো।এরকম কেস আমার কাছে অহরহ আসে।তাই আমি এটাকে তেমন গুরুত্বের সাথে নিলাম না।যাই হোক আজ সারা দিন অনেক রোগি আসলো।তাই এতো রোগির ভিরে ওই লোকের কথা ভুলেই গেলাম।বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করে যখন টিভি দেখতে বসলাম তখন নিচে শিরোনাম পরে তো আমার চোখ ছানাবড়া। 
"বিশিষ্ট লেখক(,,,,,)আজ তার নিজ বাসায় মারা গিয়েছে।তার মৃত্যুর কারন এখনো জানা যায় নি।তবে ধারনা করা হচ্ছে হার্ট এটাক।"

খবরটা পড়েই আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।আমি তার চিকিৎসা করতে পারলাম না।তখনই আমার তার দেয়া গল্পের কথা মনে পরলো।কি এমন ঘটেছে মেয়েটার সাথে।আমার জানার জন্য খুব ইচ্ছে জাগলো।পাশেই ব্যাগটা ছিলো।চেইন খুলতেই কপিটা পেলাম।গল্পের কপিটা রেখে এককাপ চা নিয়ে আসলাম।চা খেতে খেতে পড়া শুরু করলাম।

"শান্ত এই শান্ত দরজা খোল।সারা দিন পরে পরে ঘুম।সকাল এগারোটা বাজে আর উনি এখনো ঘুমায়।সারা রাত বসে বসে কি সব হাবি জাবি লেখে আর সারা দিন ঘুমায়।পড়া লেখা শেষ করে মানুষ চাকরি বাকরি করে।আর উনি লেখক হবে।সবার দ্বারা সব হয় না।ওঠ।"
"উফ তোমার মত মা ঘরে ঘরে আছে বলেই সেই কবে একবার বাঙালীর রবীন্দ্রনাথ ছিলো।নইলে আজ আমাদের কত রবীন্দ্রনাথ থাকতো।এই আমিই একটা জলজান্ত উদাহরণ।"
"হয়েছে আর রবীন্দ্রনাথ হতে হবে না।দরজা খুলে ফ্রেস হয়ে খেয়ে আমায় উদ্ধার করো।"
দরজা খুলতেই দেখি বসার রুমে ছোট কাকি বসা।উনি আবার আরেক জ্বালা। আমার জন্য খালি মেয়ে দেখে বেরাচ্ছেন।নিজের ছেলের জন্য বড় লোক ঘরের একমাত্র মেয়ে আনতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেন নি।ছেলে নিজেই মধ্যবিত্ত ঘরের একটা মেয়ে এনে হাজির।তাই সেই শোধ আমায় দিয়ে নিতে চায়।আমার জন্য একটার পর একটা মেয়ে এনেই ছাড়ছেন।তার কথা হলো মেয়ে কালো হোক খতি নেই। কিন্তু বাড়ি থাকতে হবে।
ঘুম থেকে উঠেই তার মুখ দেখতে হলো?না জানি আজ আমার সারা দিন কেমন যায়।অবশ্য দিনের অর্ধেক তো অলরেডি শেষ।
কোনভাবে কাকি কে এড়িয়ে নাস্তা করে রুমে ধুকে আবার দরজা বন্ধ করে দিলাম।জাক বাচলাম।নাহ আমায় লেখক হতেই হবে।এখন বিয়ে করলে সব স্বপ্ন শেষ।
টেবিলে কাগজ কলম নিয়ে বসে গেলাম।কিন্তু কি লেখবো? মাথায় তো কিছুই আসে না।তাহলে আমার ফ্রেন্ড মনেহয় ঠিকই বলেছিলো।প্রেম না করলে লেখক আর ছেকা না খেলে কবি হওয়া যায় না।তাহলে আমার কি হবে।আমি তো আজ পর্যন্ত প্রেম তো দূরের কথা মেয়েদের সাথে ভালো করে কথাই বলতে পারলাম না।এসব ভাবছি আর কাগজে হিজিবিজি লিখছি।এমন সময় সামনের জানালা থাকে কি যেন একটা আমার মাথায় আঘাত করলো।মাথায় লেগেই সেটা সামনের কাগজের উপর পরলো।মেয়েদের চুলের ক্লিপ।কিন্তু কে মারলো।সামনেই তাকিয়েই চোখ ছানাবড়া। আমার জানালার পরে রাস্তা।রাস্তার অপর পাশের বাসার বারান্দায় একটা মেয়ে দাঁড়ানো।হাতে একটা ছিলেট ধরা।তাতে চক দিয়ে লেখা,"এটা আমার ক্লিপ।"
আমি বললাম, "কেন মেরেছেন?"
মেয়েটি আবার কি যেন লিখে ছিলেট টা ধরলো,"চিল্লাচ্ছেন কেন?কাগজে লিখুন।"
আমি একটা কাগজে বড় করে লিখলাম,"এভাবে ক্লিপ মারার মানে কি?"
মেয়েটি আবার আগের মত লিখলো,"আপনার হাতের লেখা এতো খারাপ কেনো?"
এটা পড়েই মেজাজ আমার চড়ে গেল।একে তো আমায় লেখা লেখিতে ডিস্টার্ব তার উপর এতো বড় কথা।আমি অন্য একটা কাগজে লিখলাম,"এসবের মানে কি?"
"কিছু না।আপনি সারা দিন রাত বসে বসে এতো কি লেখেন,আবার ছিড়ে ফেলেন?"
"আপনি আমায় রোজ ফলো করেন।"
"হু"
"কই আমি তো খেয়াল করলাম না।"
"আপনার খেয়াল করার মত চোখ আছে?."
"আমি একজন লেখক।গল্প লেখি।"
"তা একটাও লেখতে পেরেছেন?"
"পারি নি তবে পারবো।"
"সবার দ্বারা সব হয় না।ফাও কাগজ নষ্ট করেন না।এমনিই এই কাগজের জন্য অনেক গাছ কাটা যায়।"
আমাকে জ্ঞান দেয়া।আমি লিখলাম," এই যে আপনাকে লিখে লিখে রিপ্লে দিচ্ছি এর জন্য যে কাগজ নষ্ট হচ্ছে?"
"সে ক্ষেত্রে আপনিও আমার মত ছোট ভাই এর ছিলেট ইউজ করতে পারেন।"
"আমার কোন ছোট ভাই নেই।"
"তাহলে কিনে আনুন।"
"শুধু শুধু কেন আমি ছিলেট কিনতে যাবো?"
"সেটা আপনার ইচ্ছে।আমি গেলাম।"
এই বলে মেয়েটা ভিতর চলে গেলো।মেয়েটা যতক্ষণ ছিলো আমার ভিতর যেন কিরকম লাগতেছিলো।এরকম আগে হয় নি।বাতাসে যখন মেয়েটার চুল এসে মুখের উপর পরতেছিলো তখন সত্যই মেয়েটাকে অনেক সুন্দর লাগছিলো।আমি ঠিক করলাম যেহেতু লেখক হতে গেলে প্রেম করতে হবে,তাহলে এর সাথেই প্রেম করবো।তাহলে আগে একটা ছিলেট কিনতে হবে।
মা এর কাছে গেলাম,"মা কিছু টাকা দেও।"
"কেন টাকা দিয়ে তুই কি করবি?তুই তো রুম থেকেই বের হস না।"
"লাগবে।"
"কেন,আগে বল।"
"উফফ আচ্ছা ঠিক আছে বলছি ছিলেট কিনবো।"
"কি বলো?এই বয়সে তুই ছিলেট দিয়ে কি করবি?"
"ও তুমি বুঝবে না।লেখক হতে গেলে লাগে।"
মার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ছিলেট কিনে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে জানালার সামনে বসে থাকলাম।কিন্তু মেয়ের দেখা নেই।সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম।কিন্তু আসলো না।মনটা খারাপ হয়ে গেলো।পরের দিন খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠে জানারাল পাশে বসলাম।মা রুমে ঢুকে তো অবাক।আমি এতো সকালে।আমি তাকে ভুলভাল বুঝিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে আবার এসে বসলাম।কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি টের ই পাই নি।ঘুম ভাঙলো যখন কিছু একটা আমার জানালায় এসে আঘাত করলো তার শব্দে।সামনে তাকিয়ে দেখি মেয়েটি ছিলেট হাতে লেখা," বাবা এতো ঘুম, আবার লেখকও হতে চায়।"
আমি ছিলেটে লেখলাম,"কাল আর বারান্দায় আসলেন না যে?"
"কেন আসার কথা ছিলো বুঝি?"
"না মানে,"
"আপনি সত্যিই ছিলেট কিনেছেন দেখছি।"
"হ্যা।কি আর করবো বলেন ওই যে কাগজের অপচয়।"
"এই একটা কাজ ঠিক করেছেন।"
"আচ্চা আপনারা এই বাসায় আসলেন কবে?আগে তো দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না।"
"হ্যা।আমরা একসপ্তাহ হলো এই বাসায় এসেছি।"
"ও আচ্ছা।"
"আর আসা অব্দি দেখছি আপনি খালি টেবিলে ঝিমোচ্ছেন।"
"না আসলে লেখা লেখির ব্যার্থ চেষ্টা আর কি।"
ধীরে ধীরে মেয়ের নাম জানা হলো,কি করে সবই জানা হলো।মেয়ের নাম অতলা।অনার্স সেকেন্ড ইয়ার।ইংরেজি। লাষ্ট কয় দিন আমরা এই ছিলেট নিয়ে ই পরে থাকলাম।আপনি থেকে তুমি অবধি আসলো।বেশ মজাই লাগতো।অতলার ঘরের ভিতর থেকে যতক্ষন অবধি ডাক না আসতো ততোক্ষন এই ছিলেটময় কথোপকথন চলতো।এমনও হয়েছে রাতে আমরা টর্চলাইট জ্বেলে কথা চালিয়ে যেতাম।ধীরে ধীরে কবে যে অতলাকে আমি সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি টেরই পাই নি।একদিন ও বারান্দায় না আসলে আমি পাগলের মত হয়ে যেতাম।
একবার ও আমায় না বলে গ্রামের বাড়ি চলে গেলো।আমি ভেবেছিলাম কি না কি হয়েছে।একদিন তো আমি ওদের বাসার উদ্দেশ্যে বেরই হয়েছিলাম।কিন্তু ওদের বাসা রোডের অপর পাশে হলে হবে কি সেটা ছিল অন্য গলি।আর আমি সেই গলি দিয়ে বাসা আর খুজে পাই নি।এরপর ওরা যখন ফিরে আসে আমি রাগে ওর সাথে একদিন কথাই বলি নি।ও কতো সরি বললো।তবে আমি একবেলার বেশি রাগ ধরে রাখতে পারি নি।বেশি ভালোবাসিতো তাই।আমি ওকে ভালোবাসলেও কখনো বলতে পারি নি।সাহস হয়ে ওঠেনি।আর ও আমায় ভালো বাসে কি না সেটাও জানি না।তো ঠিক করলাম সামনের চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি মানে ভ্যালেন্টাইন ডে তে ওকে আমি আমার মনের কথা খুলে বলবো।
দেখতে দেখতে তেরই ফেব্রুয়ারি চলে আসলো।রাতে উত্তেজনায় আমার ঘুমই হয় নি।রাজি হবে কি না এই সব ভাবতে ভাবতে অনেক রাতে ঘুমিয়ে পরলাম।সকাল বেলা এম্বুলেন্স এর সাইরেনের শব্দে আমার ঘুম ভাঙলো।উফ এই শুভ দিনে আবার কে অসুস্থ হয়ে পরলো?
ঘুম থেকে উঠে জানালার সামনে গেলাম।দেখি আমার টেবিলের কাগজ সব ভিজে গেছে।তার মানে  কাল রাতে বর্ষা হয়েছে।এই অসময়ে বর্ষা?
যাই হোক আমার চিন্তা শুধু অতলাকে নিয়ে। ও কি ঘুম থেকে উঠেছে?সারা দিন অপেক্ষা করলাম কিন্তু অতলা তো দূরের কথা বারান্দায় কেউ আসলো না।মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেলো।ওর উপর রাগ ও হলো আবার দুশ্চিন্তা ও হচ্ছে।ওর কিছূ হলো না তো আবার।ধুর এসব কি ভাবছি।এভাবে আরো দুই দিন কেটে গেলো।কোনো খোজ নেই অতলার।আমি আর অপেক্ষা করতে পারলাম না।ঠিক করলাম ওদের বাসায় যাবো।রাস্তায় বেরিয়ে গেলাম।অনেক কষ্টে ঠিক বাসা খুজে পেলাম।দরজায় নক করলাম।আমার বুক দুরু দুরু কাপছে।আবার একবার নক করতেই দরজা খুললো।একজন ভদ্রমহিলা দরজা খুললো।
"আসসালামুআলাইকুম আন্টি।অতলা আছে?"
"ওয়ালাইকুম ছালাম।তুমি অতলার কে হও?"
"জি আমি ওর ফ্রেন্ড।একসাথে পড়ি।ওর কাছে আমার একটা নোট ছিলো।সামনে এক্সাম তো তাই নোটটা দরকার ছিলো।ওতো দুই দিন ধরে কলেজে যায় না তাই।"
মহিলা আমার কথা শুনে কান্না শুরু করলো।
"আন্টি আপনি কান্না করছেন কেন?অতলার কি হয়েছে?ও ঠিক আছে তো?"
"তুমি ভিতরে আসো বাবা।এরপর আমরা সোফায় বসলাম।"
"জি আন্টি বলেন।"
"আর এক্সাম,ও তো আর কোনদিন কলেজে যেতে পারে কি না সন্দেহ।"বলেই উনি আবার কান্না শুরু করেছেন।আমার তো অবস্থা খুবই খারাপ।পরে যেটা আন্টি বললো তা হলো ওই দিন সকালে অতলা তাড়াহুড়ো করে বারান্দায় যাচ্ছিলো,আর রাতে বর্ষা পরেছিলো তাই বারান্দায় পানি ছিলো।ও সেটা খেয়াল করে নি।পা ফস্কে পরে যায়।মাথায় প্রচন্ড আঘাত পায়।সাথে সাথে সেন্স লেস হয়ে যায়।সকালেই এম্বুলেন্স এ করে হাসপাতালে নিয়া যাওয়া হয়।কিন্তু ডাক্তার কিছুই করতে পারে নি।ও কোমায় চলে যায়।এখন ওর মাথায় নাকি কয়েকটা অপারেশন করা লাগবে।তাহলে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যাবে।কিন্তু তার জন্য অনেক টাকা লাগবে যা ওর বাবা মার পক্ষে সম্ভব না।
আন্টি আমায় বললো," বাবা ওই টা ওর রুম। তুমি গিয়ে দেখো তোমার নোট গুলো পাও কি না।"
আমি কাপা কাপা পা য়ে ওর রুমে ঢুকলাম।ঢুকেই আমি অবাক হয়ে গেলাম।টেবিলের সামনের দেয়ালে অনেক বড় করে লেখা শান্ত।আমার চোখে জ্বল এসে গেলো।আমি টেবিলের উপর একটা ডাইরি পেলাম।কেন জানি ইচ্ছা হলো সেটা পড়ার।ডাইরিটা এক নিমেষে পড়া শেষ করলাম।শেষ করে আমার পাগল হয়ে যাবার পালা।ডাইরিতে আমাদের প্রথম দিনের কথা থেকে শুরু করে সব লেখা।আসলে অতলা ও আমায় ভালোবেসে ফেলেছিলো।অতলাও চেয়েছিলো ওই দিন সকালে আমায় ওর মনের কথা বলবে।ডাইরিটা রেখে আমি এক দৌড়ে বাসায় চলে আসলাম।

একবছর পরের কথা।
আজ অতলার জ্ঞান ফিরেছে।ডাক্তার বললো অতলা এখন বিপদ মুক্ত।চাইলে তারা তাকে কালই বাসায় নিয়ে যেতে পারে।তার ঠিক দুই দিন পর অতলাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো।বাসায় গিয়েই অতলার বারান্দায় যাবার জন্য আর ওয়েট করতে পারছিলো না।বাসায় ঢুকেই সে প্রথমে বারান্দায় গেলো।সেই পরিচিত বারান্দা।কতদিন আসে না।কত দিন শান্তর সাথে কথা হয় না।সামনের জানালার দিকে তাকাতেই অতলার বুকের ভিতর কেমন যেন করে উঠলো।আরে শান্তর রুমের জানালা কই।সেখানে তো কোনো জানালা নেই।পুরো দেয়াল।কোন এক সময় জানালা ছিলো তাও মনে হচ্ছে না।এমন সময় অতলার পাশে এসে তার মা দাড়ালো।
"মা এখানে একটা জানালা ছিলো না?"
"হ্যা।তোর মনে আছে?আসলে ওই বাসার ছোট ছেলের বিয়ের পর কেন যেন জানালাটা ভেঙে ফেলে দেয়াল করা হয়েছে।"
শান্তের বিয়ে হয়েছে?মনে হচ্ছে অতলার মাথাইয়া ঘুরছে। তার মা তাকে ঠিক পরে যাবার মুহুর্তে ধরে ফেললো।শক্ত করে ধরে তিনি অতলাকে বাসার ভিতর নিয়ে গেল।এর পর অতলার  কয়টা দিন কাটলো শুধু কিছু ইনফর্মেসন সংগ্রহ করেই।সে গুলো হলো,তার চিকিৎসার টাকা কোথায় পেলো,আর শান্ত সত্যিই বিয়ে করেছে কি না।করলে কাকে?
সবগুলো উত্তরই সে ঠিক মতো পেয়েছে।
অতলার বাসার লোক জানতো একটা সেচ্ছাসেবী সমিতি অতলার চিকিৎসার খরচ দিয়েছে।
কিন্তু অতলা আসল সত্যটা ঠিক ই খুজে বের করেছে।আর তা হলো।
ওই দিন শান্ত অতলার বাসা থেকে যাবার পর তার বার বার মনে হয়েছে তার জন্য অতলার এই অবস্থা হয়েছে।নিজেকে সে অপরাধী ভাবতেছিলো।ঠিক তার দুই দিন পর শান্তর ছোট কাকি ওর জন্য একটা বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে আসলো।মেয়ে অনেক বড়লোক।তারা শান্তর ছবি দেখে তাকে খুব পছন্দ করছে।মেয়ে একটু কালো আর সামান্য মোটা। কিন্তু তাতে কি মেয়ের নামে দুইটা বাড়ি।
শান্ত রাজি হয়ে গেলো।কিন্তু তার একটা শর্ত ছিলো। তাকে পঁয়ত্রিশ লাখ টাকা দিতে হবে এবং সেই টাকা কোথায় খরচ করেছে তার হিসাব কেউ জানতে চাইবে  না।সবাই রাজি হয়ে গেলো।আর সেই টাকায় অতলার চিকিৎসা হলো।

অতলার সাথে আর কোন দিন শান্তের দেখা হয়নি।কিভাবে হবে? অতলার সেই মুখ ছিলো না শান্তের সামনে দাড়ানোর।

অতলার সারা জীবনের একটাই আক্ষেপ,"বাচিয়ে যখন দিলে তাহলে এভাবে কেন বাচালে যে জীবনে শান্ত নেই।"

গল্পটা পড়া শেষ করে আমার অতলার জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছিলো।চোখে অনেক ঘুম চলে আসছে।তাই ঘুমিয়ে পরলাম।সকালে ঘুম ভাঙলো একটা মেয়ের কান্নায়।চোখ মেলে দেখি আমার সামনে একটা মেয়ে বসা আর কান্না কান্না কন্ঠে বলছে,আমার সাথেই কেন এমন টা হলো?
এর কিছু দিন পর টিভির শিরোনাম ডাক্তার প্রত্যয় তার নিজ বাড়িতে অজ্ঞাত কারনে মারা গেছেন।
এরপর এই গল্পটা আর কেউ পড়েছে কি না জানা যায় নি।

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Bappi Mridha 8 months ago

    একটি অভিশপ্ত গল্প। গল্প যে পড়েছে সেই নাকি মারা যাচ্ছে। কি হবে নাকি সাহস গল্পটি পড়ার মত!