তৃষ্ণা খুবই কষ্টে ছিল। একদিকে সে আরিয়ানের কাছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সাথে মুখোমুখি হচ্ছিল, অন্যদিকে তার মনের ভেতরে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মতো একটি অস্থিরতা তৈরি হচ্ছিল। আরিয়ান আর তার সম্পর্কের মধ্যে যে ফাঁক তৈরি হচ্ছিল, তা যেন ধীরে ধীরে বড় হয়ে যাচ্ছিল।
একদিন, তৃষ্ণা যখন খুবই দুঃখী হয়ে ভাবছিল, ঠিক তখনই তার কাকা, যিনি তাকে খুব ভালোভাবে বুঝতেন, তাকে দেখতে এলেন।
তৃষ্ণার কাকা তাকে একরকম জিজ্ঞাসা করলেন, "তৃষ্ণা, তুই কি ঠিক আছিস?"
তৃষ্ণা শুধু মাথা নত করল, চোখে এক ধরনের বিষণ্ণতা ছিল।
কাকা এক মুহূর্ত চুপ থেকে তারপর বললেন, "তুই কি মনে করিস, তুই আর আরিয়ান একসাথে থাকতে পারবি?"
কাকা একটু এগিয়ে এসে বললেন, "তুই কি ভাবছিস, তৃষ্ণা? তোর চোখ দুটো তো এখন অনেকটা বদলে গেছে। তুই যে শুধু মনের মধ্যে ব্যথা ধারণ করছিস, আমি সেটা বুঝতে পারছি।"
তৃষ্ণা মাথা নিচু করে বলল, "কাকা, আমি সত্যিই জানি না কী করছি। আরিয়ান সবসময় তার কাজ আর ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত থাকে, আর আমি কেবল অপেক্ষা করছি।"
কাকা কিছুক্ষণ ভাবলেন, তারপর বললেন, "তৃষ্ণা, মনে রেখ, পৃথিবীটা খুব বড়। সময় চলে গেলে অনেক কিছুই বদলে যায়। আরিয়ান হয়তো ভালো মানুষ, কিন্তু তার মধ্যে কিছু চূড়ান্ত বৈশিষ্ট্য থাকে যেগুলো তোর মতো কাউকে কখনো বুঝবে না।"
তৃষ্ণার চোখে জল চলে এল।
কাকা আরও কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বললেন, "আমি তোর দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলছি, তৃষ্ণা। তোর চোখ দুটো এখন অনেক পুরনো, অভিজ্ঞ চোখে পরিণত হয়েছে। তুই আরিয়ানকে ভালোবাসিস, কিন্তু আরিয়ান তোর যোগ্য না।"
তৃষ্ণা কাঁপতে কাঁপতে বলল, "কাকা, তুমি কি বলছো?"
কাকা ধীরে ধীরে বললেন, "তৃষ্ণা, তোর জীবন এখন এতটাই গম্ভীর একটা রাস্তায় চলে গেছে, যেখানে তুই কিছুই বুঝতে পারছিস না। আরিয়ানকে তোর প্রাপ্য না, তুই নিজেকে মূল্য দিতে শিখ, কেবল এই স্বপ্নে আর একপাশে নয়।"
তৃষ্ণা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, "আমি জানি কাকা, আমি জানি।"
কাকা তাকে ভালোবাসা দিয়ে আশ্বস্ত করে বললেন, "তুই যদি ভালো থাকতে চাস, নিজের জীবনকে প্রথমে সম্মান করতে হবে। আরিয়ান আর তোর সম্পর্ক কী হবে, সেটা তুই ভাব, কিন্তু মনে রেখ, তোর জীবন তোর হাতে।"
এই কথাগুলো তৃষ্ণার মনের মধ্যে গভীরভাবে বসে গেল। সে বুঝতে পারল, কাকা তার প্রতি এত ভালোবাসা দিয়ে বলছেন, কিন্তু আরিয়ান তাকে যতটা ভালবাসা, তাতে কি কখনো এই সব বুঝতে পারবে?
তার জীবন এখন নিজের হাতে। এই কথাটা ভাবতে লাগলো....
চলবে.....