রাত তখন প্রায় ১২টা। মেঘলা আকাশ, চারদিক নিস্তব্ধ। জনহীন গ্রামের পথ ধরে হাঁটছিল শুভ। তার গন্তব্য ছিল পাশের গ্রাম, যেখানে তার দাদার বাড়ি। কিন্তু পথটা অন্ধকার, শুধু মাঝে মাঝে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই।
হঠাৎ করেই এক বিশাল বটগাছের নিচে এসে থমকে দাঁড়াল সে। গাছটা পুরনো, বিশাল আর রহস্যময়। গ্রামের লোকেরা বলে, এই গাছের নিচে নাকি একসময় এক বিধবার আত্মা বাস করত। কেউ রাতের বেলা এখানে এলে, সে ফিরে যেত না। শুভ অবশ্য এসব ভূতের গল্প বিশ্বাস করত না।
গাছের নিচে দাঁড়িয়ে একটু জিরিয়ে নেওয়ার জন্য বসলো সে। হঠাৎ পেছন থেকে এক ঠান্ডা বাতাস এসে তার গায়ে লাগল। গা ছমছম করে উঠল তার। সে তাকিয়ে দেখে, সামনের দিকে একটা সাদা ছায়ামূর্তি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। শুভর হাত-পা অবশ হয়ে গেল।
"কে... কে তুমি?" কাঁপা কাঁপা গলায় বলল শুভ।
কোনো উত্তর নেই। ছায়ামূর্তিটি ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। তখনই শুভ লক্ষ্য করল, মাটিতে ছায়াটির কোনো প্রতিচ্ছবি পড়ছে না! মুহূর্তেই তার শরীর বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেল।
শুভ দৌড় দেওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু পা যেন মাটিতে আটকে গেছে। ছায়াটি আরও কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, "তুইও কি চলে যাবি...?"
শুভ ভয়ে চিৎকার করতে গিয়েও শব্দ বের করতে পারল না। হঠাৎ, একটি ঘণ্টার শব্দ ভেসে এলো দূর থেকে। মুহূর্তেই ছায়াটি মিলিয়ে গেল বাতাসে। শুভ দৌড়ে দাদার বাড়ির দিকে ছুটল।
পরদিন সকালে, দাদাকে সব কথা খুলে বলল শুভ। দাদা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, "ওই বটগাছের নিচে বহু বছর আগে এক বিধবা আত্মহত্যা করেছিল। এখনো কেউ রাতবিরাতে ওখানে গেলে ফিরে আসে না... তুই ভাগ্যবান যে বেঁচে ফিরেছিস!"
শুভ চুপচাপ বসে রইল। সে জানত, সে আর কখনো ওই পথে হাঁটবে না...