বিয়ের পর এই প্রথম ঈদ। আমাকে যখন এই বাড়িতে আনবেনা শুনলাম তখন মনটা একটু বিষন্ন হয়েছিল। ভাবলাম, সেই কবে ঢাকা থেকে আসলাম, এতগুলো দিন আমাকে ছাড়াই পার করার পর আমাকে দেখার ও একটু ইচ্ছে হলো না? প্রথম ঈদটা একা কাটিয়ে দিতে খারাপ লাগবেনা বুঝি? বিশ্বাস ছিল আমাকে আনতে যাবে।তাই হলো। আমি ভেবেছিলাম এই কয়দিন হয়ত আমাকে খুব মিস করেছে, তাই রাগ ঝগড়া সব বাদ দিয়ে আমাকে নিয়ে এসেছে। কিন্তু আমার ভাবনা সম্পুর্ণ ভুল ছিল। হয়ত বাড়ির মানুষ বা এলাকার মানুষের চাপে পড়েই এনেছে অথবা অন্য কোনো কারনও থাকতে পারে।তবে আমার জন্য খারাপ লাগা থেকে এনেছে ব্যাপারটা একদমই না।নাহয় কি আর সারাদিন একা এক রুমে বন্দী আছি জেনেও আমার সাথে কিছুটা সময় কাটাতে পারলো না? সে তো জানে আমার মোবাইলে ইন্টারনেট নেই,আমি কিই বা করবো ওই রুমে? কারেন্ট চলে গেলে গরমে অস্থির হয়ে গেছি কিনা সেটাও কি জানতে ইচ্ছে করে না? প্রথমে ভেবেছিলাম অনেক দিন পর বাড়িতে আসায় এলাকার ছোট বড় মানুষদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে, ঘরে আসলে ঠিকই আমার সাথে কথা বলার একটু সময় হবে হয়ত।সেই ভাবনাও ভুল হলো, ঘরে আসলো ঠিকই অথচ সামনের রুমেই বসে থাকলো।ঘুমাতে আসলাম তাও তার অপেক্ষায় শুয়ে আছি রাত সাড়ে এগারটা ও। আচ্ছা, তার কি একটুও মাথায় আসে না আমার পরিবারকে ছাড়া এটাই আমার প্রথম ঈদ,আমার তো এমনিতেই একটু খারাপ লাগার কথা, আমাকে একটুও সঙ্গ দেওয়া কি উচিত ছিল না? নাকি সেই অধিকার টাও আমার তর্কের কারনেই হারিয়েছি।আজ বুঝলাম আমাকে ছাড়া এই কয়দিন তার খুব ভালোই কেটেছে। আমি অযথা চিন্তা মাথায় ভিড় করিয়েছিলাম। ভালোই যখন কাটছিলো আমাকে না আনলেই তো হতো।আমিও কিছুটা আনন্দেই ঈদ কাটাতাম।এই প্রথম চাঁদ রাত গেলো ইতি আমার হাতে মেহেদী লাগিয়ে দিল না। আগে আমি ঘুমিয়ে গেলেও ওয় আমার হাত টেনে ধরে মেহেদী লাগিয়ে দিতো। এই ঈদে সেটাও হলো না।
চাঁদ রাতে প্রায় পৌনে বারোটায় যখন আমার কাছে আসে তখন আমি কান্না আটকে রাখতে পারছিলাম না।কিছুটা করুনা করেই হয়ত সারাদিনের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলো।এরপর ঈদের দিন বেশ ভালোই কেটেছে আমার।সারাদিনের অনেকগুলো স্মৃতি মাথায় সংগ্রহ করলাম।ভেবেছিলাম রাগ ঝগড়া সব ভুলে গিয়ে সবকিছু মেনে নিয়েছে হয়ত।এবারও আমাকে ভুল প্রমানিত করে পরদিন কোনোরকম আমাকে বাড়িতে রেখে যায়।আমাদের বাড়ির কিছুই তার মুখে তোলে নি।তখন অবশ্য কারনটা আঁচ করতে পারি নি।পরে জানতে পারলাম আমার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের বাড়িতে আসবেও না কিছু খাবেও না।মুহূর্তেই সবকিছু কেমন জানি ধোঁয়াশা হয়ে গেল। মানুষটা কি পুরোনো কিছুই ভুলতে পারে না? আমি তো আগের তুলনায় অনেক চেষ্টা করছি ভালো হয়ে থাকার।প্রতিবার ঝগড়ার মাঝে আমিই তো চুপ হয়ে যেতাম।উনি তো আমাকে কম কথা শুনায়নি।এরপরও তো প্রতিবার আমিই মিল দিতে গেছি। কেন তাইলে আমার অপরাধ তার কাছে ক্ষমার যোগ্য হয় না?
কাল যখন আমার নামে সালিসের কথা শুনলাম তখন ঈদের দিনের কথা খুব মনে পড়ে ছিল।একসাথে খেলাম,ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করলাম,হাসলাম,ঠাট্টা করলাম,সালামি নিলাম,আরও কত কি,,ঢাকা থেকে আসার সময় আমার জন্য আল্লাহু লেখা ওয়ালমেট গিপ্ট এনেছিল,নিজের হাতে সেটা তাদের সামনের রুমের দেওয়ালে লাগিয়ে দিলাম আর বললাম আপনাদের ঘরে এটা আমার স্মৃতি হিসেবে থাকবে।তখন বুঝি নি আমি সেখানে থাকবো না শুধু স্মৃতিটাই রয়ে যাবে।
সবকিছু নিয়ে সারাদিন কিছুটা মনমালিন্য হলেও ভেবেছিলাম সব ঠিক হয়ে যাবে।আমাকে সে নিজে এই ব্যাপারে কোনো কথা না বলতে বলে সব ঠিকও হয়ে গেছিল। আবার শুরু হলো সকালে আম্মায় তার বোনের কাছে কি বলেছিল সেসব নিয়ে তর্ক বিতর্ক। এবার চুড়ান্ত হয়ে গেল আমাদের সংসার আর টিকবে না।সবকিছু কত অল্প সময়েই শেষ হয়ে যায়।মানুষের সুখ কতটা ক্ষনস্থায়ী তা ভেবেই হতাশ হয়ে পড়ি।
সে যাই হোক,আমাকে যে নিবে না,তার কাছে তো জোর করে যাওয়া যাবে না। আগেরবার ঝগড়ার সময় আমি নিজে থেকেই তো গিয়েছিলাম। সেকারণে অনেক কথাও শুনতে হয়েছিল। এমনকি সে নিজেও একদিন বলেছিল ' চলে তো গেছিলা,আবার ফেরত আসলা কেনো?'। এবার আর আমি নিজে থেকে যাচ্ছি না।দেখি আল্লাহ জীবনের মোড় কোনদিকে ঘুরায়।
জীবনে প্রথমবার কাউকে আপন করে পাওয়ার জন্য কিছুটা চেষ্টা করেছিলাম।আমি থাকাকালীন হয়ত সে বুঝে নি।আমার বিশ্বাস একদিন ঠিকই আমার শুন্যতা অনুভব করবে।
বুঝবি রে বোকা বুঝবি,
যখন আমি থাকবো না, ঠিকই আমায় খুজবি