😔ভালোবাসা কেন এতো অসহায়😔

ভালোবাসা কেন অসহায় 
পর্বঃ- ১

___________
সময়টা সন্ধা ৭টা। প্রতিদিনের মতো আজও ইফতারের পর গত বিশ মিনিট ধরে নিথর শরীর নিয়ে জায়নামাজে বসে আছে সিদরাত। উঠে দাঁড়ানোর মতো শক্তিটুকুও যেন নেই। অসার শরীর নিয়েই উপুড় হয়ে বসে আছে জায়নামাজে। এমন নয় যে স্বামী মেরেছে কিংবা অসুস্থ। মূলত সারাদিনের রোযা রাখার পর কলুর বলদের মতো কাটুনি করতে করতে এখন ক্লান্ত প্রায় সে।

আজ পঞ্চম রমজান। শুধু আজকেই নয় এমন প্রতিদিন-ই সিদরাত ইফতারের পর মাগরিবের নামাজ আদায় করে নিথর হয়ে জায়নামজে বসে থাকে প্রায় বিশ মিনিট এর মতো । হয়তো সুযোগ পেলে আরও বেশ কিছু সময় বসে থাকতো এভাবে। কিন্তু সেই সুযোগ কি আর আছে? প্রতিদিন-ই কিছু সময় বসে থাকার পর কারো না কারো ডাক আসে। যার দরুন ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হয় সিদরাতকে। এমন নয় যে রমজান বলে এখন একটু কাজ বেশি করতে হয় সিদরাতের।। মূলত এই বাড়িতে যেদিন বউ হয়ে এসেছে সেদিনের পর থেকেই দিনরাত এমন কলুর বলদের মতো খাটতে হয় ওকে। এতো বড় সংসারের সব কাজ একা হাতে করতে হয়। এতো এতো কাজের ভিড়ে না কখনো নিজেকে সময় দিতে পারে আর না কখনো স্বামী নামক মানুষটিকে সময় দিতে পারে। তবুও হাসিমুখে কাজ করে যায় অনায়াসে। কখনো টু শব্দটা পর্যন্ত করেনা। সিদরাত যখন নিথর শরীর নিয়ে জায়নামজে বসে কাতরাচ্ছে তখনই দরজায় ঠুকা পড়ল। সাথে ভেসে আসলো একটা মাঝ বয়সী কণ্ঠ।

" সিদরাত! সিদরাত! সিদরাত তোমার হয়েছে? আর কতক্ষণ লাগবে?"  

শাশুড়ীর কণ্ঠস্বর শুনে দ্রুত উঠে দাঁড়ায় সিদরাত। তাড়াহুড়ো করে কোনো রকমে জায়নামজটা তুলতে তুলতে তাড়াহুড়ো কণ্ঠে বলল।

- "এই তো হয়ে গেছে আম্মা। আমি আসছি।

- "একটু তাড়াতাড়ি আসো। তোমার আব্বা বসে আছে চা খাওয়ার জন্য। দেরি হলে আবার রাগারাগি করবে। জলদি এসো।

- "আচ্ছা আপনি যান আম্মা। আমি আসছি এক্ষুনি।" 
সিদরাতের কণ্ঠস্বর দূর্বল। কোনো রকম জায়নামজ টা স্ট্যান্ডে রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেল সে। রহিমা বেগম ততক্ষণে চলে গিয়েছেন। সিদরাত যখন সিঁড়ি দিয়ে নামছিল তখনই মাঝ সিঁড়িতে ফাহাদের মুখোমুখি হয়ে যায়। ফাহাদ মূলত মসজিদ থেকে আসছিল। প্রতিদিন আরেকটু আগেই আসে। আজ কেন যেন নামাজ আদায় করে বাসায় ফিরতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছে ফাহাদের। সিদরাতকে এমন দূর্বল শরীর নিয়ে নিচে নামতে দেখে অবাক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল।

" সিদরাত! তুমি আবারও দূর্বল শরীর নিয়ে নিচে নামছ? তোমাকে না বলেছি ইফতারের পর আর নিচে না নামতে। কিছু প্রয়োজন হলে আমায় কল করতে। চলো রুমে যাবে। এমন দূর্বল শরীর নিয়ে হাঁটতে গিয়ে পড়ে গেলে কি হবে ভাবতে পারছ? আসো আমার সাথে। কিছু লাগলে আমি নিয়ে যাব।"

কথাগুলো বলেই ফাহাদ সিদরাতের হাত ধরে উপরে নিয়ে যেতে চাইল। কিন্তু সিদরাত ফাহাদের হাতটা সরিয়ে দিয়ে বিনীত গলায় বলল।

" আমার জন্য যাচ্ছি না তো। আব্বার জন্য যাচ্ছি। আম্মা বলেছে আব্বা নাকি চা চেয়েছে। তুমি যাও আমি আব্বাকে চা দিয়ে তারপর আসছি।"

সিদরাতের কথা শুনে ফাহাদের রাগ উঠে গেল। তাই রাগী কণ্ঠে বলল--- "কেন? বাড়িতে আর কেউ নেই? তোমাকেই কেন প্রতিদিন দূর্বল শরীর নিয়ে চা দিতে হবে? ইফতারের আগে তো কলুর বলদের মতো খাটো। ইফতারের পর এই এক কাপ চা টাও কি কেউ দিতে পারেনা? বাড়িতে তো লোকের অভাব নেই। কিচেনে যাওয়ার বেলায় কেন শুধু তোমাকেই চোখে পড়ে হ্যাঁ? বাসার বাকি সবাই কি এভারেস্ট জয় করতে যায় যে সব কাজ তোমাকেই করতে হবে? যখনই দেখি শুধু কাজ আর কাজ। সারাদিন খাটার পর ইফতার করে একটু বসতেও পারেনা তার উপর আবার চা আবার ডিনার এটসেটরা এটসেটরা। তোমাকে চা দেওয়ার জন্য কে ডেকেছে হ্যাঁ?"  

ফাহাদের রাগী কণ্ঠ শুনে সিদরাত মিনমিনে গলায় বলল--- "ফাহাদ আস্তে বলো। সবাই শুনবে তো। এমন করছ কেন? আমাকে আম্মাই ডেকেছে।  তুমি এতো হাইপার হয়োনা তো। আমি ঠিক আছি। সারাদিন তোমার অনেক খাটুনি গিয়েছে। তুমি বরং রুমে গিয়ে রেস্ট নাও। আমি চা দিয়ে আসছি।"

- "তোমার কোথাও যেতে হবেনা। তুমি রুমে যাও চা আমি বানিয়ে নিয়ে যাব। যাও রুমে যাও।" ফাহাদের কণ্ঠস্বর রাগান্বিত।

- "পাগলামি করোনা। তুমি রুমে চলে যাও। 
আমি চা দিয়ে আসছি। ইউ নো না? আব্বা আমার হাতের চা ছাড়া খেতে পারেনা। সো, ডোন্ট ওয়েরি।"

কথাটা বলেই সিদরাত দ্রুত পায়ে সামনের দিকে হাঁটা ধরলো। কারণ সিদরাতও জানে তাড়াতাড়ি এখান থেকে কেটে না পড়লে ফাহাদ ওকে কিচেনে যেতে না দিয়ে নিজে চা করে বাবার কাছে নিয়ে যাবে। আর বলবে সিদরাত পাঠিয়েছে। তাই সিদরাত দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নিচে চলে গেল। সিদরাতের এভাবে ইগনোর করে চলে যাওয়া দেখে রাগে ফুসফুস করতে লাগল ফাহাদ।

" ধ্যাত, একে আমি কখনোই বুঝাতে পারিনা। সবসময় বাসার সবার মন জয় করে চলার চেষ্টা করবে। আরে বাবা আব্বা যে ভালোবেসে নয় ওকে খাটানোর জন্য এমন করছে সেটা কি করে বুঝায় ওকে? আমার যে ওর এমন কষ্ট দেখে ভালো লাগেনা সেটা কি করে বুঝায় ওকে? ও বেচারি তো ভাবে সবাই ওকে অনেক ভালোবাসে। তাই সবাই ভালোবেসে ওকে এটা সেটা করতে বলে। ইনফ্যাক্ট সবসময় কাজের মধ্যে রাখে। কিন্তু বোকা মেয়েটা তো বুঝেই না সবাই ওর থেকে রিভেঞ্জ নিচ্ছে।"

কথাগুলো নিজ মনে আওড়িয়ে ফুস করে একটা দম ছেড়ে রুমের দিকে হাঁটা ধরলো ফাহাদ। কারণ সে জানে সিদরাতকে শত বলেও এখন রুমে আনতে পারবেনা। তাই আর বৃথা কষ্ট করে কিচেনে গেল না। বরং সোজা রুমে চলে গেল।

রুমে এসে বিছানায় শুয়ে রইল ফাহাদ। খুব টায়ার্ড লাগছে। এতো বড় দিনে রোজা রেখে গরমে যেন শরীরটা একদম অসার হয়ে আসছে। ফাহাদের একটা কথা বুঝে আসেনা ও সারাদিন ল্যাপটপ টাইপ করা ছাড়া তেমন কোনো কাজ না করেও এই রমজানে ইফতারের পর হাঁপিয়ে উঠে প্রতিদিন। আর সেখানে সিদরাত তো সারাদিন কাজ করে। নিশ্চয় সিদরাতের খুব বেশি কষ্ট হয়। হয়তো ফাহাদের কাছে প্রকাশ করেনা ফাহাদ রেগে যাবে বলে। কিন্তু ফাহাদ...... সে তো অবুঝ নয়। সিদরাতের সব কষ্ট বুঝে। শুধু চুপ করে আছে সিদরাতের দিকে তাকিয়ে। সিদরাত ঝামেলা একদম পছন্দ করেনা। আর পরিবারের সাথে ঝামেলা করলে তো উল্টো ফাহাদের সাথেই কথা বলবেনা। নয়তো সিদরাতকে দিয়ে এই রমজানে এতো কাজ করানো ফাহাদ জন্মের মতো গুছিয়ে দিতো সবার। রমজানের আগে কাজ করিয়েছে সেটা নাহয় না চাইতেও মানা যায়। কিন্তু রমজানে সিদরাতকে দিয়ে এতো কাজ করানো ফাহাদের সহ্য হয়না। বাসায় এতো এতো লোক থাকতে শুধু সিদরাতকেই কেন একা সব কাজ করতে হবে? যদি কারো কাজ করার ইচ্ছা না থাকে তাহলে বাসায় সার্ভেন্ট রাখলেই তো পারে। টাকার তো আর অভাব নেই। বাসায় আট থেকে দশ জন কাজের লোক রাখার ক্ষমতা আছে ওদের। তারপরেও সিদরাতকে সবাই কাজের অর্ডার দেয় এটা ভেবেই ফাহাদের রাগ হয়। কোন দিন না জানি ওর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায় উপরওয়ালায় জানে।

প্রায় আধ ঘন্টা পর সিদরাত রুমে এসে ঢুকল। ফাহাদ এখন একটু রিলেক্স ফিল করছে বিদায় আধ শোয়া হয়ে বসে কোলের উপর ল্যাপটপ নিয়ে সেটার মধ্যে কিছু একটা করছে। বোধহয় কাজ করছে। আসলে রমজান আসলে এই একটা সমস্যা। অফিসের কাজ যেন কয়েক গুণ বেড়ে যায়। যদিও রমজানে অফিসে প্রেজেন্ট থেকে কাজ করতে হয়না। আর কোম্পানি থেকে ওদের জন্য এটা একটা সুবিধা বলা চলে। কিন্তু বাসায় বসে সারাদিন ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকতে হয় এটাই ফাহাদের বিরক্ত লাগে। তবুও কাজ করে যায়। কি আর করা, চাকরি যেহেতু করছে কাজ তো করতেই হবে। ফাহাদকে এখন আবার ল্যাপটপ নিয়ে বসতে দেখে সিদরাত এসে ফাহাদের পাশে বসল। শান্ত গলায় বলল।

" একটু পরেই তো তারাবীহ পড়তে যেতে হবে। এখন আবার ল্যাপটপ নিয়ে বসলে যে? সারাদিন-ই তো কাজ করো। এখন একটু বিশ্রাম নিলে কি হয়? সারাদিন রোজা রেখে টায়ার্ড লাগছে না? কিছু সময় শুয়ে থাকলেই তো পারো।"

ফাহাদ হুলুস্থুল ল্যাপটপে আঙ্গুল চালাচ্ছিল। সিদরতের কথা শুনে এক নজর সিদরাতের দিকে তাকিয়ে আবারও ল্যাপটপে কাজ করতে করতে বলল--- "তুমিও তো পারো।"

ফাহাদের কথার মানে বুঝতে না পেরে সিদরাত প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল।

" কি পারি?"

ফাহাদ এবার ল্যাপটপের কাজ বন্ধ করে সিদরাতের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি রেখে তাকালো। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে শান্ত কণ্ঠে বলল--- "এই যে সারাদিন তুমিও তো অনেক কাজ করো। সন্ধার পর একটু বিশ্রাম নিলেই তো পারো। আমি তো শুধু ল্যাপটপে টাইপ করি। আর তুমি তো সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত ঘর মুছা থেকে শুরু করে রান্না বান্না পর্যন্ত করো। আই থিংক তোমার থেকে আমার বেশি কষ্ট হচ্ছে না।"

ফাহাদের কথায় মুচকি হাসল সিদরাত! হাসিটা মুখে বজায় রেখেই বলল--- "আমার থেকে রিভেঞ্জ নিচ্ছ?"

- "শুধু আমি রিভেঞ্জ নিলে সেটাই বুঝো। আর কেউ রিভেঞ্জ নিলে বুঝোনা?

- "মানে?

- "কিছু নাহ, বাদ দাও। এইটা বলো যে রুমে আসতে এতো সময় লাগল কেন?

- "আসলে আব্বা আম্মার সাথে বসে একটু গল্প করছিলাম তো তাই আসতে একটু লেট হয়েছে।"

তবে ফাহাদের মুখের ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে না সে সিদরাতের কথা বিশ্বাস করেছে। ফাহাদের চাহনি দেখে সিদরাত এবার শুকনো ঢুক গিলতে লাগল। ফাহাদ যে ওর কথা বিশ্বাস করবেনা সেটা সে আগে থেকেই জানতো। তারপরেও যে কেন মিথ্যা বলতে গেল কে জানে? ফাহাদ সন্দিহান গলায় বলল।

" আব্বা আম্মার সাথে গল্প করছিলে? নাকি তোমাকে চা বানাতে যেতে দেখে আরও কয়েকজনের চা খেতে মন চেয়েছিল কোনটা? একদম মিথ্যা বলবেনা আমায়। আব্বা আম্মা যে তোমার সাথে কতটা গল্প করবে সেটা আমি ভালো করেই জানি। আম্মা গল্প করলেও আব্বা কখনোই করবেনা। সো, টেল দা ট্রুথ।"

ফাহাদের রাগী কণ্ঠ শুনে সিদরাত বেশ বুঝতে পারছে ফাহাদকে সত্যি না বলে উপায় নেই। তাই আমতা আমতা গলায় বলল---

- "আব ব ব আ আসলে আমি যখন আব্বার জন্য চা নিয়ে যাচ্ছিলাম তখন বড় ভাবি আর মেজো ভাবি দেখে বললেন উনাদেরও নাকি চা খেতে মন চাইছে। আর বড় ভাইয়া আর মেজো ভাইয়াও নাকি অনেক্ক্ষণ ধরে চা খেতে চাইছে। তাই আব্বার চা টা দিয়ে এসে উনাদেরকেও চা করে দিয়ে আসলাম। তাই আসতে একটু দেরি হয়েছে।

- "সবার জন্য চা করলে। তাহলে আমারটা কোথায় চা?

- "মানে? তুমি তো চা খাওনা। তাহলে এখন হঠাৎ চায়ের কথা বলছ যে? তুমি খাওনা বলেই তো আমি তোমাকে চা দিয়না।

- "না ভাবছি আমার বউ যখন সবার জন্য চা বানানো নিয়ে এতো ব্যস্ত আমিও কেন বাদ যাব। আমিও এখন থেকে চা খাব। তবে কাপে করে নয় এখন থেকে বালতি ভরে চা খাব।"

কথাগুলো বলেই ফাহাদ আবারও ল্যাপটপে হাত রাখলো কাজ করবে বলে। সিদরাত বুঝতে পারছে ফাহাদ ওর উপর রেগে আছে। তাই এমন করে কথা বলছে। আর রাগ করবে নাই বা কেন? ফাহাদ সিদরাতকে কম হলেও হাজারবার বলেছে। যে যেটা করতে বলে সেটা যেন না করে। সবাই ওকে ভালোবেসে নয় বরং ব্যবহার করছে। আর এতে যদি কেউ কিছু বলে তার জন্য ফাহাদ নিজে প্রতিবাদ করবে। কিন্তু সিদরাত ফাহাদের কথাকে অগ্রাহ্য করে সবসময় যে যেটা করতে বলবে সেটা করার জন্য দৌঁড় দেয়। বুঝতে চাই না যে সবাই ওকে বিপদে ফেলতে চায়। তাই ফাহাদের এখন রাগ হচ্ছে। ফাহাদ রেগে আছে বুঝতে পেরে সিদরাত আলতো হাতে ল্যাপটপটা ফাহাদের কাছ থেকে নিয়ে পিছনে রেখে দিলো। খানিক সময় নিয়ে মিন মিনে গলায় বলল।

" প্লিজ রাগ করোনা। আচ্ছা এমন করছ কেন? সামান্য চা-ই তো বানিয়ে দিয়েছি। এতো রাগ করার কি আছে? আচ্ছা ঠিক আছে। এখন তারাবীহ না পড়া অব্দি আর রুম থেকে বের-ই হব না। তারপরেও প্লিজ এভাবে রাগ করে থেকোনা।"

কথাগুলো বলে হুট করে ফাহাদের বুকের এক পাশে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল সিদরাত। সিদরাতের উপর ফাহাদের প্রচুর রাগ থাকলেও সিদরাতের এহেন কাজে ফাহাদের সব রাগ পানি হয়ে গেল নিমিষেই। এমন ইনোসেন্ট হয়ে কথা বললে রাগ পানি না হয়ে উপায় আছে? তবে রাগ কমে গেলেও ফাহাদ সেটা প্রকাশ করল না। বরং মুখে গাম্ভীর্য ভাব রেখে সিদরাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল পরম যত্নে। কয়েক সেকেন্ড দুজনেই নিরবতায় কাটিয়ে দিলো। মিনিট খানিক সময় পার হয়ে গেলে সিদরাত নিজ থেকেই বলে উঠল।

- "রাগ কমেছে জনাবের?

- "মেয়েরা ছেলেদের দূর্বলতাটা খুব ভালো করে বুঝতে পারে, তাই না?

- "হয়তো। আচ্ছা বলো না রাগ কমেছে এখন? নাকি এখনও রেগে আছো আমার উপর?

- "এমন হুটহাট বুকের উপর শুয়ে পড়লে রাগ না কমার উপায় আছে?

- "কে বলেছে এমন হুটহাট রাগ করতে? রাগ যেন নাকের ডগায় থাকে।

- "রাগ করব না তো কি করব? তোমাকে কতবার বলেছি যে যেটা বলে শুনবে না। যে যেটা করতে বলে করবে না। তুমি সবার ভালো চাও। কিন্তু সবাই তোমার ক্ষতি চায়। আব্বার জন্য চা নিয়ে গেছ ভালো কথা। আব্বা আম্মার জন্য কিছু করলে সেখানে আমার বাঁধা নেই। কিন্তু তোমাকে কে বলেছে বাসার বাকি সবার জন্যও চা বানাতে? তাও আবার বানিয়ে রুমে নিয়ে দিয়ে আসতে হয়। নয়তো উনারা তো রুম থেকেই বের হতে পারেন না। উনাদের চা তোমাকেই কেন করে দিতে হবে? ওদের হাত নেই? ওরা নিজেদের চা নিজেরা করে খেতে পারেনা? তোমাকেই কেন যেতে হবে ওদের চা করতে? দিনের বেলায় তো একটা কাজও করেনা। সারাদিন রুমে বসে থাকে। আর এখন তো রমজান মাস। আরও সুযোগ পেয়েছে। রোজা রাখার অজুহাতে সারাদিন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাটায়। বাসায় যে একটা মানুষ কাজের লোকের মতো খাটুনি করে যায় সেই খেয়াল কি ওদের আছে? আবার আসছে অন্যের হাতে চা খেতে। এক কাপ চাও কি নিজে করে খেতে পারেনা? লিসেন, ফারদার যদি আর এমন দেখেছি আমি যে আব্বা আম্মার জন্য ছাড়া অন্য কারো কাজ করেছ তুমি। তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা।  তবে তুমি টেনশন করোনা তোমায় কিছু বলবো না। জাস্ট ওদের একটু সাবান ছাড়া ধুয়ে দিবো এই আর কি। আর তুমি তো ভালো করেই জানো আমি কি করতে পারি। গট ইট?

- "আচ্ছা কাজ করলে কি কেউ মরে যায়? তুমি এমন করো কেন আমি বুঝিনা। আমাকে নিয়ে তোমার এতো চিন্তা কেন? আমি তো ঠিকই আছি। তুমি এমন করো যেন কাজ করতে করতে আমি মরে যাচ্ছি। তুমি উনাদের কিছু বলতে গেলে শুধু শুধু ঝামেলা বাড়বে। ঘরে শুধু শুধু অশান্তি করে লাভ কি?

- "আমি এতো কিছু জানিনা। আমি যেটা বলেছি সেটাই ফাইনাল। এতে ঘরে অশান্তি হোক আর যাই হোক। প্রয়োজনে ঘরে আগুন ধরুক। আই ডোন্ট কেয়ার। সবাইকে বুঝতে হবে আমি বিয়ে করে বউ এনেছি কোনো কাজের মেয়ে নয়।

- "আচ্ছা ঠিক আছে করব না। তবুও প্লিজ তুমি কাউকে কিছু বলে ঘরে অশান্তি করোনা। তুমি তো জানোই ঝামেলা আমার একদম পছন্দ না। তাই প্লিজ কোনো ঝামেলা করোনা।  

- "সেটা সময় হলেই দেখা যাবে।

- "চা খাবে?

ফাহাদ এতক্ষণ সিদরাতের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে সামনের দিকে তাকিয়ে কথা বলছিল। সিদরাতের মুখে চায়ের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো সিদরাতের দিকে। কিছু একটা ভেবে বাঁকা হেসে বলল।

" তুমি চাইলে কিন্তু তোমাকেও খেয়ে নিতে পারি। কি? খাব?"

ফাহাদের মুখে এমন লাগাম ছাড়া কথা শুনে সিদরাত ফাহাদের বুক থেকে মুখ তুলে আলতো হাতে দুটা কিল বসিয়ে দিলো ফাহাদের বুকে। আহ্লাদি গলায় বলল।

" ফাহাদ ভালো হচ্ছে না কিন্তু বলে দিচ্ছি। তুমি সবসময় দুষ্টুমি করো।"

সিদরাতের আহ্লাদি কথা শুনে মুচকি হেসে সিদরাতের গাল টেনে দিলো ফাহাদ।

" ওলে আমার বউটা রে..🥰..."

চলবে.......