Posts

চিন্তা

কর্মক্ষেত্রে রসিকতার অসাধারণ প্রভাব

April 6, 2025

ড: মো: তৌহিদুল আলম খান

558
View

কর্মক্ষেত্রে রসিকতার অসাধারণ প্রভাব

-ডঃ মোঃ তৌহিদুল আলম খান

অফিসে আপনার নিয়মিত ক্লান্তিকর কাজের চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে সহজ এবং সংক্ষিপ্ত উপায় কি হতে পারে বলে আপনি মনে করেনকখনো কি ভেবেদেখেছেন যে মাত্র কয়েক মিনিটের সামন‍্য রসিকতা বা হাস‍্যরস আপনাকে অনেক চাঙা করে তুলতে পারে? ফিরিয়ে দিতে পারে কাজের উদ‍্যম?

সাত বছর আগে, একটি ব্যাংকে কাজ করার সময় আমরা সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিম নিয়মিত একসাথে লাঞ্চ করতাম। আমাদের এক সহকর্মীর অসাধারণ হাস্যরসের দক্ষতা ছিল, এবং লাঞ্চের পর তার মজার কৌতুক বা রসাত্মক গল্প শুনার জন্য সামন‍্য কিছু সময়ের জন‍্য আমরা কয়েকজন তার রুমে যেতাম। আর তিনি আমাদের মজার মজার হাস‍্য রসাত্মক চুটকি কিংবা জীবনের ঘটে যাওয়া কোন মজার ঘটনা বলতেন। আমরা অতি আগ্রহে শুনতাম আর হাসিতে ফেটে পড়তামতারপর আবার নতুন উদ্যোমে কাজে ফিরে যেতাম। এছাড়াও যখনই আমরা কাজের চাপে অতিষ্ঠ হয়ে পড়তাম, তখন তার রুমে গিয়ে তার হাস্যরসের গল্প শোনার অভ্যাস গড়ে তুলেছিলাম। এ যেন ছিল মন ভাল করার একমাত্র ‘অদম‍্য টনিক’। তার হাস্যরস কীভাবে যে আমাদের মেজাজ হালকা করে দিত এবং আমাদের মনে চরম প্রশান্তি এনে দিত, তা সত্যিই অবিশ্বাস্য ছিল। তার মজার গল্পের অসাধারণ দক্ষতা আমাদের চাপ কমিয়ে দিত এবং আমাদেরকে নতুন উদ্যমে কাজে ফিরে যেতে সাহায্য করত।

কর্মক্ষেত্রে হাস‍্যরস (ছবিঃ এআই)

বিভিন্ন পরিস্থিতিতে চাপ কমাতে এবং মনোবল বাড়াতে হাস্যরস বা রসিকতা কিংবা কর্পোরেট ভাষায় পেশাদারী ইংরেজীতে বলতে গেলে ‘হিউমার’ দীর্ঘদিন ধরেই অনেক প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত চর্চা হয়ে আসছে। কিন্তু পেশাদার পরিবেশে বা কর্পোরেট অফিসে হাস্যরস বা রসিকতা কি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়? উত্তর নিঃসন্দেহে হ্যাঁ! কর্মক্ষেত্রে মাঝে মধ‍্যে রসিকতার সম্পর্ক কাজের চাপ কমানোসহ সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে। 

আসুন কর্মক্ষেত্রে রসিকতার কিছু উপকারিতা এবং কীভাবে এটিকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায় তা জেনে নিই:

সু-সম্পর্ক গড়ে তোলে: সহকর্মীদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং সম্পর্ক শক্তিশালী করতে রসিকতা একটি দুর্দান্ত উপায়। যখন মানুষ এক সাথে হাসে, তখন এটি পারস্পরিক বোঝাপড়ার অনুভূতি তৈরি করে। এটি একটি ইতিবাচক কাজের পরিবেশ গড়ে তুলতে সাহায্য করে, যেখানে মানুষ নিজেদের প্রকাশ করতে এবং ধারণা শেয়ারকরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

চাপ কমায়: চাপযুক্ত কাজের পরিবেশে চাপ কমাতে রসিকতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। হাসিএন্ডোরফিননিঃসরণ করে, যা শরীরের প্রাকৃতিক ভালো লাগার একটি রাসায়নিক উপাদান। এটি উত্তেজনা কমাতে এবং শিথিলতাবাড়াতে সাহায্য করে। হাস্যরস বা রসিকতা সমস্যাগুলোকে সুন্দরভাবে গোছাতে সাহায্য করে, যার ফলে সেগুলো কম ভীতিকর মনে হয়।

উৎপাদনশীলতা বাড়ায়: রসিকতা উদ্যম এবং সৃজনশীলতা বাড়িয়ে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। একটি ইতিবাচক মন ও মেজাজ স্বাভাবিকভাবেই যে কোনো কাজকে উদ্বেগ ছাড়াই সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য উৎসাহ এবং শক্তি জোগায় যা একটি কর্মক্ষেত্রকে অধিক দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতার দিকে পরিচালিত করে।

যোগাযোগ উন্নত করে: হাস্যরস যোগাযোগ উন্নত করারএকটি কার্যকর হাতিয়ারও হতে পারে। একসাথে হাসা এবং শিথিল হওয়ার মাধ্যমে সহকর্মীদের একে অপরকে বোঝাএবং শোনার পথ প্রশস্ত হয়। এটি পরিষ্কার যোগাযোগ এবংভুল বোঝাবুঝি কমাতে সাহায্য করে।

আসুন রসিকতা কার্যকরভাবে ব্যবহার করার কিছু উপায় জেনে নিই।

শ্রোতা নির্বাচন: রসিকতা হতে হবে ব্স্তুনিষ্ঠতাই এটি ব্যবহার করার আগে আপনার শ্রোতা নিরধারন করাগুরুত্বপূর্ণ। কেননা একজনের কাছে যা মজার বিষয়, অন্যজনের কাছে তা নাও হতে পারে। পেশাদার পরিবেশে হাস্যরস ব্যবহার করার আগে আপনার সহকর্মীদের হাস্যরসের ধরণ বোঝার জন্য সময় নিন।

রসিকতা হতে হবে যথাযথ : আপত্তিকর, লৈঙ্গিক, বর্ণবাদী, যে কোন ধর্ম-কে নিয়া কটাক্ষ করা  অন্য কোনোভাবে অনুপযুক্ত জোকস এড়িয়ে চলুন। হাস্যরস বা কৌতুক কখনোই কারোকে অস্বস্তি বোধ করানো বা অন্যকে ছোট করার জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়।

পরিমিত ব্যবহার করুন: রসিকতা একটি কার্যকর হাতিয়ারহলেও এটিকে পরিমিতভাবে ব্যবহার করা উচিত।অতিরিক্ত হাস্যরস বা রসিকতা মনোযোগ বিচ্ছিন্ন করতেপারে এবং বর্তমান কাজ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।পরিমিতভাবে হাস্যরস ব্যবহার করুন এবং সবসময় কাজের দিকে মনোনিবেশ রাখুন। তা না হলে আপনি এক সময় সবার কাছে হালকা বা ব‍্যক্তিত্বহীন বলে পরিগণিত হবেন।

কৃত্তিমতা পরিহার করুন: রসিকতা তখনই সবচেয়ে ভালোকাজ করে যখন তা সত্যি হয়। রসিকতা জোর করে চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করবেন না বা এমন কিছু হতে চেষ্টা করবেন নাযা আপনি নন। নিজের মতো থাকুন এবং আপনার প্রাকৃতিক হাস্যরসকে বা আপনার চিরাচরিত অভ‍্যাস বা চরিত্রকে প্রকাশ করতে দিন। নিজেকে কখনো কৃত্তিমতা দিয়ে প্রকাশ করবেন না।

এখন আপনি জানেন যে রসিকতা কীভাবে আপনার কর্মদিবসকে আরও উপভোগ্য করে তুলতে পারে। তাই আপনার কর্মক্ষেত্রে হাসি ছাড়া কোনো একটি দিন নষ্টকরবেন না, কাজের চাপ যতই থাকুক।

একইভাবে, বাড়িতেও খুব বেশি গুরুগম্ভির থাকা উচিত নয়। আপনার পরিবারের সাথে কিছু মজার গল্প বা ঘটনা শেয়ার করুন এবং আপনার ঘরের পরিবেশকে হালকা করুন। অন্তত: রাতের খাবারটা পরিবারের সবাইকে নিয়ে এক সাথে খেতে বসুন এবং সারাদিনের কাজের গল্প করুন। এই সহজ পদক্ষেপটি আপনার প্রিয় পরিবারেরসদস্যদের আনন্দ এবং সুখ দিতে পারে এবং যান্ত্রিক জীবনকে একটু মিষ্টি করে তুলতে পারে।

Comments

    Please login to post comment. Login