তৃষ্ণা ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ছিল, ভাবছিল—আরিয়ান কেন এত অস্থির? হঠাৎ আবার ফোনটা বেজে উঠল। এবারও আরিয়ানের নাম ভেসে উঠল স্ক্রিনে।
"হ্যালো?" তৃষ্ণা দ্রুত ফোন ধরল।
আরিয়ান একটু দম নিয়ে বলল, "তৃষ্ণা, একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। কাল আমাদের বিয়েতে—"
ঠিক তখনই ওপাশ থেকে কারও ডাক শোনা গেল, "আরিয়ান!"
তৃষ্ণা চিনতে পারল, ওটা আরিয়ানের মা।
"তুমি একটু এদিকে এসো তো!"
আরিয়ান একটু থেমে বলল, "তৃষ্ণা, পরে কথা বলছি, এখন রাখছি।"
বলে ফোন কেটে দিল।
তৃষ্ণা অবাক হয়ে গেল। কী বলতে চেয়েছিল আরিয়ান? কিছু কি খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
সে জানত, আরিয়ান সহজে কোনোকিছু গোপন করে না। তাহলে কি সত্যিই বড় কিছু ঘটতে চলেছে?
সে জানত না, আরিয়ান আসলে বলতে চেয়েছিল—তার বস তাদের বিয়েতে আসবে। সেই বস, যাকে নিয়ে আরিয়ান বারবার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিল। সেই বস, যাকে আরিয়ান নিজের আইডল ভাবে।
কিন্তু এই মানুষটির উপস্থিতি কি সত্যিই আশীর্বাদ, নাকি তাদের জীবনে নতুন কোনো ঝড়ের আগমন ঘটাতে চলেছে?
পরদিন সকালটা ছিল যেন এক স্বপ্নের মতো। পুরো বাড়ি আলোতে ঝলমল করছিল। আরিয়ান আর তৃষ্ণার বিয়ে বলে কথা! দুই পরিবারের মধ্যে আনন্দের আমেজ বইছিল।
তৃষ্ণার বাড়িতে সকাল থেকেই অতিথিদের আনাগোনা লেগে ছিল। রঙিন শাড়িতে মেয়েরা, পাঞ্জাবি-পাজামায় ছেলেরা—সবাই উৎসবের আনন্দে মেতে ছিল। তৃষ্ণার বান্ধবীরা তাকে সাজিয়ে দিচ্ছিল, আর কেউ কেউ তার সঙ্গে মজা করছিল।
"দেখ তৃষ্ণা, শেষবারের মতো বল, পালিয়ে যাবি কিনা!" রিয়া মজা করে বলল।
তৃষ্ণা হাসল, "আরিয়ান আমাকে পালাতে দেবে না রে!"
ওদিকে আরিয়ানের বাড়িতেও কম আনন্দ হচ্ছিল না। বরযাত্রীরা সবাই রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আরিয়ান রাজকীয় শেরওয়ানি পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। ওর বন্ধুরা বলছিল, "দোস্ত, এখনো সময় আছে, যদি কিছু মনে থাকে যা বউকে বলিসনি, এখনই ফোন দে!"
আরিয়ান শুধু মুচকি হেসে বলল, "আজ আর কিছু বলা লাগবে না। আজ শুধু তৃষ্ণার চোখের দিকে তাকিয়ে সব বলব।"
অপেক্ষার মুহূর্ত
তৃষ্ণার মনেও এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। আনন্দ, ভয়, উত্তেজনা—সব মিশে ছিল ওর মনে। ও আয়নার সামনে বসে নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে রইল।
সে সত্যিই অসাধারণ সুন্দর লাগছিল। তার পরনে ছিল লাল বেনারসি শাড়ি, হাতে রেশমি চুড়ি, কপালে টিকলি, আর চোখে গভীর কাজল। তার চেহারায় এক অপার্থিব সৌন্দর্য খেলা করছিল, যেন স্বপ্নের রানি।
ঠিক তখনই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো।
"তৃষ্ণা! সবাই প্রস্তুত। বরযাত্রীরা চলে আসবে!"
তৃষ্ণা শাড়ির আঁচল ঠিক করে উঠে দাঁড়াল।
আজ, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই, সে আরিয়ানের জীবনসঙ্গিনী হতে চলেছে।
কিন্তু সে জানত না, এই আনন্দের মাঝেও কিছু একটা ঠিক নেই।
চলবে......