১.
অতি তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ঝগড়া হচ্ছে মুন্সি বাড়িতে।গ্রামে অবশ্য অতি তুচ্ছ বিষয় নিয়েই ঝগড়া শুরু হয়। তারপর সময় যত গড়ায় ঝগড়ার তেজ বাড়ে ; সাথে বাড়ে লোকবল। যেমন , এখানেও দুজনের মধ্যে শুরু হয়েছিল।
আলেয়া বেগম আর সালেহা বেগম -পাশাপাশি দুই ঘরের বাসিন্দা। সকালে ঝগড়া শুরু হয়েছে এই দুজনের মধ্যে। কিছুক্ষণ দুজন ঝগড়া করেছে একে অন্যের সাথে । একটু পরেই দুই পক্ষে আরও একজন করে যোগ দিয়েছে। এখন,দুই পক্ষে মোট চারজন।
দুই পক্ষের এক পক্ষের একজন হলেন রতন মিয়া আলেয়া বেগমের স্বামী রতন মিয়া ছিলেন রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকানে। চা খেতে খেতে আড্ডা দিচ্ছিলেন।এমন সময় একজন এসে খবর দিল, ঝগড়া লেগেছে বাড়িতে। রতন মিয়া অতি দ্রুত বাড়িতে এলেন। এসে দেখেন ঝগড়ার প্রথম ধাপ শেষ হয়ে দ্বিতীয় ধাপে যাচ্ছে। তিনি অবশ্য প্রথমেই স্ত্রীকে নিবৃত্ত করতে চাইলেন দুয়েক কথায়। কিন্তু খেয়াল করলেন,তার স্ত্রীর দোষ নেই; দোষ সালেহার। অগত্যা,তিনি স্ত্রীর পক্ষে লড়াইয়ে নামলেন।
সালেহা বেগমের স্বামী আজিজ শিকদার ঘরেই শুয়ে ছিলেন। শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে বলে আজ কাজে যাননি। আজকে আর যাবেন না, শুয়ে থাকবেন ঠিক করেছেন। কিন্তু রতন মিয়া আর আলেয়া বেগম যদি অন্যায় ভাবে তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া শুরু করে, শুয়ে থাকা যায়? আজিজ শিকদার তাই হাজির হলেন বউয়ের পক্ষ নিয়ে । মোট চারজন মিলে ঝগড়া করে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলছেন।
২.
মুরগি কেন উঠান নোংরা করলো -সেটা নিয়েই ঝগড়ার সূত্রপাত।সবে মাত্র উঠোন ঝাড়ু দিয়ে আলেয়া বেগম রান্না ঘরে গিয়েছেন। এসে দেখেন উঠোন নোংরা! একটু আগে ঝাড়ু দিয়েছেন আর সেই উঠোনে কিনা মুরগী এসে আঁচড়ে মাটি তুলবে? তাই তিনি শুধু বলেছেন,' কোন সতীনের ঘরের মুরগী এই কাজ করলো?' যদিও আলেয়া বেগম ভালো করেই জানেন এটা কার মুরগী। গত সপ্তাহে সালেহা গাছ নিয়ে সামান্য কথা কাটাকাটির জেরে ঝগড়ায় হারিয়ে দিয়েছে। সেটার শোধ তোলার সুযোগ খুঁজছিলেন আলেয়া - যা আজকে পেয়ে গেলেন।
তবে এখন, মুরগির বিষয়টা ঝগড়ার বিষয়বস্তু হিসেবে নাই। শুরু হয়েছে একে অন্যকে ব্যক্তিগত আক্রমণ। সালেহা কোনদিন স্বামীর পকেট থেকে টাকা সরিয়েছে সেটা, আর আলেয়ার সন্তান রিয়াজ কোনদিন গলির মোড়ে সিগারেট খেয়েছে , যা দেখেছে আজিজ শিকদার - এসব বলা শেষ।
এখন, কে কত বড় চরিত্রহীন সেটা প্রমাণ চলছে। আজিজ শিকদার যে মহিলারা গোসল করার সময় উঁকি দিয়ে তাকিয়ে থাকে এটা কি আলেয়া বেগম কোনদিন বলেছে কাউকে?' লুইচ্চা ব্যাডা '- বলেই থুতু ফেলে আলেয়া।
এটা শুনে আজিজ শিকদার একটা গালি দিয়ে গর্জে ওঠে। তারচেয়ে বেশি গর্জে ওঠে সালেহা। স্বামীর উপর এত বড় অপবাদ তিনি মানবেন কেন? আলেয়া বেগমের ছেলে রিয়াজ যে কোন মেয়ে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল সেটা তুলে ধরলো। এভাবেই ঝগড়া তৃতীয় ধাপে পৌঁছাতে শুরু করলো।
৩.
বেলা গড়িয়ে আসে। ঝগড়া থামার লক্ষণ নেই। সাধারণত ঝগড়া সকালে শুরু হলেও দুপুর গড়াতে গড়াতে তেজ কমে যায়।আজকে কমছেনা। কেউ থামাতে এগিয়েও আসছে না। বরং অনেকেই বিভিন্ন ঘর থেকে জানালার পর্দা নামিয়ে তার ফাঁকে ঝগড়া দেখছে। এগুলোই আগামী কয়েকদিনের আলোচনার খোরাক হবে।
ঘরে বসে এতক্ষণ সব শুনছিলেন উত্তর দিকের ঘরের জাফর মিয়া।অনেক্ষণ চুপ থেকে শেষে আর না পেরে জাফর মিয়া বের হলেন ঘর থেকে।
বাড়িতে সবারই অশান্তি হচ্ছে।আর,আশেপাশের বাড়ি লোকজনই বা কি বলবে এগুলো শুনে? ঝগড়া হচ্ছে হোক, কিন্তু কুরুচিপূর্ণ কথা কেন? তাই ঝগড়া থামাতেই হবে। জাফর মিয়া মনে মনে এগুলো বলবেন ভাবলেন।
উঠোনে দাঁড়িয়ে জাফর মিয়া দেখলেন, রতন মিয়া আর আলেয়া বেগম একবার তেড়ে যাচ্ছেন আজিজ শিকদার ও সালেহা বেগমের দিকে। অইদিকে আজিজ শিকদার ও সালেহা বেগমও তেড়ে আসছেন বারবার। তবে ভুলেও নিজেদের উঠোন সীমা অতিক্রম করছেন না তারা কেউই। গ্রামের ঝগড়ায় মারামারি পর্যায় ব্যতীত কেউ কারও সীমানা অতিক্রম করেনা।
জাফর মিয়া চিৎকার দিয়ে উঠলেন,'থামেন, আপনারা। কি শুরু করলেন? আপনাদের আক্কল নাই?'
জাফর মিয়ার কন্ঠ শুনেই দুই পক্ষ একটু চুপ হয়ে গেল। ঘটনার আকস্মিকতায় ঝগড়ায় ছেদ পড়লো।
সালেহা বেগম বিচার নিয়ে আসলেন জাফর মিয়ার কাছে। 'দেখেন তো ভাইসাব,আপনে বলেন দোষ কার?' এই বলে অল্প কথায় সব বলতে লাগলেন। রতন মিয়া ঘরের চৌকাঠে বসে আছেন। আলেয়া বেগম উঠোনে দাঁড়িয়ে আছেন আর অপেক্ষা করছেন জাফর মিয়া কী বলে! জাফর মিয়া কী বলে সেটার উপর তিনি জাফর মিয়াকে বিচারক মানবেন কি মানবেন না -সেই সিদ্ধান্ত নিবেন।
সালেহা বেগমের সব কথা শুনে জাফর মিয়া বললেন,'ঠিকই তো।'
জাফর মিয়ার মুখে ঠিকই তো শুনে আলেয়া বেগম মুখ বেঁকিয়ে বলে উঠলো,
'হু, আসছে আমার আক্কলওয়ালাওয়ালারে...'
৪.
ঝগড়া হচ্ছে মুন্সি বাড়িতে। তিন পক্ষের মোট ৬ জনের মধ্যে।এক পক্ষে রতন মিয়া ও আলেয়া বেগম , আরেক পক্ষে আজিজ শিকদার ও সালেহা বেগম, আর নতুন পক্ষ জাফর মিয়া ও তার স্ত্রী জমিলা খাতুন।
ঝগড়ার বিষয়বস্তু এখন, জাফর মিয়া গ্রামের দোকানের সামনে বহুকাল আগে কোন এক সালিশে সিদ্ধান্ত দিতে গিয়ে মার খেয়েছেন সেটা!
.
.