Posts

চিন্তা

বিপন্ন মানবতা ও আমাদের শ্রেয়বোধ

April 7, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

164
View

চারপাশে এখন আগুনের ভাষা, 
ধোঁয়ার নাভিমূল থেকে উঠে আসছে শিশুর আর্তনাদ।
রক্তমাখা বিকেলের বাতাসে উড়ে যাচ্ছে মানবতার কণ্ঠস্বর।
যারা জন্মভূমি চেনেন হৃদয়ের ছায়ায়, তারা আজ ভূমিহীন;
যারা স্বপ্ন বোনে আকাশ ছুঁয়ে, তারা আজ ধ্বংসস্তূপের ধূলিময় শরিক।

কান্নাভেজা পৃথিবী আজ তাই গভীরভাবে কাঁপছে। শোক ও ক্ষোভের অগ্নিশিখায় দাউ দাউ করে জ্বলছে বিবেক। জর্জরিত মানবতা যেন কাতর প্রার্থনার মতো প্রতিধ্বনিত হচ্ছে—অজস্র শহীদের রক্তভেজা বাতাসে। বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিস্ময়ের ব্যাপার—এই ঝড়ের ঢেউ সবচেয়ে প্রবল ছিল সেইসব রাষ্ট্রে, যাদের গায়ে ‘ননমুসলিম’ তকমা! অথচ আমাদের আপন ভ্রাতৃসম ধর্মভাজন নেতৃত্ব নির্বাক, নিঃস্পন্দ—সাম্রাজ্যবাদীদের সুগন্ধি ললিপপ চুষতে চুষতে তারা যেন মানবতা ভুলে গেছে। অথচ মানবতার তো কোনো বিশেষ ধর্ম নেই—সে তো সর্বজনীন, চিরঅদ্বিতীয়। "No Work, No School!"—আজকের এই আহ্বান তাই স্বতঃসিদ্ধ, অনিবার্য ও ন্যায়সঙ্গত। কেউই অধিকার রাখে না কারো শতাব্দীপুরাতন ভূমি দখল করে হাজারে হাজারে জীবন নির্বাসনে পাঠানোর। যার নিজ হাতে একটি পিপীলিকাকেও প্রাণদান করার ক্ষমতা নেই, সে কী করে মৃত্যু-বর্ষণের যমদূত হয়?

সুতরাং, নিপীড়নের প্রতিটি মুখোশচাপা রূপের বিরুদ্ধে, আগ্রাসনের প্রতিটি চক্রান্তময় পরিকল্পনার বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পথে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানানো—এ শুধু অধিকার নয়, চরমতম নৈতিক কর্তব্যও।

আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিতেও আজ উঠেছে সেই প্রতিবাদের গর্জন। বিশ্বগণমাধ্যমও একে উপেক্ষা করতে পারেনি। কিন্তু—হায়! কিছু নিকৃষ্ট আত্মা, কিছু বিবেকবর্জিত দুর্বৃত্ত সে পবিত্র প্রতিবাদের মিছিলকে কলঙ্কিত করল। তারা কেএফসি ভাঙল, বাটা শোরুমে লুটপাট চালাল, শত শত কোকাকোলা ঢেলে দিল রাস্তায়—অভূতপূর্ব অপচয়ে রঞ্জিত করল এই অভাগা ভূমি! অথচ ঠিক এই দেশেই রোজ রাতে শত শত পথশিশু পেটের ভাঁজে ক্ষুধার হাহাকার নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে! এই কি মানবতার পক্ষ নেওয়া?

আপনারা সংখ্যায় খুব বেশি নন, তবু আপনাদেরই নোংরা কাণ্ডটাই আজ মূল আলোচ্য। মিডিয়ার শিরোনামে এসেছে আপনাদেরই বর্বরতা, হারিয়ে গেছে ন্যায়ের স্বরে উচ্চারিত সেই শত সহস্র সুসন্তানের কান্না আর কণ্ঠস্বর। আপনারা যেন ৮০ মন দুধে একফোঁটা বিষ মিশিয়ে দিলেন। এ কী করলেন? যারা হৃদয় খুলে মজলুমের পাশে দাঁড়িয়েছিল, তাদের সকল সুকর্মে কালিমা লেপে দিলেন!

লুটপাট, ভাঙচুর, অশ্রাব্য ভাষা ও হিংস্রতা—এ কোন সভ্যতার পরিচয়? ফিলিস্তিনের নিষ্পাপ শিশুর পক্ষে কথা বলার অধিকার আপনাদের নেই, বরং আপনাদের কণ্ঠেই সবচেয়ে বড় অশান্তির প্রতিধ্বনি। আপনাদের উপস্থিতিই আজ মানবতার আন্দোলনে বিষবাষ্প ছড়ায়।

এ দেশের, এ বিশ্বের, এ সভ্যতার একচুল জায়গাও আপনাদের জন্য বরাদ্দ নেই। আপনাদের নোংরা মানসিকতা যেন এই জাতির ভবিষ্যৎ না পঁচিয়ে দেয়। অনেক দেখিয়েছেন। রাষ্ট্র বিহিত করুক আর না করুক, যে করেই হোক এবার আপনাদের থামতেই হবে।

মানবতা আজ আর্তনাদ করছে। এবং সেই আর্তনাদের পাশে দাঁড়াতে দিন শুভবোধে দীপ্ত চিন্তক, শিল্পী, কবি ও মানবপ্রেমিকদের। মজলুমের অধিকারের পক্ষে জেগে উঠুক নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, নির্মোহ প্রতিবাদ। এই স্বপ্নময় পৃথিবীতে বর্বরতা ও তস্করতা নয়, বরং জাগুক করুণা, প্রেম আর প্রতিরোধের পবিত্র দীপ্তি।

লেখক: সাংবাদিক 
৭ এপ্রিল ২০২৫

Comments

    Please login to post comment. Login