একটি শিশুর কণ্ঠস্বর হয়তো আজও কাঁপিয়ে দিচ্ছে গাজার আকাশ—
"আম্মু, আমি এখনো বেঁচে আছি। আমাকে এখান থেকে বের করো!"
ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে এই কান্না হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যস্ত শহরের কোনো ক্যাফের মিউজিকের শব্দে ঢাকা পড়ে যায়।
এটাই কি আমাদের সভ্যতা?
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। ৭৫ বছরের পুরোনো এই সংঘাত এখন এতটাই নিষ্ঠুর রূপ নিয়েছে যে, সেখানে মৃত্যু সংখ্যা আর পরিসংখ্যান নয়—তা হয়ে উঠেছে পরিচিত নাম, পরিবারের কেউ।
২০২৪ সালের শেষদিক থেকে গাজায় যা ঘটছে, তা আর কোনো "রাজনৈতিক সংঘাত" নয়, এটা একপ্রকার গণহত্যা।
হাসপাতাল, স্কুল, শিশুর আশ্রয়স্থল—কোনো কিছুই রেহাই পাচ্ছে না।
বোমার শব্দ গাজার আকাশে যতটা প্রভাব ফেলছে, তার চেয়েও বেশি ভারী হয়ে উঠছে মানুষের নিঃশ্বাস।
ইসরায়েল যা বলছে:
তাদের দাবি, এই অভিযান শুধুই সন্ত্রাসবাদ বিরোধী। তারা হামাসকে ধ্বংস করতে চায়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, একটি গোষ্ঠীর জন্য পুরো জাতিকে ধ্বংস করার অধিকার কি কোনো দেশের আছে?
যেখানে একটি হাসপাতালের ওপর একাধিকবার বোমা ফেলা হয়, শিশুদের আশ্রয়কেন্দ্রে টার্গেট করা হয় — সেখানে কি কেবল “হামাস” ছিল?
ফিলিস্তিনিরা যা চায়:
তারা চায় নিজেদের একটি দেশ, নিজেদের জন্য একটা নিশ্বাস ফেলার জায়গা।
১৯৪৮ সালে রাষ্ট্র হারিয়ে ফেলা এই জনগোষ্ঠী যুগের পর যুগ ধরে বেঁচে আছে অবরোধ, অপমান, নিপীড়নের মাঝে।
তাদের বর্তমান জীবনের নাম—জরুরি চিকিৎসা, ক্ষুধা, আতঙ্ক আর রাতভর বিমান হামলা।
একটি শিশুর জন্মের আগেই সেখানে তার মৃত্যুর আশঙ্কা তৈরি হয়ে যায়।
বিশ্ব কী করছে?
সত্যি বলতে, বিশ্ব কেবলই 'নিন্দা' করছে।
জাতিসংঘ বিবৃতি দিচ্ছে, পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো বলছে ‘দু'পক্ষ শান্ত থাকুক’।
কিন্তু কেউ সরাসরি বলছে না—এই বর্বরতা বন্ধ করো।
একজন ফিলিস্তিনির মৃত্যু যেন এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতির দাবা খেলার একটা ‘পিয়ন’ মাত্র।
মিডিয়া কি সত্য বলছে?
পশ্চিমা মিডিয়ার বড় একটা অংশ গাজার বাস্তব চিত্র দেখাতে ভয় পাচ্ছে।
কোনো একটি রাষ্ট্রকে ‘সুরক্ষা’র নামে রক্ষা করতে গিয়ে তারা নিজেরা নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছে।
অন্যদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সাধারণ মানুষই এখন হয়ে উঠছে প্রকৃত সাংবাদিক, যারা লাইভে দেখাচ্ছে ধ্বংসের আসল রূপ।
আমাদের করণীয় কী?
আমরা হয়তো যুদ্ধ থামাতে পারি না, কিন্তু আমরা চুপ থাকতে পারি না।
আমাদের কলম, ক্যামেরা, কণ্ঠ—যা কিছু আছে তা দিয়ে আমাদের দাঁড়াতে হবে নিপীড়িতদের পাশে।
মানবতা আজ পরীক্ষা দিচ্ছে, এবং আমরা যেন অন্তত এই পরীক্ষায় ব্যর্থ না হই।
শেষ কথাটা বলি:
গাজায় আজ যে শিশুটি মা হারিয়েছে, কাল সে বড় হবে—হয়তো আরেকটি যুদ্ধের সৈনিক হয়ে।
এই চক্র ভাঙা জরুরি।
না হলে আমাদের পৃথিবী শুধু আধুনিক হবে, মানবিক নয়।