ছেলেটির নাম আয়মান।
একটা সময় তাকে সবাই বলত “নিউক্লিয়াস”—একটা ক্লাসরুমের কেন্দ্রবিন্দু, আলো-আঁধারির মাঝে স্থির একটা উজ্জ্বল কণা।
তার চিন্তা ছিল তীক্ষ্ণ, চোখ দুটোয় ছিল আগুন, আর স্বপ্ন—যেন একটা পূর্ণ মহাবিশ্ব।
কিন্তু পৃথিবী সব সময় নিউটনের গাণিতিক নিয়মে চলে না।
স্রোত বিপরীতে গেলে অনেক সময় তীরে পৌঁছানো যায় না, মাঝপথেই ডুবে যেতে হয়।
আয়মান হারিয়ে যেতে শুরু করেছিল খুব ধীরে—প্রথমে ক্লাসে অনুপস্থিতি, পরে নিজের মধ্যেই চুপচাপ ডুবে থাকা।
প্রথমেই বোঝা যায় না, কখন যেন সে নিজের কক্ষপথ থেকে সরে গেছে।
জীবনের প্রকৃত পদার্থবিদ্যা বলে— "যে নিউক্লিয়াস নিজের শক্তি হারায়, সে আর তার ইলেকট্রনদের ধরে রাখতে পারে না।"
আয়মানেরও তার চারপাশ হারিয়ে ফেলেছিল—বন্ধু, পরিবার, বিশ্বাস।
তার স্বপ্নগুলো একসময় ছিল ব্যারিস্টার হওয়ার, পরিবারের চাহিদা পূরন করার, সমাজে আলো ফেলার।
কিন্তু হঠাৎ করে পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভেঙে পড়ল।
বই থেকে তার মন উঠে গেলো—প্রথমে দোকানে, পরে রাস্তায়, শেষে কিছু বেআইনি কাজে।
সে নিজের ইচ্ছেতে দুঃখী হয়নি—জীবন তাকে বেছে নিতে বাধ্য করেছিল।
এভাবেই একদিন সে “আয়মান” নয়, এক পরিচিত অপরিচিত ছায়া হয়ে গেলো।
আজ কেউ আর তাকে “নিউক্লিয়াস” বলে না।
সে এখন নিজেকেই ভুলে গেছে।
তবুও কোনো এক সন্ধ্যায়, রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা হয়তো হঠাৎ আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবে— "আমি কি আসলেই ধ্বংস হয়েছি, নাকি এখনো কোথাও একটুখানি শক্তি রয়ে গেছে?"
