Posts

উপন্যাস

তুমি আছো বলেই

April 8, 2025

Md Kawsar Ahmed

75
View

অধ্যায় ১: প্রথম দেখা

সায়ন্তিকা — শহরের এক মাঝারি পরিবারের মেয়ে। পড়াশোনায় ভালো, স্বপ্ন দেখে বড় কিছু করার। ঢাকায় নতুন ভর্তি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। নতুন শহর, নতুন জীবন, আর একরাশ অনিশ্চয়তা নিয়ে হলে উঠল সে।

অন্যদিকে, আদিত্য — এক সোজা-সরল কিন্তু মেধাবী ছেলে। নিজেকে খুব বেশি প্রকাশ করে না, তবে যার ভেতরে এক সমুদ্র গভীরতা। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র।

তাদের দেখা হয় ক্যাম্পাসের এক বইমেলায়। একটা পুরনো কবিতার বই দুজনেই একসাথে তুলতে গিয়ে হাত ছুঁয়ে যায়। চোখাচোখি হয়, কিন্তু কেউ কিছু বলে না। শুধু মৃদু হাসি বিনিময়।

অধ্যায় ২: বন্ধুত্বের শুরু

পরদিন ক্লাসের সামনে আবার দেখা। এবার সায়ন্তিকা এগিয়ে এসে বলল, “তুমি কি কাল কবিতার বইটা কিনেছিলে?”
আদিত্য হেসে বলল, “না, আমি তো তোমার চোখে পড়ে গিয়েছিলাম। বইটা পরে খেয়াল করিনি।”
সায়ন্তিকা লজ্জা পেয়ে হেসে ফেলল। সেদিন থেকেই শুরু বন্ধুত্ব।

দিন যেতে লাগল, বন্ধুত্ব গাঢ় হতে থাকল। তারা একসাথে ক্যান্টিনে বসত, লাইব্রেরিতে পড়ত, ক্লাস শেষে হেঁটে ফিরত। দুজনেই জানত, কিছু একটা গড়ে উঠছে, কিন্তু কেউ কিছু বলত না।

অধ্যায় ৩: অনুভব

এক বিকেলে, বৃষ্টি পড়ছিল। ক্যাম্পাস ভিজে গেছে, বাতাসে ছেয়ে আছে কাঁচা মাটির গন্ধ। সায়ন্তিকা হঠাৎ বলল,
“আদিত্য, তুমি কি কখনও কাউকে খুব আপন মনে করেছো, অথচ বলতে পারোনি?”
আদিত্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “হ্যাঁ, প্রতিদিন দেখি তাকে… কিন্তু ভয় হয়… যদি হারিয়ে যায়?”

সায়ন্তিকার চোখে জল এসে গেল। সে আস্তে করে বলল, “তাহলে হারানোর আগে বলো… আমি শুনতে চাই।”
আদিত্য হাত ধরে বলল, “তুমি না থাকলে আমার দিনটা শুরু হয় না… তুমি আছো বলেই আমি আছি।”

অধ্যায় ৪: ভালোবাসা আর বাস্তবতা

তাদের ভালোবাসা ধীরে ধীরে পরিপূর্ণতা পেল। কিন্তু বাস্তবতা সবসময় সহজ হয় না। সায়ন্তিকার পরিবার বিয়ে দিতে চায় অন্যত্র, এক ধনী প্রবাসী পাত্রের সঙ্গে।

আদিত্য তখন চাকরির ইন্টারভিউ দিচ্ছে। সে জানে, এখনই কিছু প্রমাণ করতে না পারলে সায়ন্তিকাকে হারিয়ে ফেলবে।
তবু, সে হাল ছাড়ে না। নিজের উপর ভরসা রাখে, আর সায়ন্তিকাও তাকে বিশ্বাস করে।

অধ্যায় ৫: প্রতীক্ষার গল্প

একদিন, চুপচাপ সায়ন্তিকা একটি চিঠি দিয়ে গেল আদিত্যর হাতে।
“তুমি যদি বিশ্বাস করো… আমি অপেক্ষা করব…
বাকি জীবনটা একসাথে কাটানোর জন্য…
শুধু তুমি এসো, আমার হাতে হাত রাখো।”

এক বছর পর... আদিত্য ফিরে এল। সে এখন একটি স্বনামধন্য কোম্পানির সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। ঠিক বিয়ের আগের দিন, সে পৌঁছে গেল সায়ন্তিকার বাড়িতে।

দরজায় দাঁড়িয়ে বলল, “আমি এসেছি… কথা রাখার জন্য।”

সায়ন্তিকার চোখে জল, কিন্তু মুখে হাসি —
“আমি জানতাম, তুমি আসবে… কারণ তুমি আছো বলেই, আমি আছি।”


---

অধ্যায় ৬: নতুন শুরু

সায়ন্তিকার পরিবার প্রথমে রাজি হয়নি। আদিত্য ধনী নয়, প্রতিষ্ঠিতও নয় পুরোপুরি। কিন্তু সায়ন্তিকা প্রথমবারের মতো গলা চড়িয়ে বলল,
“এই ছেলেটার সঙ্গে আমি ভবিষ্যৎ দেখতে পাই। ওর পাশে দাঁড়াতে পারলে আমিও বড় হব।”

তাদের সাহসিকতা আর ভালোবাসা শেষমেশ পরিবারের হৃদয় গলিয়ে দিল। ছোট্ট এক অনুষ্ঠান — বন্ধু আর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের নিয়ে — তারা বিয়ে করল।

তাদের নতুন সংসার শুরু হলো এক রুমের ভাড়া ফ্ল্যাটে।
দরজা ছিল পুরনো, কিন্তু স্বপ্ন ছিল নতুন।
আদিত্য সকালে অফিস যায়, সায়ন্তিকা পড়াশোনা শেষ করে একটা স্কুলে পড়ায়। সন্ধ্যায় তারা একসাথে রান্না করে, একসাথে চা খায়, আর বারান্দায় বসে ভবিষ্যতের গল্প করে।

অধ্যায় ৭: ঝড় ও আলো

একদিন আদিত্যর চাকরি চলে যায়। হঠাৎই সবকিছু অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সংসারে টান পড়ে, হালকা খিটিমিটি শুরু হয়।
সায়ন্তিকা একদিন বলল,
“তুমি আগে যে ছিলে, এখনও সেই আদিত্য। আমি যাকে ভালোবেসেছি, সে তো শুধু চাকরির জন্য নয়… আমাদের ভালোবাসা শুধু সুখের দিনে নয়, কষ্টের দিনেও।”

আদিত্য চোখ ভিজিয়ে ফেলল।
“তুমি না থাকলে হয়তো আমি ভেঙে পড়তাম। এখন আবার নতুন করে শুরু করব, আমাদের জন্য।”

তারপর সে একটা ছোট স্টার্টআপে কাজ শুরু করল, আর ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াল।

অধ্যায় ৮: পূর্ণতা

পাঁচ বছর পর…
তারা এখন নিজের ফ্ল্যাটে থাকে। ব্যালকনিতে ছোট একটা গাছের বাগান আছে। সায়ন্তিকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ায়, আর আদিত্য নিজের একটা সফটওয়্যার ফার্ম খুলেছে।

এক সন্ধ্যায়, সায়ন্তিকা বলল,
“তুমি কি জানো, এই পুরো যাত্রায় আমার সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত কোনটা?”
আদিত্য হাসল, “বিয়ের দিন?”
সায়ন্তিকা মাথা নাড়ল,
“না, সেই দিন, যেদিন তুমি বলেছিলে— 'তুমি আছো বলেই আমি আছি।' আজও সেটা প্রতিদিন অনুভব করি।”

আদিত্য চুপ করে সায়ন্তিকার হাত ধরল। হাওয়ায় ওদের বাগানের তুলসী গাছটা দুলে উঠল। আকাশে তখন একফালি চাঁদ উঠেছে — সেই চাঁদ, যেটার আলোয় ওরা দু’জনে এখনো নিজেদের ভালোবাসার গল্প লিখে যাচ্ছে।


---

শেষ নয়... এটা তো শুরু।


---

অধ্যায় ৯: আশীর্বাদ

ছয় বছর কেটে গেছে। জীবনের অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এখন আদিত্য আর সায়ন্তিকা নিজেদের মতো একটা স্থিতিশীল জীবনে পৌঁছেছে। কিন্তু একটা শূন্যতা থেকেই যায়— মা হওয়ার স্বপ্ন। সায়ন্তিকার মাঝে মাঝে মনে হতো, কিছু একটা অপূর্ণ।

চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পর জানা গেল, সায়ন্তিকার সন্তান ধারণে কিছুটা সমস্যা আছে। প্রথমে মানতে পারছিল না কেউই। রাতে বারান্দায় চুপচাপ বসে থাকত সে।

একদিন আদিত্য পাশে এসে বলল,
“তুমি আমার সব… যদি বাচ্চা না-ও হয়, তবুও আমার জীবন পূর্ণ… কারণ তুমিই আমার ঘর।”
সায়ন্তিকা চোখের জল সামলে বলল,
“তুমি না থাকলে আমি নিজেকেই ভুলে যেতাম।”

তবে সৃষ্টিকর্তা যেন তাদের ভালোবাসাকে দেখে আশীর্বাদ করল। কয়েক মাস পরেই তারা জানতে পারল, সায়ন্তিকা অন্তঃসত্ত্বা।


---

অধ্যায় ১০: ছোট পায়ের শব্দ

নয় মাস পর, একটা ছোট্ট মেয়ে আসে তাদের ঘরে। ওর নাম রাখে “অদ্বিতা” — যার অর্থ, “অদ্বিতীয়”, কারণ তার আগমনে জীবন যেন এক নতুন রং পেল।
রাত জাগা, ক্লান্তি, অথচ অদ্ভুত শান্তি— একসাথে তারা নতুন এক অধ্যায়ে পা রাখল।

সায়ন্তিকা বলল,
“দেখো, এই ছোট মুখটাই আমাদের সমস্ত যন্ত্রণার ঔষধ।”
আদিত্য ওর হাত ধরে বলল,
“তুমি আছো বলেই সব সম্ভব হয়েছে… এই ছোট্টটাও তারই প্রতিফলন।”


---

অধ্যায় ১১: চিরকাল

সময় এগিয়ে যায়। অদ্বিতা বড় হতে থাকে। বাবা-মা দুজনেই ওকে শেখায় ভালোবাসা মানে কী— শুধুই প্রেম নয়, একে-অপরের পাশে থাকা, শ্রদ্ধা করা, বিশ্বাস রাখা।

এক সন্ধ্যায়, যখন অদ্বিতা স্কুল থেকে ফিরে একটা কবিতা পড়ে শোনায়, সায়ন্তিকা মুচকি হেসে বলে,
“এই তো, ভালোবাসার নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে… ওর মধ্যে আমাদের গল্প লেখা থাকবেই।”

আদিত্য ওর কাঁধে মাথা রেখে বলে,
“তুমি আছো বলেই… আমি এখন একজন বাবা, একজন স্বামী, একজন পূর্ণ মানুষ।”


---

শেষ কথা (উপসংহার):

জীবন সবসময় পারফেক্ট হয় না। কিন্তু যখন দুটি মানুষ একে অপরকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর সহানুভূতির চোখে দেখে, তখন সেই জীবনটাই হয়ে ওঠে সুন্দরতম উপন্যাস।


---

তুমি আছো বলেই — এটা শুধু একটি ভালোবাসার গল্প নয়, এটি হলো একসাথে বাঁচার গল্প।


--

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Md Kawsar Ahmed 7 months ago

    সবার সারা পেলে আরো লিখবো