Posts

গল্প

মনস্তাত্ত্বিক শিকার

April 9, 2025

Sunjida Islam

122
View

নাফিজা HSC পরীক্ষা শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করল। তার ইচ্ছা ছিল ঢাকায় পড়াশোনা করতে, কারণ সে জানত যে, এই জায়গায় তার নতুন জীবন শুরু হবে। কিন্তু তার বাবা কোনোভাবেই রাজি হচ্ছিলেন না। নাফিজা জানতো, তার বাবা তাকে ঢাকায় পাঠাতে কখনই মানবেন না, কিন্তু তার মা তাকে সমর্থন করল এবং বলল, "তুমি যা চাও, তা করতে পারো। আমি তোমার পাশে আছি।"

একদিন, নাফিজা তার মা'কে বলল, "মা, আমি ঢাকায় পড়তে যাব। আমি জানি বাবা রাজি হবেন না, কিন্তু আমি যা চাই, তা করতে চাই।"

তার মা নরম কণ্ঠে বললেন, "তুমি যা চাও, তা অবশ্যই করবে, কিন্তু বাবার সাথে কথা বলা জরুরি।"

এমন সময়, নাফিজার বাবা ও মা'র মধ্যে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়। তার বাবা চাইছিলেন নাফিজা যেন ঘরেই থাকে এবং কাছাকাছি পড়াশোনা করে, কিন্তু মা তাকে সমর্থন করছিলেন। অবশেষে, নাফিজার মা সিদ্ধান্ত নেন যে, মেয়েটি ঢাকায় যাবে।

পরের দিন সকালে, খুব তাড়াহুড়ো করে নাফিজাকে ঢাকা পাঠিয়ে দেয়া হয়। তার বাবা আসেননি নাফিজাকে পৌঁছাতে, কিন্তু তার মা নিজে তাকে বাসে তুলে দেয়। নাফিজা এক দৃষ্টিতে তার মা'কে দেখল, কিছু বলার আগেই মা তাকে গলে জড়িয়ে ধরলেন। নাফিজার মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি ছিল, কারণ নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছিল সে, কিন্তু পুরনো পৃথিবী তাকে ছেড়ে


 

নাফিজা ঢাকা যাওয়ার জন্য রওনা হলো। ঢাকায় তার এক দূর সম্পর্কের চাচা থাকে, যিনি তাকে নিতে আসবেন। একবার ঢাকায় পৌঁছে, নাফিজা নতুন একটি ফ্ল্যাটে উঠবে, যেখানে তার নতুন স্বপ্নগুলো সিক্ত হবে

তার মনে অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা—এখন থেকে তার পথ নতুনভাবে শুরু হবে

দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা জার্নির পর নাফিজা বাস স্টেশনে নামলো।

"ওই যে! মোকবুল চাচা!"

চাচা এগিয়ে এলেন।
"কেমন আছিস মা? কোনো অসুবিধা হয়নি তো?"

নাফিজা বলল,কোনো অসুবিধা হয়নি চাচা ।

এরপর সিএনজি করে চাচার বাড়ি পৌঁছালো।

দরজায় চাচি দাঁড়িয়ে ছিল। নাফিজাকে দেখে তার মুখটা কেমন কালো হয়ে গেলো। তারপর বলল,

"আয় ভিতরে খাবার আছে নিজে বেড়ে খেয়ে নে

আমি ঘুমাতে গেলাম

নাফিজার বুঝতে বাকি রইলোনা চাচী তার আশায় খুশি হয়নি ।

পরের দিন সকালবেলা, নাফিজা পরীক্ষা দিতে গেলো

তিন দিন পর, রেজাল্ট দিবে

সে ভাবলো, "এভাবে বসে থেকে লাভ নেই। নিজেই একটা ফ্ল্যাট খুঁজে বের করবো।"

যেই কথা, সেই কাজ। দুই দিন ধরে খুঁজলো, কিন্তু বাজেট অনুযায়ী কিছুই পাচ্ছিল না

তার ওপর চাচির ব্যবহারও কেমন অদ্ভুত লাগছিল।

শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছিল


 

হঠাৎ, এক ভদ্র মহিলা বলে উঠলো,

"কী গো মা, এত মন খারাপ কেন?"

নাফিজা একটু অবাক হলো। এই নতুন শহরে মানুষ কেমন হতে পারে, সে এখনো জানে না—ভালো, নাকি খারাপ?

মহিলা হেসে বললেন,

"ভয় পেয়ো না, আমি তো তোমার মায়ের মতো!"


 

এই অচেনা মহিলার আচরণে নাফিজা একটু দ্বিধায় পড়ে গেল। নতুন শহরে এত সহজে কারও ওপর বিশ্বাস করা যায় না, তবুও মহিলার মমতাময়ী কণ্ঠস্বর ও হাসিমুখ তার মনে খানিকটা ভরসা জাগাল।

— "আমি ঠিক আছি আন্টি," নাফিজা বিনয়ের সাথে বলল।

— "ঠিক আছো? তোমার চেহারা তো তা বলছে না!" মহিলা হালকা হেসে আবার বললেন।

নাফিজা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল। বাসায় ফিরে যাওয়ার কথা ভেবে তার মন আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। মহিলা তার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— "কোথায় যাবে তুমি?"

নাফিজা কিছুক্ষণ ভাবল, তারপর বলল,

— "বাসায় ফিরে যাবো। ফ্ল্যাট খুঁজতে এসে পারলাম না, এখানে থাকা সম্ভব নয়।"

মহিলা খানিকটা ভাবলেন, তারপর বললেন,

— "একটা ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে দিতে পারি, যদি তোমার সত্যি দরকার হয়।"

নাফিজার মনে অদ্ভুত এক অনুভূতি জাগল। এই মহিলা কে? কেন তার সাহায্য করতে চাইছে? বিশ্বাস করা ঠিক হবে তো?


 

এরপর মহিলা বললেন,
— "থাক বাবা, তুমি বোধহয় ভয় পাচ্ছো। এই নাও, এটা আমার নম্বর। যদি প্রয়োজন হয়, আমাকে কল দিও।"

এ কথা বলে মহিলা চলে গেলেন।

নাফিজাও চাচার বাসায় ফিরে গেল।

রাতে নাফিজা চাচা-চাচির ঘর থেকে শুনতে পেল—

চাচি বলছেন,
— "আমার আর ভালো লাগছে না, এই মেয়েকে বিদায় করো!"

এরপর চাচা বললেন,
— "উঁহু! চুপ থাকো, শুনে ফেলবে তো!"

এ কথা শুনে নাফিজার মনে ভীষণ কষ্ট হলো।


 

নাফিজা মনে মনে ভাবলো, "আমি কি সত্যিই এত বড় বোঝা হয়ে গেছি?" চাচির কথা শুনে তার মন ভীষণ ভারী হয়ে গেল। সে জানত, চাচি তাকে খুব একটা পছন্দ করেন না, কিন্তু এতটা অপছন্দ করেন, তা কল্পনাও করেনি।

বিছানায় শুয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার মনে পড়লো সেই অচেনা মহিলার কথা। মহিলাটি একটা ফোন নম্বর দিয়ে গিয়েছিলেন। "সত্যিই কি ফোন করা উচিত?" দ্বিধায় পড়ে গেল নাফিজা।

পরদিন সকালে চাচির মুখ গম্ভীর, কথাবার্তা কম। নাফিজা বুঝতে পারলো, এখানে বেশি দিন থাকা যাবে না। নীরবে সকালের নাশতা শেষ করলো, তারপর ব্যাগ থেকে ফোন বের করলো।

নম্বরটা হাতে নিয়ে এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। "যদি ভুল হয়? যদি বিপদে পড়ে যাই?" কিন্তু চাচির কথা মনে পড়তেই সিদ্ধান্ত নিল—এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে হবে।

নাফিজা ধীরে ধীরে নম্বরটা ডায়াল করলো। রিং বাজলো কয়েকবার, তারপর অপর প্রান্ত থেকে পরিচিত এক কণ্ঠ ভেসে এলো—

— "হ্যালো?"

নাফিজা একটু ইতস্তত করে বললো, "আন্টি , আমি নাফিজা… আপনি বলেছিলেন, ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করতে পারবেন?"

ফোনের ওপাশ থেকে এক মুহূর্ত চুপচাপ থাকার পর মহিলা বললেন,

— "হ্যাঁ মা, পারবো। তুমি কি আজই দেখতে আসবে?"

নাফিজার মনে উত্তেজনা আর ভয় একসাথে কাজ করছিল। সে কি যাবে? নাকি এটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত হবে?


 

এরপর নাফিজা চাচা-চাচির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে গেল। সে আর সেখানে থাকবে না—এটা একরকম ঠিক করেই ফেলেছে।

সে সোজা সেই জায়গায় গেল, যেখানে সেই আন্টিকে দেখেছিল। গিয়ে দেখলো, আন্টি দাঁড়িয়ে আছেন, আর নাফিজাকে দেখে মৃদু হেসে বললেন,

— "আসো মা, আসো!"

নাফিজা একটু সামনে এগিয়ে যেতেই দেখতে পেল, একটা দুইতলা বাড়ি। বাড়িটা একটু পুরনো, তবে বেশ মজবুত মনে হচ্ছে।

আন্টি বললেন,
— "আমি নিচতলায় থাকি, আর উপরের ফ্ল্যাটটা তোমাকে দেবো।"

তারপর একটু থেমে আবার বললেন,
— "তোমাদের মতো প্রতি বছরই অনেক স্টুডেন্ট এখানে আসে, আমি ওদের থাকতে দেই। বেশি ভাড়া নিই না, তুমি চিন্তা করো না।"

নাফিজার মনে একটু স্বস্তি এলেও, কোথাও যেন একটা অজানা অনুভূতি খচখচ করছিল


 

ফ্ল্যাটের দরজা খুলতেই হঠাৎ একটা কালো বিড়াল দৌড়ে বেরিয়ে গেল।

নাফিজা ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো।

ওমনি আন্টি হেসে বললেন,
— "ভয় পাওয়ার কি আছে? এটা তো শুধু একটা বিড়াল!"

ফ্ল্যাটের ভেতরে ঢুকতেই নাফিজার কেমন একটা অদ্ভুত গন্ধ লাগলো।

সে মুখ কুঁচকে বলল,
— "গন্ধটা কেমন জানি লাগছে!"

আন্টি হেসে বললেন,
— "অনেকদিন ধরে ফ্ল্যাটটা বন্ধ ছিল তো, তাই এমন গন্ধ হচ্ছে। আমি সব পরিষ্কার করে দেবো, চিন্তা করো না।"

ফ্ল্যাটে একটা ছোট পাকঘর ছিল, আর সামনের ঘরটা একটু ছোট। কিন্তু নাফিজার ঘরের সাথে লাগানো আরেকটা দরজা ছিল।

সে দরজাটা খুলতে যাবে, ঠিক তখনই আন্টি তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন,
— "খবরদার! এই দরজা খুলবে না!"

নাফিজা ভয়ে পিছিয়ে এল, তারপর প্রশ্ন করলো,
— "কেন?"

আন্টি বললেন...


 

— "এই দরজাটা অনেক পুরনো, খুললে ভেঙে পড়তে পারে। তাই এটা বন্ধই রাখো, ঠিক আছে?"

নাফিজার মনে কেমন একটা অস্বস্তি লাগলো। একটা দরজা থাকবে, কিন্তু সেটা খোলা যাবে না? ব্যাপারটা কেমন জানি অদ্ভুত লাগছিল। তবুও কিছু না বলে মাথা নাড়ল সে।

তারপর আন্টি বললেন,
— "তুমি এখন একটু গুছিয়ে নাও, আমি তোমার জন্য চা করে আনছি।"

আন্টি চলে যেতেই নাফিজা পুরো ফ্ল্যাটটা ভালো করে দেখলো। ঘরটা ছোট হলেও একা থাকার জন্য ঠিকই আছে। কিন্তু সেই বন্ধ দরজাটার দিকে তাকাতেই তার গা ছমছম করে উঠলো।

ঘরের বাতাসে এক অদ্ভুত গন্ধ এখনো লেগে আছে। জানালা খুলে দিলেও সেটা যেন সহজে যেতে চাইছে না।

নাফিজা বিছানার ওপর বসে ভাবতে লাগলো, "আন্টির ব্যবহার ভালো, কিন্তু সবকিছু কেমন জানি রহস্যময় লাগছে…!"


 

ঠিক তখনই তার ফোনে মায়ের কল আসে। ফোন ধরে নাফিজা বলল,
"হ্যালো মা, কেমন আছো?"

মায়ের কণ্ঠে একটু উদ্বেগ ছিল,
"তুমি কেমন আছো, কিছু সমস্যা তো হয়নি? কী হচ্ছে ওখানে? খুব খেয়াল রেখো, জানো তো?"

নাফিজা কিছুক্ষণ চুপ ছিল, তারপর আস্তে আস্তে সব খুলে বললো।
"মা, চাচী আমার সাথে এমন করল আর কোনদিন

তাদের বাসায় আমি যাবনা "

মা তার কথাগুলো শুনে বেশ কষ্ট পেলেন, কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বললেন,
"তুমি এখন সাবধানে থেকো, মেয়ে। তুমি শক্ত থাকো। আর মনে রেখো, তুমি একা নও।"

নাফিজা মায়ের কথা শুনে একটু স্থির হয়ে গেল। মা’র শোক্ত কণ্ঠের মধ্যে যেমন উদ্বেগ ছিল, তেমনই এক ধরনের শক্তি ছিল, যা তাকে আরও সাহসী করে তুলল।

মা ঠিকই বলেছে, আমাকে শক্ত থাকতে হবে। - মনে মনে বলল নাফিজা।


 

রাতে আন্টি নাফিজাকে খাবার দিলো, মৃদু হেসে বলল, "নাও মা, খেয়ে নিও। আর কিছু লাগলে আমাকে বলো।"

সে ধন্যবাদ জানাল,আর বলল না আন্টি আর কিছু লাগবেনা,

সে খাবারের বাটি টেবিল রেখে খাবারের ঢাকনা খুলল। কিন্তু ঢাকনা সরাতেই তার পুরো শরীর হিম হয়ে গেল।

ভেতর থেকে কয়েকটা কালো মাকড়সা ছড়িয়ে পড়ছে, তাদের লম্বা পা খাবারের মধ্যে নড়াচড়া করছে!

সে আতঙ্কে এক চিৎকার দিয়ে চেয়ারের পেছনে সরে গেল। বুক ধড়ফড় করছে, নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।

ঠিক তখনই কলিং বেল বেজে উঠল।

নাফিজা দ্রুত দরজা খুলল। দরজার সামনে আন্টি দাঁড়িয়ে, হাতে ঠিক সেই একই খাবারের বাটি!

আন্টি অবাক হয়ে বলল, "কি হলো মা? তুমি চিৎকার করলে কেন?"

নাফিজা থমকে গেল। কিছুক্ষণ আগের ঘটনা তাহলে কী ছিল? চোখের সামনে তো স্পষ্ট দেখেছিল... কিন্তু এখন?

সে ধীরে ধীরে খাবারের বাটি নিয়ে আবার টেবিলে রাখল। মনে মনে নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করল, "হয়তো আমি টেনশনের কারণে ভুল দেখছি। ক্লান্তির জন্য মনের ভুল হচ্ছে।"

তবু এক অজানা শঙ্কা তাকে পেয়ে বসলো।

ভয়ে ভয়ে আবার খাবারের ঢাকনা খুলল—

ভেতরে গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত আর মুরগির মাংস।

অন্য কিছু নেই।

তাহলে একটু আগে... সে যা দেখল, সেটা

ভেতরে একটা অস্বস্তি কাজ করছিল। কিন্তু ক্লান্ত শরীরে বেশি ভেবে লাভ নেই ভেবে সে রাতে ঘুমাতে গেল।

পরদিন সকাল

ঘুম ভাঙতেই সে বুঝতে পারল, দেরি হয়ে গেছে! তাড়াতাড়ি উঠে ভার্সিটির জন্য তৈরি হতে লাগল। চুল আঁচড়াচ্ছিল, ব্যাগ গোছাচ্ছিল, ঠিক তখনই—

"কিছুর ভাঙার শব্দ!"

সে সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে বাইরে এল। চোখ ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখল—

সেই কালো বিড়ালটা!

ওটা একদৃষ্টিতে নাফিজার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু ওর চোখের দৃষ্টি কেমন জানি হিংস্র, অস্বাভাবিক!

নাফিজার শরীরের লোম খাড়া হয়ে গেল। কিছু বলার আগেই বিড়ালটা হঠাৎ নিজের থেকে জানালা দিয়ে বের হয়ে গেল!

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নাফিজা ধীরে ধীরে ঘরের ভেতরে ফিরে এল। কিন্তু ঢুকতেই ওর চোখ চলে গেল সেই বন্ধ দরজার দিকে।

ওই দরজার পেছনে কী আছে?

অজানা একটা কৌতূহল কাজ করল। ওর খুব জানতে ইচ্ছা করছিল, দরজার ওপাশে কী লুকিয়ে আছে!

কিন্তু…

আন্টির কথা মনে পড়তেই সে আর এগোল না।


 

নাফিজা ইউনিভার্সিটি থেকে আসতে আসতে রাত হয়ে গেল। তার বাসায় যাওয়ার রাস্তাটা খুব অন্ধকার। সে ভয়ে ভয়ে এগোচ্ছে, রাস্তা অনেক সুনসান ছিল, কেমন জানি শব্দ হচ্ছিল। তারপর সে বাড়িতে ঢুকলো, কিন্তু এর মধ্যে সেই অদ্ভুত আওয়াজ পেলো আন্টির ফ্ল্যাট থেকে। একটা বিকট হাসির আওয়াজ আসতে লাগলো, "হাহাহাহা, তুই শেষ তোর খেলা শেষ!"

নাফিজা ভয়ে ভয়ে গেলো। সে দেখলো, দরজা খুলে গেছে, আর সে উকি মারলো। মারতেই আন্টি তার দিকে ফিরে তাকালো আর বললো, "সিরিয়াল দেখতেছি, ভিলেনের কেচ্ছা খতম, হাহাহাহা!"

নাফিজা একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললো, ভয়ে। আন্টি বসতে বসে বললো, "কিন্তু বসলো না ।" সরাসরি তার ফ্ল্যাটে গেলো, চুপচাপ।


 

ঘরে ঢুকে সে দেখলো, তার জিনিসপত্র সব এলোমেলো। কি একটা অবস্থা! সে সব কিছু ঠিক করে রেখেছিল , তবে কেন এমন হল? সকালে বিড়ালের কথা মনে পড়লো, হয়তো সেই বিড়ালই এর কাজ করেছে। মনে মনে অনেক রাগ হলো। এরপর সে তার মাকে ফোন করলো। বললো, "মা, উফ! কি একটা যন্ত্রণা! এই সব বিড়ালের ঝালায় বাঁচিনা!" মা তাকে বললো, "ধৈর্য ধর, মা, পড়াশোনা কর ,  কষ্ট তো করতে হবেই। হবে।" সে বললো, "আচ্ছা," এরপর ফোন কেটে দিলো।

রাতের খাবার বানানো শুরু করলো। খাওয়া শেষ করে ফোন দেখছিল,  চোখে ঘুম চলে আসলো।

হঠাৎ দরজা ধাক্কানোর আওয়াজে তার ঘুম ভেঙে গেলো। ঐ দরজাটা কে জানে, বলছে, "বের কর , আমাদের বের হতে দাও! আমাদের আটকে রেখেছে, বের কর !"

কেউ দরজা খুলুন! এই আওয়াজ শুনে যেন নাফিজার শরীর জমে গেলো। তারপর তাকে দেখে, তার গায়ে টপ টপ করে কি জানি পড়ল ।

উপরের দিকে তাকালো ,  ভয়ঙ্কর এক চেহারা তার দিকে তাকিয়ে আছে তার মুখ থেকে রক্ত পড়ছে অবস্থা,

সেই অবয়ব টা তার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়লো।

আর সে চিৎকার দিলো। এরপর সে দেখলো, এটা শুধু তার স্বপ্ন। উঠে দেখে তার শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছে।

সে ভয়ে কাঁপছিল।ঘড়ির দিকে তাকাতে তাকাতে দেখলো, রাত ৩টা বাজে। ওই রহস্যময় দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো—সবই স্বাভাবিক। সে দুয়া কালাম পড়ে আবার ঘুমিয়ে গেলো।

নাফিজা ঘুম থেকে উঠে কালকের রাতের কথা ভাবতে লাগল।
আজ তার ভার্সিটি নেই। আজকে সারাদিন এই বাসায় থাকতে হবে—তার গা ভয়ে চমচম করছে।

তাই সে ভাবল, "আজ ঘরটা আরও ভালো করে গুছিয়ে নেব।"
 

সে একটি ঝাড়ু নিয়ে বেরিয়ে এল বারান্দায়। ধুলোর গন্ধে নাক চেপে ধরল। বাতাস ভারী মনে হচ্ছে, যেন অনেকদিন কেউ এখানে আসেনি। মেঝের ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে হঠাৎই

তখনই তার ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে মায়ের নাম দেখে

"মা, কেমন আছ?"

কিন্তু মায়ের গলা আজ একটু অন্যরকম লাগল। ভারী, চিন্তিত, যেন কিছু একটা বলতে গিয়ে আটকে যাচ্ছে।

"তোকে নিয়ে আজ একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। মনে হলো, কেউ তোকে ক্ষতি করতে চায়।"

নাফিজা স্তব্ধ হয়ে গেল। এই কথাটা শুনেই কালকের রাত এর কথা মনে পড়ে গেল।

সে বলতেই গিয়েছিল, কিন্তু হঠাৎ নিজেকে থামিয়ে নিল।

"তোর এই ফ্ল্যাটটা আমার ভালো লাগছে না, নাফিজা। সামনে অমাবস্যা... সাবধানে থাকিস।"

নাফিজার কেমন জানি গা ছমছম করে উঠল।

"ওই দিন ... বাসা থেকে বের হবি না, নয়তো—"

মায়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই, নাফিজার ঠিক পেছন থেকে গম্ভীর একটা আওয়াজ এল—

"নয়তো তোকে শেষ করে দেব!"

সে আতঙ্কে দ্রুত ঘুরে তাকাল।

তার আন্টি দাঁড়িয়ে আছে, মুখে অদ্ভুত এক হাসি।

"হাহাহাহা! ভয় পেয়েছিস? আমি তো মজা করলাম!"

নাফিজা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল।

আন্টি একটু এগিয়ে এসে বলল, "কাল তোর চিৎকার শুনেছি, ভয় পেয়েছিস নাকি, তাই জিজ্ঞাসা করতে এলাম।"

নাফিজার ঠোঁট শুকিয়ে এল। সে কি সত্যিই মজা করছিল, নাকি…?

তার দরজা লাগানো ভিতরে ঢুকলো কি করে?


 

"না আন্টি, স্বপ্ন ছিল," নাফিজা শান্ত গলায় বললো।

আন্টি একটু থমকালো, তারপর বললো, "ওহ আচ্ছা, আমি ভাবলাম কি না কি!"

এরপর দরজার দিকে যেতে যেতে হালকা হেসে বললো, "আচ্ছা, আমি যাই। সাবধানে থাকিস। স্বপ্ন সত্যি হতে কতক্ষণই বা লাগে?"

এই বলে আন্টি রহস্যময় এক হাসি দিয়ে চলে গেল।

নাফিজা চিন্তায় পড়ে গেল। চারপাশের পরিবেশটা যেন কেমন অদ্ভুত লাগছে। সে বুঝতে পারছে না, কী করবে আর কী করবে না।

ওই রাতেই...

নাফিজা রাতের খাবার খেয়ে বিছানায় শোবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। হঠাৎ চোখ গেল দরজার দিকে।

সেখানে… কেউ বসে আছে!

অন্ধকারে সেই অবয়বটা আস্তে আস্তে ফিসফিস করে বললো, "চলে যা... খুব খারাপ হবে..."

নাফিজা একদম জমে গেল। শরীর নড়াতে পারছে না।

সেই ছায়ামূর্তি আবার বললো, "একবার দরজা খুললে আর বাঁচতে পারবি না..."

তারপরই, ধপ!

রহস্যময় সেই বন্ধ দরজাটা নিজে থেকেই খুলে গেল!

নাফিজার চোখের সামনে সেই অবয়বটা ধরা পড়ার আগেই এক অদৃশ্য শক্তি তাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো দরজার ওপারে!

যাওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে সেই কণ্ঠস্বর প্রচণ্ড চিৎকার করে বললো—

"চলে যা!!!"

তাস্!

এক সেকেন্ডের মধ্যে দরজাটা আবার শক্ত করে বন্ধ হয়ে গেল।

নাফিজা চিৎকার করতে করতে লাফিয়ে উঠে বসলো বিছানায়।

চারপাশ একদম স্বাভাবিক। কিছুই নেই।

সে ধড়ফড় করতে করতে শ্বাস নিলো।

নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করলো— "না, এটা শুধু একটা কল্পনা … হয়তো আমি একটু বেশি ভাবছি…"


 

নাফিজা নিজেকে বোঝাল—সব ঠিক আছে, এসব তার কল্পনা। হয়তো নতুন জায়গা, অচেনা পরিবেশ—তাই এমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। চোখ বন্ধ করল সে। ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে ঘুমের কোলে ঢলে পড়ল।

কিন্তু রাত তখন গভীর। চারপাশ নিস্তব্ধ, অস্বাভাবিক রকমের চুপচাপ।

হঠাৎ নাফিজা অনুভব করল—তার শরীরের উপর যেন কেউ বসে আছে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই গলার উপর প্রচণ্ড চেপে ধরা একটা হাত! তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।

চোখ মেলে দেখে—একটি ভয়ংকর, বিকৃত মুখ তার উপরে ঝুঁকে আছে। চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে অন্ধকারে। সেই মুখটি তার গলা টিপে ধরে আছে, নিঃশব্দে।

নাফিজা প্রাণপণে ছটফট করতে লাগল। কোনওরকমে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে পড়ল। সে দৌড়ে গেল আন্টির ঘরের সামনে, দরজায় পাগলের মতো ধাক্কা দিতে লাগল।

"আন্টি! আন্টি! দরজা খোলেন!"—তার কণ্ঠ কাঁপছিল।

দরজা খুলে আন্টি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললেন,
"কি হয়েছে মা? এমন করছো কেন?"

নাফিজা কাঁপা গলায় বলল,
"আন্টি... কেউ আমাকে মেরে ফেলতে চাইছে!"

আন্টি একটু থেমে বললেন,
"তুমি বসো, আমি পানি এনে দিচ্ছি।"

আন্টি পানি নিয়ে এসে দেখে—নাফিজা উল্টোদিকে মুখ করে বসে আছে, ঠোঁট নাড়ছে, যেন কারও সঙ্গে কথা বলছে। তার চোখ যেন স্বাভাবিক নয়।

"নাফিজা?"—আন্টি কাঁধে হাত রাখতেই, মুহূর্তেই নাফিজা ঘুরে দাঁড়াল।

তার হাতে থাকা ভারী কিছু দিয়ে হঠাৎ করে আন্টির মাথায় আঘাত করল সে।

এক চিৎকার আর তারপর...

সব অন্ধকার।

ঝাপসা ঝাপসা আলো…
চোখ খুলছে ধীরে ধীরে। মাথাটা যেন ঘুরছে, শরীরটা অবশ।
হঠাৎ সামনে নজর পড়তেই আতঙ্কে চোখ ফেটে পড়ে।

নাফিজা!
সে কিছু একটা কাটাকুটি করছে—চোখে বিকৃত এক উন্মাদ হাসি।
আর তার সামনেই—উল্টো ঝোলানো অবস্থায় মুখ বাঁধা এক নারী।

সে নিজেই!
হ্যাঁ, সে নিজেই উল্টে ঝুলে আছে ছাদের সাথে বাঁধা, মুখটাও কাপড় দিয়ে আটকে দেওয়া।

চিৎকার করতে চায়, কাঁদতে চায়—কিন্তু কিছুই পারছে না। হাত-পা বাঁধা। কেবল চোখ দিয়ে পানি গড়াচ্ছে।

নাফিজা ঘুরে তাকাল। মুখে ঠান্ডা, বিভৎস হাসি।

"ওহ, আমার প্রিয় আন্টি! খুব কষ্ট হচ্ছে না তো? জানি... জানি কষ্ট হচ্ছে।"
তার গলায় যেন শিশুর মত কোমলতা, অথচ কথার মাঝে নরকের আগুন।

"আপনার জন্য আমার খুব মায়া লাগছে জানেন?
কারণ আপনি হচ্ছেন আমার সবথেকে প্রিয় ভিক্টিম!"

সে এক হাঁসি হেসে বলল,
"চিন্তা কইরেন না, আপনাকে আমি খুব সহজ মৃত্যু দেব।
ভয় পাবেন না, আমি অনেক 'ভালো' মানুষ।
মানুষকে কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলতে আমার ভীষণ ভালো লাগে।"

তার চোখে তখন উন্মাদনার আগুন।

"এর আগেও কত মানুষকে মারসি—জানো কেমন কষ্ট দিতাম তাদের?
আর সেসব ভিডিও করেও রাখি... যেন বারবার উপভোগ করতে পারি!"

এই কথা শুনে আর কোনো সন্দেহ রইল না—
নাফিজা একটা মনোবিকৃত, পাথর-হৃদয় সাইকো।

সে আবার বলে উঠল,
"আপনার মুখটা একদম আমার চাচির মতো,
ওই যে, যে আমার সাথে খালি লেগে থাকত।
তাকেও কিন্তু আমি কঠিন মৃত্যু দিয়ে গেছি...
আপনাকে দিতেই হবে, তাই না?"

তারপর একটু থেমে, চোখটা অন্ধকারের দিকে ফেরাল।

"ছোটবেলা থেকেই আমার বাবা আমার মাকে প্রতিদিন মারত।
একদিন আমি আর সহ্য করতে পারলাম না।
ওই লোকটার ওপর রাগে… বটি দিয়ে কুপিয়ে দিলাম।
হ্যাঁ, ইচ্ছেমতো কেটেছি।
সেই দিন থেকেই… মানুষ মারার ইচ্ছেটা আমার মধ্যে গেঁথে গেছে।"

"তারপর মা আমায় চাচা-চাচির কাছে পাঠাল।
তারা ভাবল, আমি 'পড়াশোনা' করব।
কিন্তু চাচির ব্যবহারে...
তার কপালেও ছিল মৃত্যু।
সেই ঘটনা আজ থেকে তিন বছর আগের…"

"তারপর থেকে আমি খুঁজি—তোমার মতো সরল, নিষ্পাপ মানুষ।
ধরি, আর খুন করি।

কত মজা ,

নাফিজা হঠাৎ আন্টির মুখ থেকে কাপড়টা খুলে নিল।
"বলো যা বলার—আর একটু পরেই তো মরতে হবে!"

আন্টি কেঁদে কেঁদে বলল,
"মা… আমাকে ছেড়ে দাও। আমার প্রাণ ভিক্ষা চাই।"

নাফিজার মুখে তখন অগ্নি-রাগ।

সে একটা ছোট ছুরি এনে আন্টির গলার কাছে ধরে বলল,
"বেশি মুখ চলাচ্ছিস তো? থাম না!"

তারপর আন্টির জিভটা ধরে—
নির্মমভাবে কাটতে শুরু করল।

আর সেই আর্তনাদ…
সেই চিৎকার…
চার দেওয়ালের বাইরে কোনো কানে পৌঁছল না।

শুধু অন্ধকার সাক্ষী রইল—

নাফিজা আন্টির মুখ থেকে ঝরতে থাকা গরম রক্তে আঙুল ডুবিয়ে তা নিজের ঠোঁটে লাগিয়ে বলে,
"এটাই আসল শান্তি।"

তার মুখে অদ্ভুত তৃপ্তির ছায়া।

ঠিক তখনই—

"টিং টং…"
ডোরবেলের শব্দ। ঠান্ডা বাতাসের মতো গা কাঁপানো।

নাফিজা থমকে যায়।

সে আন্টির রক্তাক্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে,
"তুই কাউকে বলেছিস… তাই না? কে এসেছে?"

সে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। ধীরে দরজা খোলে—

আর সামনে দাঁড়িয়ে আছে… ছোট্ট নাফিজা।

একটা সাদা ফ্রক পরে, চোখে আগুনের মত জ্বলজ্বলে দৃষ্টি।

নাফিজা থমকে যায়।

"তুই… তুই তো আমি!" — তার গলা কাঁপে।

ছোট নাফিজা মিষ্টি করে হেসে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে।
ঘরের মাঝখানে এসে ঘুরতে ঘুরতে নাচতে শুরু করে।
"তোর কৃতকর্ম দেখতে এসেছি আমি… তুই একাই তো না, শোন!"

সে দরজার দিকে আঙুল তোলে।

নাফিজা পেছনে ঘুরে তাকায়।
আর দেখেই তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।

বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়েছে—

তার বাবা,
তার চাচি,
তাদের সবাই,

আর তারা 
যাদের সে একে একে মেরেছিল।

সবার গায়ে রক্ত, চোখে ফাঁকা দৃষ্টি।
তারা হাঁটছে ধীরে ধীরে তার দিকে।

এক এক করে বলছে—

"তুই আমায় মেরেছিলি।"
"আমার চিৎকার কেউ শোনেনি।"
"আমার প্রার্থনাও তোকে বদলাতে পারেনি।"
"এখন তোর পালা, নাফিজা…"

নাফিজা কাঁদতে কাঁদতে পেছনে সরে যায়, হোঁচট খেয়ে পড়ে।

ছোট নাফিজা এসে তার মুখের খুব কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে,
"তুই তো সবাইকে মেরেছিস । এখন তোর বিচার হবে।
এইবার… তোকে মুছে ফেলা হবে।"

তারপর সব একসাথে এগিয়ে আসে।
ঘরটা রক্তে ভেসে যায়।
চিৎকার, কান্না আর অন্ধকার।

নাফিজা দেখলো সবাই তাকে একত্রে ধরে রেখেছে।
তার বাবা ছুরি হাতে তার দিকে এগিয়ে আসছে।
সে ভয়ংকরভাবে চিৎকার করল।
তার বাবা তার গলা কেটে ফেলল।
কি নির্মম মৃত্যু! সে মরলো।
সবাই হাসছে এবং তালি বাজাচ্ছে।……


 

সকালে কাজের মেয়ে দেখলো—আন্টির বাড়ির দরজা খোলা, কিন্তু ভেতরে কেউ নেই।
সে উপরের তলায় গিয়ে দেখে—নাফিজা মাটিতে পড়ে আছে।
তার হাতে ছুরি, আর মনে হচ্ছে সে নিজেই আত্মহত্যা করেছে।
এবং তার ওপর, তার মালকিন (আন্টি) ঝুলে আছে।
এই দৃশ্য দেখে সে চিৎকার করে ওঠে।

এরপর সে পুলিশকে খবর দেয়।
পুলিশ এসে তদন্ত শুরু করে।
পুলিশ জানতে চায়, "আপনার নাম কী?"
সে (আন্টি) লিখে বলল, "আমার নাম মৃলানি।"
পুলিশ তখন জিজ্ঞেস করল, "গতকাল কি হয়েছিল?"
মৃলানি সব কিছু লিখে বলল।

এরপর, নাফিজার ফোন থেকে সব ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়।
পুলিশ সব কিছু থেকে জানতে পারে।
নাফিজার মা আর বেঁচে নেই—তার মানসিক অবস্থা ছিল মারাত্মক, তাকে সাইকো বলা যেতে পারে।
মানুষকে হত্যা করা ছিল তার কাজ।


 

নাফিজার মৃত্যুর পর, তার সব অন্ধকার কৃতকর্মের ফল স্পষ্ট হয়ে উঠল। তার অসুস্থ মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার কারণে সে বহু নিরপরাধ মানুষের জীবনে তছনছ করেছে, আর শেষ পর্যন্ত নিজের হাতে জীবন শেষ করল। পুলিশ যখন সব ফুটেজ বিশ্লেষণ করল, তারা বুঝতে পারল যে, নাফিজা আসলে একজন ভয়ঙ্কর সাইকো ছিল, যার জন্য মানুষ হত্যা ছিল এক ধরনের নেশা।

তার মৃত্যুর পর, শহর জুড়ে এক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল। সবাই জানল, নাফিজা ছিল সেই মানুষটি, যার জন্য অন্যদের জীবন ছিল তুচ্ছ। তার জন্য  কতো পরিবারের ধ্বংস হয়ে গেল ।

এভাবেই, নাফিজার গল্প শেষ হয়ে গেল, যেখানে তার নিজের কৃতকর্মই তাকে শেষ পর্যন্ত খেয়ে ফেলল। তার মধ্যে কোন পিছুটান ছিল না, আর তার মৃত্যুর পর, একটাই প্রশ্ন রয়ে গেল—কীভাবে একজন মানুষ এমন অন্ধকারে ডুবে যেতে পারে?

Comments