একসময় এক গ্রামে ছিল এক যুবক, নাম ছিল আহমাদ। অত্যন্ত গরিব, কিন্তু ঈমানদার ও ন্যায়পরায়ণ। দিনে কাজ করত ক্ষেতখামারে, রাতে ইবাদতে মশগুল থাকত। সে প্রায়ই ভাবত—আল্লাহর উপর ভরসা করলে মানুষ কখনো নিরাশ হয় না।
একদিন কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে সে এক বৃদ্ধ মানুষকে দেখতে পেল, বৃদ্ধ অসুস্থ ও ক্লান্ত। আহমাদ তাকে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কোথায় যাবেন চাচা?”
বৃদ্ধ বলল, “আমার আর যাওয়ার জায়গা নেই, তবে আমি এক কাজ করতে এসেছি এই গ্রামে।”
“কী কাজ?”
“আমি এমন একজন মানুষ খুঁজছি যে দুনিয়ার সব কিছু হারালেও আল্লাহর উপর ভরসা রাখে। আমি তার হাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ কিছু তুলে দেব।”
আহমাদ হেসে বলল, “আমি তেমন একজন হতে পারি।”
বৃদ্ধ গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “তবে তোমার পরীক্ষা হবে, কঠিন পরীক্ষা।”
এরপর কয়েকদিন ধরে আহমাদের জীবনে শুরু হলো দুর্ভোগ। ক্ষেতের ফসল পুড়ে গেল, বাড়ি ভেঙে পড়ল, এমনকি তার একমাত্র গরুটিও মারা গেল। লোকজন বলল, “আল্লাহ যদি তোমার প্রভু হয়, তবে কেন এসব হলো?”
আহমাদ কেবল বলত, “আমার রব যাই করেন, তা আমার মঙ্গলের জন্য।”
এক রাতে বৃদ্ধ আবার এলো। বলল, “এবার শেষ পরীক্ষা—তুমি কি এই গ্রাম ছেড়ে অজানা পথে যেতে প্রস্তুত?”
আহমাদ এক মুহূর্ত ভাবল না। বলল, “যেখানে আল্লাহ চান, আমি যাব।”
বৃদ্ধ তাকে চোখ বেঁধে এক গুহার দিকে নিয়ে গেল।
গুহার ভিতর একদম অন্ধকার। হঠাৎ আলো জ্বলে উঠল, আহমাদ দেখল—সামনে এক বিশাল প্রাসাদ! সোনায় মোড়ানো দরজা, ঝলমলে আলো, পবিত্র কুরআনের তিলাওয়াতের ধ্বনি চারদিকে।
বৃদ্ধ হেসে বলল, “আমি কোনো সাধারণ মানুষ নই। আমি ছিলাম তোমার রবের পক্ষ থেকে প্রেরিত এক ফেরেশতা। তোমার ঈমানের পরীক্ষা ছিল এটা। এখন থেকে এই প্রাসাদ হবে তোমার জন্য, দুনিয়াতেই জান্নাতের একটি ছায়া।”
আহমাদ সেজদায় পড়ে গেল। বলল, “হে আল্লাহ! আপনি সত্যিই আপনার বান্দাকে নিরাশ করেন না।”
এরপর সে সেখানে থাকতে লাগল, সারা জীবন ইবাদতে কাটিয়ে দিল। মাঝে মাঝে গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করত, আর বলত, “ঈমান ও ধৈর্য—এই দুই-ই সবচেয়ে বড় শক্তি।”
---
এই গল্প আমাদের শেখায়, জীবনে যত কঠিন সময়ই আসুক না কেন, আল্লাহর উপর ভরসা রাখলে শেষ পরিণাম হয়