Posts

গল্প

ছেঁড়া প্যান্ট

April 9, 2025

Ifat Istiak

Original Author রাফিউল হক (রাফি)

146
View

                            ছেঁড়া প্যান্ট 

 জমির আলি একটি কনজিউমার কোম্পানির ডিলারের অধীনে কাজ করে । সে প্রতিদিন সেই ডিলারের কাছ থেকে কমিশনে মাল নিয়ে বিক্রয় করে । তা থেকে সে যে টাকা পায় তা দিয়ে সংসার চালায় । জমির আলির দুই ছেলে এক মেয়ে । বড় ছেলে কলেজে এবং দ্বিতীয় ছেলে ৯ম শ্রেণিতে পড়ে আর ছোট মেয়ে ৫ম শ্রেণিতে পড়ে । জমির আলির বউ রোকেয়া খুব পরিচ্ছন্ন মহিলা । সে কাপড়-চোপড় ঘরবাড়ি খুব পরিচ্ছন্ন রাখে ।
একদিন রোকেয়া জমির আলিকে বলল, “এই, তোমার প্যান্ট হাঁটুর দিক দিয়ে ছিঁড়ে গেছে । জমির আলি বলল, “আজ একটু সেলাই করে দাও, কাল আসার সময় প্যান্ট কিনে নিয়ে আসব ।” পরদিন কাজ শেষে জমির আলি ভাবছে, আজ এক হাজার টাকা পেলাম । একটা প্যান্ট কিনে নিয়ে যাই । প্যান্টের দোকানে গিয়ে দোকানীকে সে তার পছন্দ হওয়া একটি প্যান্টের দাম জিজ্ঞেস করল । দোকানি বলল, “প্যান্টটির মূল্য পাঁচশত টাকা । সে ভাবল প্যান্টটি কিনলেও আর পাচশত টাকা বাকি থাকবে । সেই সময়ে রোকেয়া ফোন করে জানাল, “বাড়িতে চাল-ডাল, তরিতরকারি কিছুই নেই । আসার সময় এগুলো নিয়ে এসো । তখন জমির দোকানিকে বলল, “আগামীকাল নেব” পরদিন মার্কেটে গিয়ে দেখল তার পছন্দের প্যান্টটি আর নেই, বিক্রি হয়ে গেছে । তাই সে অন্য একটি প্যান্ট পছন্দ করল এবং অনেক দামাদামি করার পর সেটার মূল্য নির্ধারিত হলো চারশত টাকা । হঠাৎ তার মনে পড়ে গেল আগামীকাল তার মেয়ের পরীক্ষার ফি পাঁচশত টাকা দিতে হবে । কিন্তু তার কাছে আছে সাতশত টাকা । তাছাড়াও রোকেয়া বলে দিয়েছিল সাবান ও তেল নিয়ে যেতে । তাই সে আজও প্যান্ট কিনল না ।
পরদিন সে আবারও প্যান্টটি কিনতে দোকানে গেল । কিন্তু দোকানি প্যান্ট দেখাতে রাজি হলো না । দোকানিকে অনেক জোরাজুরি করার পর দোকানি প্যান্ট দেখাতে রাজি হলো । ঠিক সেই সময়ে চাল ব্যবসায়ী মঞ্জু মিয়া ফোন করে বলল, “ভাই তিন দিনের কথা বলে পনেরো দিন হয়ে গেল চালের টাকা দিচ্ছেন না” তখন জমির আলি বলল, “আমি আসছি, ভাই ।” তাই সে প্যান্টটি রেখে চলে এল ।
পরদিন সে রোকেয়ার কাছে প্যান্ট কিনার জন্য তিনশত টাকা চাইল । রোকেয়া বলল, “যদি আজ প্যান্ট কিনে নিয়ে আস তাহলে আমি টাকা দিব ।” জমির বলল, “আচ্ছা আজ অবশ্যই নিয়ে আসব ।” তখন রোকেয়া বলল, “তবে জেনে রেখো, আজ আসার সাথে সাথে কিন্তু ছেড়া প্যান্টটা ফেলে দেব।” জমির আলি বলল, “অবশ্যই ফেলে দেবে।” দুপুর গড়াতেই রোকেয়ার ফোন বেজে উঠল।” কিন্তু সে একটি অজ্ঞাত কণ্ঠ । সেই লোকটি বললেন, “এই ফোন নম্বরটি যার তিনি আপনার কি হয়?” রোকেয়া কম্পিত কণ্ঠে বলল, “আমার স্বামী। কেন কি হয়েছে?” তখন সেই লোকটি বললেন, “এই ফোন নম্বরটি যার তিনি কিছুক্ষণ আগে রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছেন ।” জমির আলির লাশ বাড়িতে আনা হলো । তার ছেড়া প্যান্ট খুলে কাফনের সাদা কাপড় পড়ানো হলো । রোকেয়া সেই ছেড়া প্যান্ট বুকে নিয়ে বুক ফাটা আর্তনাদে বলতে লাগল, “হায়রে ছেড়া প্যান্ট, তোকে বদলাতে না পেরে আজ চিরদিনের জন্য ফেলে দিলাম।”
 

Comments