গাজা গণহত্যা

ফিলিস্তিনের গাজায় সংগঠিত গণহত্যা: একটি মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণঃ
গাজা ভূখণ্ড, একটি অবরুদ্ধ ও যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল, দশকের পর দশক ধরে সহিংসতা, রক্তপাত ও মানবিক সংকটের সাক্ষী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এখানে ইসরাইলি সামরিক অভিযানের নামে যা ঘটেছে, তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো "গণহত্যা" (Genocide) হিসেবে চিহ্নিত করতে শুরু করেছে। জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো সংস্থাগুলোর রিপোর্টে গাজার বেসামরিক জনগণের ওপর ইচ্ছাকৃত হামলা, অবকাঠামো ধ্বংস, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটঃ
১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফিলিস্তিনি জনগণ ভূমি হারানো, শরণার্থী জীবন, এবং দখলদারিত্বের মুখোমুখি হয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে গাজা হামাসের নিয়ন্ত্রণে থাকায় ইসরাইল ও মিশর অঞ্চলটিকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে, যার ফলে ২ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ জ্বালানি, খাদ্য, ওষুধ, এবং পানির অভাবে জীবনযাপন করছে।
সাম্প্রতিক গণহত্যার বৈশিষ্ট্যঃ
১. বেসামরিক হত্যাকাণ্ড: ২০২৩-২০২৪ সালের ইসরাইলি সামরিক অভিযানে ৩০,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ৭০% নারী ও শিশু। জাতিসংঘের মতে, এটিই ২১শ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা।
২. স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও স্কুলে হামলা: ইসরাইলি বাহিনী হাসপাতাল, ইউনিভার্সিটি, এবং UNRWA-র স্কুলগুলোকে লক্ষ্য করেছে, যা যুদ্ধাপরাধের শামিল।
৩. মানবিক অবরোধ: খাদ্য, পানি, ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যা ধীরগতির গণহত্যা (Slow-motion Genocide) হিসেবে বিবেচিত।
৪. বাস্তুচ্যুতি: ১৮ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়েছে, যারা ইতিমধ্যেই ৭৫% শরণার্থী।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকাঃ
যদিও ICC (আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত) ইসরাইলি নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে, পশ্চিমা দেশগুলোর (বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) সমর্থনের কারণে ইসরাইল কোনো বিচার বা শাস্তির মুখোমুখি হয়নি। অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরাইলকে "গণহত্যার দায়ে" আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করেছে।
মানবিক আবেদনঃ
গাজার শিশুরা প্রতিদিন মৃত্যু, ক্ষুধা, ও আতঙ্কের মধ্যে বড় হচ্ছে। এই সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়—এটি নৈতিক। বিশ্ববাসীকে নীরবতা ভেঙে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে হবে, যাতে ইতিহাস তাদেরকে "নির্বাক দর্শক" হিসেবে স্মরণ না করে।
শেষ কথা: গাজার গণহত্যা শুধু ফিলিস্তিনিদের ট্র্যাজেডি নয়, এটি সমগ্র মানবতার লজ্জা। ন্যায়বিচার ও শান্তির জন্য এই নৃশংসতা বন্ধ করতে হবে।
লেখক: সাইদুর রহমান
তারিখ:৯/৪/২০২৫